হামাস–ইসরায়েল ইস্যুতে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির সঙ্গে সুর মিলিয়ে কথা বলায় নিজ দলেই চাপের মুখে পড়েছেন বিরোধী লেবার পার্টির প্রধান কেয়ার স্টারমার। দলের নেতারা তাকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে আক্রমণ চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনের যোদ্ধারা। এতে ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়। দুই শতাধিক ইসরায়েলিকে বন্দী করে নিয়ে যায় হামাস। এরপর থেকেই গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এ পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক মানুষ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ও শিশু।
এ পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বে মানুষ গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিক্ষোভ করছে। যুদ্ধবিরতির দাবিতে ইউরোপ ও আমেরিকায় বিক্ষোভ চলছে। যদিও পশ্চিমা সরকারগুলো এ দাবি উপেক্ষা করে ‘মানবিক বিরতি’ দেওয়ার কথা বলছেন। গাজায় ত্রাণ ঢুকতে দেওয়ার জন্য বিরতি দিতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়ে আসছেন তারা।
যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা স্টারমারও সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে মানবিক বিরতির কথা বলেছেন। তবে লেবার পার্টির অধিকাংশ নেতা সাধারণ মানুষের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছেন।
সর্বশেষ লেবার পার্টি কাউন্সিলের দুই নেতা দাবি করছেন, ইসরায়েল–হামাস বিরোধের বিষয়ে অবস্থানের কারণে দলীয় প্রধান কেয়ার স্টারমারের পদত্যাগ করা উচিত। কারণ তার অবস্থান নিয়ে দলে মতবিরোধ বাড়ছে।
বার্নলি কাউন্সিলের নেতা আফ্রাসিয়াব আনোয়ার এবং পেন্ডল বরো কাউন্সিলের নেতা আসজাদ মাহমুদ বলেছেন, তারা তাদের এলাকার লেবার কাউন্সিলরদের পক্ষে এই আহ্বান জানিয়েছেন।
লেবার পার্টির ছায়া মন্ত্রিসভার সদস্যদের পাশাপাশি লন্ডনের মেয়র সাদিক খান, স্কটিশ লেবার নেতা আনাস সারওয়ার এবং গ্রেটার ম্যানচেস্টারের মেয়র অ্যান্ডি বার্নহ্যামসহ দলের অনেকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু দলীয় সভাপতি স্টারমার বলেছেন, ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ১ হাজার ৪০০ জনকে হত্যার তিন সপ্তাহ পর একটি যুদ্ধবিরতি পেলে আরও “উৎসাহিত” হবে।’
গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি জানানোয় এবং এই দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেওয়ার কারণে অন্তত দুইজন নেতাকে বহিষ্কার করেছেন স্টারমার।
স্টারমারের অবস্থানের প্রতিবাদে ৩০ জনেরও বেশি কাউন্সিলর দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। এখন দুই নেতা আনোয়ার এবং মাহমুদ স্টারমারকে পদত্যাগের আহ্বান জানালেন।
মাহমুদ বলেন, দলের নেতা সবার কথা ‘শুনতে ব্যর্থ হয়েছেন’। এমন একজনকে দলের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য স্টারমারের পদত্যাগ করা উচিত যিনি হবেন সহানুভূতিশীল এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ।
আনোয়ার বলেন, গাজায় মানবিক বিরতি ‘যথেষ্ট নয়’। তিনি বলেন, ‘আমরা যা বুঝি সেটি হলো, বিরোধী দলের নেতার অন্ততপক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা উচিত, যাতে যুদ্ধবিরতি এবং সমস্ত জিম্মিদের মুক্তির আহ্বান জানানো হয়।
তিনি যোগ করেন, ‘মানবিক বিরতি যথেষ্ট না হওয়ার কারণ হলো, স্পষ্টতই গাজায় ত্রাণ ঢুকবে কিন্তু এরপর আবার বোমা হামলা, আবার আক্রমণ শুরু হবে। আমরা যা দেখছি তা হলো, গাজার নিরপরাধ বেসামরিকদের পালানোর কোনো জায়গা নেই।’
এই দুই কাউন্সিলর এমন সময় দলীয় প্রধানের পদত্যাগ চাইলেন যখন লেবার পার্টির কাউন্সিলরদের একটি নতুন জরিপে দেখা গেছে, দলের মাত্র ৩৭ শতাংশ স্থানীয় প্রতিনিধি হামাস–ইসরায়েল সংঘাতের বিষয়ে দলের অবস্থান নিয়ে ‘সন্তুষ্ট’, আর ৪৩ শতাংশ ‘অসন্তুষ্ট’।
এম.কে
১২ নভেম্বর ২০২৩