একজন জেল খাটা আলবেনিয়ান নাগরিক যিনি কোকেন ও ক্যানাবিস বিক্রির দায়ে কারাদণ্ড ভোগ করেছিলেন, তিনি দাবি করেছেন যে তিনি তার ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছেন—এবং এই যুক্তিই শেষ পর্যন্ত তাকে ব্রিটেনে থাকার অনুমতি এনে দিয়েছে।
২৯ বছর বয়সী আরলিন্ড নাবোলি (Arlind Nabolli) এর অপরাধকে আদালত প্রথমে সমাজের জন্য “গুরুতর হুমকি” হিসেবে বিবেচনা করেছিল, কারণ তার মাদক ব্যবসা এককালীন ঘটনা নয় বরং ধারাবাহিক লেনদেনের অংশ ছিল। ঘটনাটি ঘটেছিল কেন্টের মেইডস্টোন এলাকায়, যেখানে নাবোলিকে একাধিকবার মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত দেখা যায়।
কারাদণ্ড ভোগের পর নাবোলি হোম অফিসের বহিষ্কার আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন, দাবি করে বলেন, তিনি এখন একজন আইন মান্যকারী ডেলিভারি ড্রাইভার এবং সমাজে পুনর্বাসিত হয়েছেন।
ইমিগ্রেশন বিচারক তার বক্তব্য গ্রহণ করে মন্তব্য করেন, নাবোলির অপরাধ ছিল ‘একবারের ভুল’, কারণ মুক্তির পর থেকে তিনি আর কোনো অপরাধে জড়াননি এবং আসল অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন।
রায়টি এমন সময়ে এসেছে যখন হোম সেক্রেটারি শাবানা মাহমুদ বিদেশি অপরাধীদের মানবাধিকার আইনের সুযোগ নিয়ে বহিষ্কার ঠেকানোর প্রবণতা রোধে নতুন কঠোর আইন প্রণয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আদালতের নথি অনুযায়ী, নাবোলি ২০১৮ সালে তার গ্রিক স্ত্রীসহ ব্রিটেনে আসেন এবং পাঁচ বছরের জন্য থাকার অনুমতি পান। দুই বছর পর তিনি মাদক বিক্রি ও সড়ক আইন লঙ্ঘনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন।
তার কাছ থেকে ১০ গ্রাম কোকেন, ৩০ গ্রাম ক্যানাবিস, নগদ অর্থ এবং আলবেনিয়ার দুই ব্যক্তির কাছে অর্থ স্থানান্তরের প্রমাণ পাওয়া যায়।
৩৩ মাসের সাজা শেষে হোম অফিস তার বহিষ্কার আদেশ জারি করে। কিন্তু নাবোলি দাবি করেন, এটি ছিল একবারের ভুল এবং তিনি এখন সম্পূর্ণভাবে পরিবারকেন্দ্রিক ও সমাজে অবদান রাখছেন।
তিনি বলেন, যদি তাকে আলবেনিয়ায় পাঠানো হয়, তাহলে তিনি মাদক পুনর্বাসন প্রোগ্রাম চালিয়ে যেতে পারবেন না এবং তার স্ত্রী ও দুই সন্তান ব্রিটেন ছাড়তে রাজি নন।
আপার ট্রাইব্যুনালের বিচারক করিমুল্লাহ খান তার পক্ষে রায় দেন। তিনি বলেন, “নাবোলির আচরণ এখন সমাজের মৌলিক স্বার্থের জন্য কোনো বাস্তব বা গুরুতর হুমকি নয়। সে পরিবারসহ স্থিতিশীল জীবনে ফিরেছে এবং পুনরায় অপরাধের কোনো প্রবণতা দেখা যায়নি।”
বিচারক আরও বলেন, “সে তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে, পার্ট-টাইম কাজ করছে, এবং অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটেনি। তার বর্তমান জীবনযাপন পুনর্বাসনের সফল উদাহরণ।”
হোম অফিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আরিফা আহমেদ আদালতে যুক্তি দেন, নাবোলি অপরাধে না ফেরার কারণ কেবল বহিষ্কারের ভয়, যা তার অনুশোচনার সত্যতা প্রমাণ করে না।
কিন্তু বিচারক খান মন্তব্য করেন, “বিষয়টি এত সরল নয়। তার অপরাধ একবারই ঘটেছে, এবং এখন তার মধ্যে কোনো পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা নেই।”
ফলস্বরূপ, আদালত নাবোলির আপিল গ্রহণ করে বহিষ্কার আদেশ বাতিল করেছে, যা বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অভিবাসন ও অপরাধবিষয়ক বিতর্কে একটি আলোচিত নজির হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ
এম.কে

