অভিবাসীদের জন্য একটি দীর্ঘ এবং কঠিন ভিসা রুটকে বর্ণবাদী বলে আখ্যায়িত করেছেন বিশ্লেষকেরা। বিশ্লেষকদের মতে বেশিরভাগ আবেদনকারীদের চাপের মুখে এই কঠিন পথে যাত্রা করতে হয় এবং পরিনতি ভুগতে হয়।
“১০-বছরের ভিসা রুট” কয়েক হাজার লোক ব্যবহার করে যারা পেশাদার যোগ্যতার অভাবের কারণে অন্যান্য অভিবাসন প্রকল্পের জন্য যোগ্য নন। তাদের মধ্যে অনেকেই স্বল্প বেতনের চাকুরিতে কাজ করেন। এদের বেশিরভাগই ক্লিনার কিংবা হেলথ সেক্টরের সেবাকর্মী। আবার অন্যান্য পেশাদারিত্ব রুটে যুক্তরাজ্যে স্যাটেল হতে পাঁচ বছর সময় লেগে থাকে।
দাতব্য সংস্থা র্যামফেল দ্বারা পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, ১০ বছর রুটে ২,১৮,১১০ জন লোক অপেক্ষমাণ রয়েছেন।
হোম অফিস হতে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১০ বছর রুটে যে সকল দেশের নাগরিকেরা বেশি ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে আছে নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ভারত, ঘানা এবং বাংলাদেশ।সামগ্রিকভাবে, এই রুটটি ব্যবহার করে ৮৬% এশিয়ান বা আফ্রিকান দেশের লোক , ৬% ইউরোপ থেকে আসা লোক।
১০ বছর রুটের মাধ্যমে যারা ইউকেতে স্যাটেল হতে চান তারা প্রতি ৩০ মাস অন্তর হোম অফিসে ভিসা রিনিউ করতে হয়। প্রতিবার ভিসা রিনিউ করতে ৩,৮৫০ পাউন্ডের ফি’স পরিশোধ করতে হয় তাদের। যার অর্থ দাঁড়ায় এই রুটে থাকা লোকেদের মোট চারবার রিনিউয়ালের প্রয়োজন হয়। ১০ বছর রুটে একজন আবেদনকারী ইউকে হোম অফিসকে মোট প্রায় ১৫,৪০০ পাউন্ড ফি’স প্রদান করতে বাধ্য থাকে।
আইনী পরামর্শ ও সহায়তা পরিষেবা গ্রেটার ম্যানচেস্টার ইমিগ্রেশন এইড ইউনিট (জিএমআইএইউ) জানায়, ১০ বছরে থাকা রুটের ব্যক্তি বা পরিবারগুলো ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ে। তাদের মৌলিক জীবনযাত্রার ব্যয়ের সাথে তাদের আয় কখনই খাপ খায় না।
ঘানার একজন ৪১ বছর বয়সী মহিলা জানিয়েছেন তিনি ১০ বছরের রুটের ইউকেতে স্যাটেল হতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তার একটি ব্রিটিশ সন্তান রয়েছে, যে ২০১৭ সালে জন্মগ্রহণ করেছিল। তিনি আরো জানান এই বছরের মার্চ মাসে তার ভিসা রিনিউয়ালের আবেদন করতে বেশ কয়েক সপ্তাহ দেরি হয়ে গিয়েছিল। তিনি এখন হোম অফিস থেকে নতুন সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন এবং ইতিমধ্যে একজন ওভারস্টেয়ার হয়ে গিয়েছেন।
ঘানায়িয়ান এই মহিলা বলেন, সরকারের এই রুটকে ৫ বছরে রুপান্তরিত করা উচিত। আমার মনে হয় আমি কারাগারে আছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাই এবং নার্স হিসাবে যোগ্যতা অর্জন করতে চাই। তবে আমার অভিবাসন স্থিতি বাছাই না হওয়া পর্যন্ত আমি কিছুই করতে পারছি না।
জিএমআইএইউর এক মুখপাত্র বলেছেন, “ এই ১০ বছরের রুটটি একটি বর্ণবাদী নীতি। মানুষেরা ঋণে জর্জরিত হয়েও তাদের আইনী অবস্থান বজায় রাখতে পারছে না। তাদের পরিবারকে খাওয়ানো এবং শীতকালে ঘর উষ্ণ রাখতে তারা অপারগ হয়ে যাচ্ছে।
দশ বছর কোথাও স্থায়ী হবার জন্য অনেক দীর্ঘ অপেক্ষা। তাই রুটটি অবশ্যই বাতিল করা উচিত। ৫ বছরে স্থায়ী হবার সুযোগ দেয়া উচিত।”
হোম অফিসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “ কোনো আবেদনকারীর জাতি বা ধর্ম দেখে তাদের স্থায়ী হবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় না। হোম অফিস আইনসিদ্ধ উপায়ে ইউরোপীয় কনভেনশনের অধীনে দায়বদ্ধতা ভিতরে থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। আমরা সকল ব্যক্তিদেরকেই যুক্তরাজ্যে তাদের ভিসা শেষ হওয়ার আগে ভিসা রিনিউয়ের আবেদন করতে উৎসাহিত করি।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২২:সেপ্টেম্বর ২০২৪