সব খরচের হিসাব না পাওয়া গেলেও আগামী বছরের হজের খরচ চলতি বছরের চেয়ে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা কমিয়ে সোয়া ৫ লাখ টাকার মধ্যে রাখতে চায় সরকার। চলতি (অক্টোবর) মাসের শেষ সপ্তাহে প্যাকেজ ঘোষণার জোর চেষ্টা চলছে। তবে একান্ত সম্ভব না হলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্যাকেজ ঘোষণা অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জানা যায়, সৌদি আরব প্রান্তের খরচের হিসাব না পাওয়া ও বিমান ভাড়া চূড়ান্ত না হওয়ায় আটকে আছে হজ প্যাকেজ ঘোষণা। চলতি বছর হজের খরচ প্রায় ৬ লাখ টাকার কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। হজ প্যাকেজের মূল্য চলতি বছরের চেয়ে কমানোর চেষ্টা করা হবে বলে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সে লক্ষ্যেই আগামী বছরের হজের খরচ কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা কমিয়ে সোয়া ৫ লাখ টাকার মধ্যে রাখতে চাইছে সরকার। আর চলতি মাসের শেষদিকে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে।
কর্মকর্তারা বলছেন, খরচ কমানোর চেষ্টা চলছে। সৌদি প্রান্তের খরচ কমানোর জন্য উপদেষ্টা অনুরোধ জানিয়েছেন। সৌদি আরবের খরচ মোটামুটি নির্ধারিত। আমাদের প্রান্তের বড় খরচ বিমান ভাড়া। এই ভাড়া নির্ধারণের কাজ চলছে। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এটি দেখা হচ্ছে। তবে কত কমানো যাবে সেটা এখনো বলা যাচ্ছে না।
আগামী বছর হজে যেতে ১ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয়েছে। তিন লাখ টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন করতে হচ্ছে। হজ প্যাকেজ মূল্যের বাকি টাকা প্যাকেজে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। যদিও এরমধ্যে মিনা ও আরাফাহর ময়দানে কাক্ষিত জোনে তাবু বরাদ্দ পেতে আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে হজের নিবন্ধন করার অনুরোধ জানিয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ সময়ের মধ্যে নিবন্ধন না করলে হজযাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। যদিও ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত হজের নিবন্ধন চলবে বলে আগেই জানিয়েছে সরকার।
হজ প্যাকেজ ঘোষণা না হওয়ায় নিবন্ধনে সাড়া নেই হজযাত্রীদের। তাই এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের বিপরীতে দেড় মাসে মাত্র এক হাজার ৮৫২ জন (বুধবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত) হজযাত্রী প্রাথমিক নিবন্ধন করেন।
তবে হজ এজেন্সি মালিকরা জানিয়েছেন, প্যাকেজ ঘোষণা না করে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তিতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। কত খরচ হবে, এটা না জেনে কেউ নিবন্ধন করবেন না এটাই স্বাভাবিক। আর ২৩ অক্টোবরের মধ্যে নিবন্ধন না করলে ভোগান্তিতে পড়বে, এটাও সঠিক নয় বলে মনে করেন তারা। এবার হজের খরচ কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা কমাতে না পারলে কোটার বড় একটি অংশ এবারও খালি থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন হজ এজেন্সি মালিকরা।
আগামীবছরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারবেন। আগামীবছরের ১৩ জানুয়ারি সৌদি সরকারের সঙ্গে হবে হজ চুক্তি।
চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা খরচ ধরা হয়েছিল। বিশেষ হজ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হয় ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে সাধারণ প্যাকেজে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ হয় ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা। বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হয়েছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা। খরচ অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছর কোটার চেয়ে ৪১ হাজার ৯৪১ জন কম হজ পালন করেছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, হজের সৌদি প্রান্তের খরচ মোটামুটি গতবছরের মতোই থাকবে বলে মনে করছেন তারা। বিমান ভাড়া কতটা কমে এটা দেখার বিষয়, তবে তারা কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন। তবে বিমান ভাড়া কিছুটা কমলে, অন্যান্য টুকটাক খরচ কমিয়ে সোয়া পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে সাধারণ প্যাকেজ করার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। খরচ গতবছর থেকে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা যাতে কমানো যায়, সেই চেষ্টা তারা করছেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্রে জানা গেছে, হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া নির্ধারণের কাজটি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। গতবছর প্যাকেজে বিমান ভাড়া ছিল এক লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা। এবার তা ২০ হাজার টাকার মতো কমিয়ে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দিচ্ছে বিমান।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমাদের টার্গেট হলো এ মাসের শেষদিকে প্যাকেজ ঘোষণা করা। খরচ কমানোর জন্য চেষ্টা আছে। সৌদি পর্বের ব্যয়টা এখনো আমরা পাইনি। বিমান ভাড়াটাও পাইনি। কতটুকু খরচ কমানো সম্ভব, সেটি এখনই নিশ্চিত হতে পারছি না। কোনোভাবে এই মাসে না পারলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অবশ্যই প্যাকেজ ঘোষণা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে সৌদি প্রান্তের খরচ তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়ার কথা। আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের খরচ কমানোর অনুরোধ জানিয়েছি। একইসঙ্গে বিমান ভাড়াটা আমরা ২০ অক্টোবরের মধ্যে চেয়েছি। এ দুটি খরচ পেলেই প্যাকেজ ঘোষণা করব।’
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিশেষ প্যাকেজ এবার করা হবে না। স্বল্পসংখ্যক হজযাত্রীর জন্য একটা অ্যারেঞ্জমেন্ট আমরা রাখতে চাচ্ছি না এবার। একটি সাধারণ প্যাকেজ হবে। আর দূরে রেখে যদি আরও কম টাকায় আরেকটি প্যাকেজ করা যায় সে বিষয় চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে।
সদ্য বাতিল হওয়া হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি ফারুক আহমদ সরদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আশা করছি এবার হজের খরচ কমবে। বিমানের সঙ্গে আমাদের সবার একটা মিটিং ছিল। আন্তঃমন্ত্রণালয় মিটিং ছিল সেটি, সেখানে বিমান মৌখিকভাবে বলেছে যে বিমান ভাড়া তারা কমাবে। তবে কী পরিমাণ কমবে, সেটি না বলার আগে আমরা বুঝতে পারছি না।
সাবেক হাব সভাপতি বলেন, ‘এবার হজযাত্রীর কোটা পূরণ হবে কি না বা হজযাত্রী কেমন হবে সেটি পুরোটা নির্ভর করছে প্যাকেজের উপর। প্যাকেজ ঘোষণার পরই আসলে বোঝা যাবে মানুষ কতটা আগ্রহী। প্যাকেজ ঘোষণার আগে মানুষ রেজিস্ট্রেশন করবে না, কারণ সে তো বুঝতে পারছে না যে খরচ তার সামর্থ্যরে মধ্যে আছে কি না। কারণ সে তো জানেই না হজে কত টাকা খরচ হবে।’
হাবের সাবেক কমিটির একজন নেতা বলেন, সরকার বলছে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে নিবন্ধন না করলে মিনার তাবু দূরে নিতে হবে, ভোগান্তি হবে। তাবু আরও দু-তিন মাস পরে হলেও সমস্যা নেই। কোনো দেশই এভাবে তাড়াহুড়ো করে তাবু নেয় না। গতবছরও সরকার এমন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল, সব আগে আগে করার জন্য বলেছিল। কিন্তু আমরা দেখেছি, আমাদেরও অনেক পরে ভারত, পাকিস্তান তাদের কাজ শেষ করেছে। তাদের হজযাত্রী তো আমাদের থেকে অনেক বেশি।’
এম.কে
১৯ অক্টোবর ২০২৪