স্পেনের মুরসিয়া প্রদেশের জুমিলা শহরে প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে মুসলিম ধর্মীয় উৎসব উদযাপনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এর ফলে মুসলিম সম্প্রদায় আর সিভিল সেন্টার, ফুটবল মাঠ বা জিমনেসিয়ামে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা পালন করতে পারবে না। রক্ষণশীল পার্টিদো পপুলার (পিপি) দলের প্রস্তাব অল্প ভোটের ব্যবধানে পাস হলেও এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে।
স্প্যানিশ ফেডারেশন অব ইসলামিক অর্গানাইজেশনের সভাপতি মুনির বেনজেল্লৌন আন্দালুসি আজহারি এই সিদ্ধান্তকে ইসলামবিদ্বেষী ও বৈষম্যমূলক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, অন্যান্য ধর্মকে নয়, কেবল মুসলিমদেরকেই লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। ৩০ বছরের মধ্যে প্রথমবার তিনি স্পেনে নিজেকে নিরাপত্তাহীন মনে করছেন বলেও মন্তব্য করেন।
নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের আয়োজন ছাড়া মিউনিসিপ্যাল ক্রীড়া সুবিধাগুলোতে পরিচয়বিরোধী ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা সামাজিক কার্যক্রম করা যাবে না। দক্ষিণ-পূর্ব মুরসিয়ার সোশ্যালিস্ট নেতা ফ্রান্সিসকো লুকাস এই সিদ্ধান্তকে সংবিধানবিরোধী বলে দাবি করেছেন এবং সামাজিক সংহতি বিপন্ন হওয়ার সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রয়োজনে এ বিষয়ে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হবে।
ভোটাভুটিতে একজন ভক্স কাউন্সিলরের বিরত থাকা এবং মেয়রের নির্ণায়ক ভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়। পরে স্থানীয় ভক্স দল সামাজিক মাধ্যমে লিখেছে, “ভক্সের উদ্যোগে প্রথমবার স্পেনের জনসমক্ষে ইসলামিক উৎসব নিষিদ্ধ হলো। স্পেন ছিল এবং থাকবে খ্রিস্টানদের ভূমি।” সাবেক সোশ্যালিস্ট মেয়র হুয়ানা গুয়ার্দিওলা প্রশ্ন তুলেছেন, “পরিচয় বলতে তারা কী বোঝাচ্ছে? আর এখানে শত শত বছরের মুসলিম ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার কোথায় যাবে?”
প্রায় ২৭ হাজার জনসংখ্যার জুমিলার ৭.৫ শতাংশই মুসলিম দেশ থেকে আগত। অষ্টম শতকে বারবার ও আরবরা জুমিলা দখল করে এবং ১৩শ শতকের মধ্যভাগে কাস্তিলের রাজা আলফোনসো দশমের নেতৃত্বাধীন খ্রিস্টান সেনারা তা পুনর্দখল করে।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অভিবাসনের কারণে স্পেনের জনসংখ্যা প্রায় ৫ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে মরক্কো ও আলজেরিয়া—দুটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ—থেকে সর্বাধিক মানুষ এসেছে। এছাড়া কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, কিউবা, হন্ডুরাস ও পেরু থেকেও বিপুল সংখ্যক অভিবাসী এসেছে।
মুরসিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অভিবাসন নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে। গত মাসে জুমিলা থেকে প্রায় এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত তোরে পাচেকোতে এক বৃদ্ধকে অভিবাসীরা আক্রমণ করেছে—এমন খবর ছড়ানোর পর দাঙ্গা বাধে। সশস্ত্র গোষ্ঠী রাস্তায় নেমে “এখনই বিতাড়ন কর” স্লোগান দেয় এবং পুলিশ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে।
সূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ
এম.কে
০৮ আগস্ট ২০২৫