রাশিয়ায় দায়িত্ব পালনকালে প্রশাসনিক শৃঙ্খলাভঙ্গ ও সহকর্মীদের সঙ্গে অসংগত আচরণের অভিযোগে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’ হওয়া বাংলাদেশের সাবেক ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত (চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স–সিডিএ) মো. ফয়সাল আহমেদকে যুক্তরাজ্যে আটক করেছে দেশটির পুলিশ। বার্মিংহামে স্থানীয় সময় সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাকে আটক করা হয় বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
চলতি বছরের মে মাসে মস্কোয় বাংলাদেশ দূতাবাসে অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক সমস্যা সৃষ্টি এবং দায়িত্বশীল আচরণে ব্যর্থতার অভিযোগে ফয়সাল আহমেদকে স্ট্যান্ড রিলিজ দিয়ে দ্রুত ঢাকায় ফিরে আসার নির্দেশ দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে ওই নির্দেশের পরও তিনি দেশে ফেরেননি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের ধারণা, রাশিয়া ছাড়ার পর তিনি যুক্তরাজ্যে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন।
যুক্তরাজ্যে ফয়সাল আহমেদকে আটকের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব ও পশ্চিম) ড. মো. নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, ফয়সাল আহমেদকে স্ট্যান্ড রিলিজ দেওয়ার পর দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি তা অনুসরণ করেননি—এ তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে নিশ্চিত।
এর আগে গত ২২ মে ফয়সাল আহমেদের একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে দেশ-বিদেশে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। ওই পোস্টে তিনি পররাষ্ট্র সচিব নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে সমালোচনামূলক মন্তব্য করেন। তিনি দাবি করেন, অতিরিক্ত সচিব আসাদ আলম সিয়ামকে অন্য জ্যেষ্ঠ সচিবদের উপেক্ষা করে দ্রুত পররাষ্ট্র সচিব করা হচ্ছে এবং এতে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ তোলেন। তার এই মন্তব্য কূটনৈতিক অঙ্গনে অস্বস্তি ও বিতর্কের জন্ম দেয়।
ওই ফেসবুক পোস্টের পরপরই তাকে মস্কো থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে ঢাকায় ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগও সামনে আসে, যা তার আচরণ ও পেশাগত শৃঙ্খলা নিয়ে আরও প্রশ্ন তৈরি করে।
সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যে ফয়সাল আহমেদের বিরুদ্ধে পারিবারিক নির্যাতন, কমিউনিটিকে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং অস্থির আচরণের অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে আটক করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে গত সপ্তাহেও তাকে একবার আটক করা হলেও পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
ঘটনাটি নিয়ে কূটনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। স্ট্যান্ড রিলিজপ্রাপ্ত একজন সাবেক কূটনীতিকের বিদেশে অবস্থান, দেশে না ফেরা এবং পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশের কূটনৈতিক শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি নিয়েও প্রশ্ন তুলছে।
সূত্রঃ জাগো নিউজ
এম.কে

