14.6 C
London
March 29, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

হঠাৎ হিথ্রো বন্ধে ইউরোপের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর নিয়ে প্রশ্ন

যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দর আকস্মিক বন্ধ ঘোষণা নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ফলে হিথ্রোতে বিমান চলাচলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। যার কারণে গত কয়েকদিনে ভোগান্তিতে পড়ে লক্ষাধিক যাত্রীরা।

ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর, আমেরিকার সাথে ইউরোপের প্রধান সংযোগস্থল। যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য রাচেল রিভসের চ্যালেঞ্জ ও হিথ্রোর অচলাবস্থা একটি সাবস্টেশনের আগুনকে অনেক বড় গুরুত্ব এনে দিয়েছে।

অনেকেই দ্রুত প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় অবকাঠামোর নাজুক অবস্থান নিয়ে। ব্যাক-আপ সিস্টেম কোথায় ছিল – কিংবা ব্যাক-আপ ব্যর্থ হলে আরও বিকল্প নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলো কেন কার্যকর হয়নি তা নিয়ে চলছে নানামুখী জল্পনাকল্পনা।

হিথ্রো বিমানবন্দরের আরও বেশি প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল, বিশেষ করে এই বিমানবন্দরটি কতোটা গুরুত্বপূর্ণ – শুধুমাত্র শুক্রবার ২,৫০,০০০ আন্তর্জাতিক যাত্রীর কথা ভাবলেই সেটি বোঝা যায়।

জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড, যা পশ্চিম লন্ডনের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। একটি ট্রান্সফরমার হঠাৎ দাউ দাউ করে কেন জ্বলতে শুরু করল সেটা নিয়েও দেখা দিয়েছে জিজ্ঞাসা।

মেট পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে তারা নাশকতার কোনো ইঙ্গিত পায় নাই। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই মতামত জানিয়েছেন এর পেছনে রয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিনের হাত। তাছাড়া এই পরিস্থিতিতে মস্কোও খুশি হয়েছে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডও চাইবে দোষ অন্য কারও ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে।

যদিও সন্ত্রাসবিরোধী গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছেন যে ঘটনাটি ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হয়েছে কিনা, অন্যদিকে অনেকেই জানতে চাইছেন হিথ্রোর জরুরি পরিকল্পনা কী ছিল এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা কী করতে পারত। নতুন রানওয়ের দাবি তোলা একটি বিমানবন্দরের জন্য, বিদ্যমান দুটি রানওয়েতেই বিমান উড়তে না পারাটা খুব ভালো পরিস্থিতি তুলে ধরে না।

হিথ্রোর এই বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারলাইনস চরম বিশৃঙ্খলায় পড়েছে এবং অসংখ্য মানুষ কঠিন, ব্যয়বহুল এবং বিরক্তিকর ভোগান্তির সম্মুখীন হয়েছেন। কিছু যাত্রীর ক্ষেত্রে এই ভোগান্তি আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে – হিথ্রো থেকে ২৩০টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল করে, তবে সব রুটে প্রতিদিন ফ্লাইট থাকে না। এটি এমন একটি হাব যেখানে দীর্ঘ ও স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের ট্রানজিট থাকে, এবং অনেক বিমানের কার্গোও এই পথে পরিবাহিত হয়।

বিশ্লেষকরা ইতোমধ্যে হিসাব করে দেখিয়েছেন যে ভ্রমণ বিমা কোম্পানিগুলো কয়েক কোটি পাউন্ড ক্ষতির সম্মুখীন হবে। যদিও এয়ারলাইনসগুলো আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হবে না, তবুও তাদের যাত্রীদের পুনর্বিন্যাস করতে বা থাকার ব্যবস্থা করতে হবে, যা আরও বড় আর্থিক ক্ষতি বয়ে আনবে।

এই ঘটনা আরও ভয়াবহ হতে পারত: যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে সর্বোচ্চ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা করত, তাহলে তারা হয়তো সকালের ব্যস্ত সময় বেছে নিত, যখন হিথ্রোর চারটি টার্মিনাল যাত্রীতে পূর্ণ থাকে এবং রানওয়ে ও গেটগুলো বিমান চলাচলের জন্য প্রস্তুত থাকে।

তবে হিথ্রো তড়িৎ ১২০টি দীর্ঘ দূরত্বের ফ্লাইট – এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকার পশ্চিম উপকূল থেকে আসা বিমানগুলো – আগেভাগেই ফেরত পাঠাতে বা অন্যত্র ঘুরিয়ে দিতে পেরেছিল, ফলে সকালে লন্ডনের আকাশে বিমান জটলার সৃষ্টি হয়নি।

তবুও, সাবেক GCHQ প্রধান স্যার ডেভিড ওম্যান্ড বলেছেন, “একদিনের জন্য হিথ্রো বন্ধ থাকা একটি জাতীয় লজ্জার বিষয়। এটি ঘটার কথা ছিল না।”

ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ও তার মূল কোম্পানি IAG-এর সাবেক প্রধান উইলি ওয়ালশ, যিনি দীর্ঘদিন ধরে হিথ্রোর সমালোচক ছিলেন এবং বর্তমানে আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনস সংগঠন IATA-এর প্রধান, মন্তব্য করেছেন, “এটি আরও একটি উদাহরণ যেখানে হিথ্রো যাত্রীদের বিপদে ফেলেছে। এটি পরিষ্কারভাবে বিমানবন্দরের পরিকল্পনার ব্যর্থতা।”

বিমান চলাচলে অপ্রত্যাশিত সমস্যা নতুন কিছু নয়; ২০১৭ সালে, হিথ্রোতে হাজার হাজার ক্ষুব্ধ ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ যাত্রী আটকে পড়েছিলেন, কারণ ভুলভাবে কম্পিউটারের প্লাগ খুলে ফেলার ফলে বিশাল কারিগরি বিপর্যয় ঘটেছিল।

হিথ্রোর অবকাঠামোর স্থিতিস্থাপকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক – এটি শুধু পুরোনো সরঞ্জামের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপার নয়, বরং সম্ভাব্য হামলা প্রতিরোধের প্রস্তুতি এবং জলবায়ু সংকটের কারণে ক্রমবর্ধমান চরম আবহাওয়া পরিস্থিতির বিষয়ও জড়িত।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাজ্যের বিদ্যুৎ গ্রিডে কিছুটা অতিরিক্ত ক্ষমতা সংরক্ষিত থাকে। তবে হিথ্রোর মতো বিশাল স্থাপনার জন্য একটি নিশ্চিত ব্যাক-আপ ব্যবস্থা রাখা ব্যয়সাপেক্ষ হতে পারে, যা হয়তো এই অচলাবস্থার ক্ষতির চেয়েও বেশি ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে।

তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, শুক্রবার দুপুরের আগেই হিথ্রোর বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু করা সম্ভব হয়েছিল। তবে এটি পুরোপুরি স্থিতিশীল ও নিরাপদ কিনা তা যাচাই করতে সময় লেগেছে, ফলে অধিকাংশ ফ্লাইট তখনও স্থগিত ছিল।

হিথ্রো সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পরও বিশৃঙ্খলা চলবে বলে জানা গিয়েছে। বহু বিমান, ক্রু ও যাত্রীরা ঠিক সময়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন না, যার ফলে আর্থিক ও ব্যক্তিগত ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী।

এর আগে, ২০১০ সালে তুষারপাতের কারণে হিথ্রো একবার বন্ধ হয়ে গেলে শীতকালীন প্রস্তুতি নিয়ে সংসদীয় তদন্ত হয়েছিল বলে তথ্যমতে জানা যায়।

তবে এই ঘটনার একটি ইতিবাচক দিকও রয়েছে:

আগুনকে রাতের বেলায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছিল বিধায় “প্রলয়ঙ্করী” রুপ নিতে পারে নাই অগ্নিকাণ্ড। দিনের আলো ফোটার আগেই লন্ডনের ফায়ার সার্ভিস ৬৭,০০০ বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। পুরো ঘটনার মধ্যেও মাটি বা আকাশে কোনো প্রাণহানি হয়নি। এটি কিছুটা হলেও স্থিতিস্থাপকতার পরিচয় দেয়।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
২৩ মার্চ ২০২৫

আরো পড়ুন

হংকং নিয়ে ব্রিটেনের হস্তক্ষেপে ক্ষুব্ধ চায়না

১১ মার্চ হতে কেয়ার ওয়ার্কার যুক্তরাজ্যে পরিবার আনতে পারবেন না

অবৈধ অভিবাসীদের রুয়ান্ডা প্রেরণ কার্যক্রমে বিক্ষোভকারীদের বাধা