TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

হোম অফিসে সংস্কার আনতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ শাবানা মাহমুদঃ কনজারভেটিভ আমলের ব্যর্থতা উন্মোচন

ব্রিটেনের নতুন হোম সেক্রেটারি শাবানা মাহমুদ স্বীকার করেছেন, তার দপ্তরটি এখনো “কার্যকরভাবে কাজ করার উপযোগী নয়।” এক অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে হোম অফিসকে “অকার্যকর, বিচ্ছিন্ন ও ব্যর্থতার জন্য সাজানো” বলা হলে তিনি বলেন, লেবার সরকার এখন এটি পুনর্গঠনের মাধ্যমে “দেশের জন্য ফলপ্রসূভাবে কাজ করার” পথে কাজ করছে।

দ্য টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত এক “কঠোর সমালোচনামূলক” প্রতিবেদনে বলা হয়, হোম অফিসের অভিবাসন ব্যবস্থায় “পরাজয়বাদী সংস্কৃতি” তৈরি হয়েছে এবং অপরাধ দমন ও ছোট নৌকায় অবৈধভাবে আগমন ঠেকাতে ব্যর্থতা দেখা দিয়েছে। প্রতিবেদনে হোম অফিসের অভ্যন্তরীণ কাঠামো, নীতি বাস্তবায়ন, প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় গভীর দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয়।

প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেন সাবেক হোম অফিস উপদেষ্টা ও বর্তমান কনজারভেটিভ এমপি নিক টিমোথি। ২০২২ সালে তখনকার হোম সেক্রেটারি সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান তার মাধ্যমে একটি দুই মাসব্যাপী পর্যালোচনা পরিচালনা করেন। তিনি দপ্তর ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি কাজের সুযোগ পান এবং দেখতে পান, হোম অফিসে প্রশাসনিক সময়ের বড় অংশ ব্যয় হয় “পরিচয় রাজনীতি” ও “সামাজিক ইস্যু” নিয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনায়, যা নীতিগত কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করে।

টিমোথির প্রতিবেদনে বলা হয়, দপ্তরটির কাজের ধরন “অসমান ও খণ্ডিত” এবং অভিবাসন ব্যবস্থার পুরো দায়িত্বে কোনো একক কর্মকর্তা নেই। বিশেষ করে আশ্রয় ও অভিবাসন বিভাগকে “অলস ও রক্ষণাত্মক” বলে বর্ণনা করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে ১,৬৬,০০০ আশ্রয় আবেদন জটে রয়েছে, যেখানে সাক্ষাৎকার দিতে দুই বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়।

আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো, অনেক কর্মকর্তা অভিবাসন বিভাগে কাজ করতে চান না। কেউ কেউ “নৈতিকভাবে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের বিরোধী” এবং কেউ ভয় পান, কোনো ব্যর্থতার দায় তাদের ওপর বর্তাবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনি চ্যালেঞ্জের আশঙ্কা প্রায়ই সিদ্ধান্ত না নেওয়ার অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

প্রযুক্তিগত অদক্ষতাও হোম অফিসের অন্যতম বড় সমস্যা বলে প্রতিবেদনে উঠে আসে। পুরনো ও অসংযুক্ত ডেটা সিস্টেমের কারণে অনেক সময় “সহজ প্রশ্নেরও দ্রুত উত্তর দেওয়া সম্ভব হয় না।” তবে টিমোথি হোম অফিস ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এতে মূল কাজের প্রতি মনোযোগ হারানোর ঝুঁকি রয়েছে। তিনি বরং আধুনিক, সংযুক্ত প্রযুক্তিতে জরুরি বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর শাবানা মাহমুদ বলেন, “এই প্রতিবেদন, যা আগের সরকার আমলে তৈরি, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। গত কনজারভেটিভ সরকার জানত হোম অফিস ব্যর্থতার পথে যাচ্ছে, কিন্তু তারা কিছুই করেনি। এখন পরিবর্তন আসছে — আমি নতুন স্থায়ী সচিবের সঙ্গে কাজ করব, যাতে হোম অফিস জনগণের জন্য সত্যিকারের সেবা প্রদানকারী দপ্তরে পরিণত হয়।”

তার এই বক্তব্য ২০০৬ সালের লেবার হোম সেক্রেটারি জন রিডের ঐতিহাসিক মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি ঘটায়। তখন রিড বলেছিলেন, অভিবাসন ব্যবস্থা “কার্যকর নয়,” কারণ বিদেশি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার সময় তাদের বহিষ্কারের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছিল না। তাঁর ওই সতর্কতা থেকেই ব্রিটিশ প্রশাসনে বড় ধরনের সংস্কার ঘটে, যার মাধ্যমে মিনিস্ট্রি অব জাস্টিস গঠিত হয়।

বিবিসির এক সূত্র জানায়, বর্তমান স্থায়ী সচিব অ্যান্টোনিয়া রোমিওর লক্ষ্য হোম অফিসকে “হোয়াইটহলের প্রধান ও সর্বাধিক দক্ষ দপ্তর” হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। সূত্রটি আরও জানায়, “অ্যান্টোনিয়া নিরলসভাবে কাজ করছেন, যাতে হোম অফিস সত্যিকার অর্থে কার্যকর ও আধুনিক প্রশাসনে রূপ নেয়।”

সূত্রঃ বিবিসি

এম.কে

আরো পড়ুন

হোম অফিসের ভুলে ব্রিটেনের অভিবাসীদের বন্দি জীবন!

নিউজ ডেস্ক

কনজারভেটিভ দলের সাবেক মন্ত্রী ভোট দিবেন লেবার পার্টিকে

লন্ডন, বার্মিংহাম ও ম্যানচেস্টারে বাংলাদেশিদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র আবেদন সেবা চালু