20 C
London
September 16, 2024
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

হাসিনার পতনে অনিশ্চয়তায় ভারতীয় ঋণের ২৫ প্রকল্প!

৫ আগস্ট ক্ষমতা থেকে পতনের পর ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এতে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে অদৃশ্য টানাপড়েন চলছে। ভারত সরকার যেমন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপর আস্থা রাখতে পারছে না, ঠিক তেমনি বাংলাদেশ সরকারও ভারতের উপর আস্থা পাচ্ছে না। বিশেষত ঘোষণা না দিয়ে ভারত বাঁধের পানি ছেড়ে যেভাবে বাংলাদেশে বন্যা সৃষ্টি করেছে তাতে দুই দেশের সম্পর্কের আস্থায় কিছুটা হলেও চিড় ধরেছে।

এমন পরিস্থিতিতে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়েছে ভারতের ঋণে (এলওসি) নেয়া বা প্রক্রিয়াধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প। গত প্রায় ১৩ বছরে তিনটি এলওসির আওতায় ৪০টি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি শেষ হয়েছে। আর চলমান রয়েছে আটটি প্রকল্প। এসব প্রকল্পের অর্থ ছাড় নিয়ে জটিলতা তৈরির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাকি ১৭টি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যেগুলো নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

প্রসঙ্গত, ভারতের সঙ্গে ২০১০ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ প্রথম ঋণচুক্তি করে, যা প্রথম লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) নামে পরিচিত। ওই এলওসির পরিমাণ ছিল ৮৬ কোটি মার্কিন ডলার। এছাড়া ২০১৬ সালে ২০০ কোটি ডলার এবং ২০১৭ সালে ৪৫০ কোটি ডলারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় এলওসি তথা ঋণচুক্তি হয়। তিন এলওসি মিলিয়ে বাংলাদেশকে ৭৩৬ কোটি ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয় ভারত। ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক এই ঋণ দিচ্ছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, এলওসির আওতায় গত জুন পর্যন্ত ছাড় হয়েছে প্রায় ১৭৫ কোটি ডলার। আর পাইপলাইনে রয়েছে ৫৬১ কোটি ডলার। শেখ হাসিনার পতনের আগে পাইপলাইনে থাকা ১৭ প্রকল্পের পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগ কিংবা প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরির পর্যায়ে ছিল। এগুলো আপাতত বন্ধ রয়েছে। এছাড়া চলমান আটটি প্রকল্পের অর্থ ছাড়ও বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্পগুলো অনিশ্চয়তায় পড়েছে। গত অর্থবছর ভারতের ঋণের ছাড় হয়েছে মাত্র ২৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এর আগের অর্থবছর ছাড় হয়েছিল ৩৩ কোটি ৭১ লাখ ডলার। এ হিসাবে গত অর্থবছর ঋণ ছাড় কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ। এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছর ছাড়ের পরিমাণ ছিল ৩২ কোটি ৭৮ লাখ কোটি ডলার। এছাড়া ২০২০-২১ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৪ কোটি ডলার করে ছাড় হয়েছে।

ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, ভারতীয় ঋণ ছাড়ে অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের তুলনায় গতি কম। এর অন্যতম কারণ ভারতীয় ঋণের প্রকল্পে কেনাকাটার ৭৫ শতাংশ ভারত থেকেই করার শর্ত থাকে। বিশেষ করে নির্মাণ প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কেনাকাটা ভারত থেকেই করতে হয়। এ ধরনের প্রকল্পের আরেকটি শর্ত হলো, কমপক্ষে ১০ শতাংশ কেনাকাটা করতে হবে বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে। কিন্তু ভারত থেকে সব ধরনের নির্মাণ সামগ্রী, যেমন বালু, সিমেন্ট বা অন্যান্য উপকরণ পরিবহন করে আনাটা জটিল বিষয়।

ভারতীয় ঋণে আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন প্রতিটি ধাপে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। আর প্রকল্পের কাজ পাবেন শুধু ভারতীয় ঠিকাদারেরা। আবার প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা থেকে শুরু করে ঠিকাদার নিয়োগের প্রতিটি ধাপেই এক্সিম ব্যাংকের সম্মতি নিতে হয়। ফলে ঠিকাদার নিয়োগ করতেই এক-দুই বছর সময় চলে যায়। ঠিকাদারেরা অনেক সময় বেশি দর দেন, যা প্রকল্প প্রাক্কলন থেকে অনেক বেশি। এ নিয়ে ভারতের এক্সিম ব্যাংক বারবার ব্যাখ্যা চায়, ফলে প্রকল্প অনুমোদনও বিলম্বিত হয়।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাস্তবায়ন পর্যায়েও ভারতীয় ঋণের প্রকল্পে জটিলতা তৈরি হয়। অনেক সময় ভারতের মূল ঠিকাদার সাবকন্ট্রাক্ট দেয়, যারা মাঠপর্যায়ে কাজে দক্ষ নয়। তাদের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়। আবার প্রকল্প সংশোধন করতে হলে ব্যয়ের বাড়তি অর্থ ভারত বহন করতে চায় না। অথবা ব্যয় বৃদ্ধির কারণ বারবার ব্যাখ্যা চায় ভারতের এক্সিম ব্যাংক। এসব জটিলতায় ভারতীয় ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহী নয় বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো।

সূত্রমতে, প্রথম এলওসির আওতায় ১৫টি প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ১১টি পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়েছে এবং একটি প্রকল্পের আংশিক বাকি থাকতেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। বাকি তিনটি প্রকল্প চলছে প্রায় এক দশক ধরে, যার সবগুলোই রেলওয়ের। তবে এগুলোর বাস্তবায়ন গতি খুবই ধীর। এর মধ্যে একটি প্রকল্প শেষ হওয়ার পথে। তবে বাকি দুটি প্রকল্প কবে নাগাদ শেষ হবে, তা সংশ্লিষ্টদের কেউ নিশ্চিত নন।

দ্বিতীয় এলওসির আওতায় ১৫টি প্রকল্প নেয়া হলেও পরে তিনটি বাদ দেয়া হয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে দুটি শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। আর তৃতীয় এলওসির আওতায় বাস-ট্রাক কেনার দুটি প্রকল্প শেষ হয়েছে। আরও ১৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে আছে। যদিও এর মধ্যে চারটি প্রকল্প এলওসি থেকে বাদ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত তৃতীয় ও চতুর্থ রেললাইন নির্মাণ এবং কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ সংস্কার প্রকল্প দুটি এক যুগের বেশি সময় ধরে ঝুলছে। এর বাইরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত করা, ১২ জেলায় হাইটেক পার্ক নির্মাণ, আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীত করা এবং বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি লাইন প্রকল্পগুলো ঝুলে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, এক শতাংশ সুদে বাংলাদেশকে ঋণ দিয়েছে ভারত। ১৫ বছর মেয়াদি এ ঋণে গ্রেস পিরিয়ড পাঁচ বছর।

এম.কে
৩১ আগস্ট ২০২৪

আরো পড়ুন

বেনজিরের এতো সম্পদ কীভাবে হতে পারে, আমি এটা ভাবতেই পারছি নাঃ বিচারপতি মানিক

ড. ইউনূসের কারণে বিদেশি বায়ারদের আস্থা ফিরেছে : বিজিএমইএ

১৫ আগস্ট রাজপথে থাকার ঘোষণা ছাত্র-জনতার