24.2 C
London
June 28, 2025
TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে স্থায়ীভাবে লিবিয়ায় সরানোর পরিকল্পনা করছে ট্রাম্প প্রশাসনঃ রিপোর্ট

ট্রাম্প প্রশাসন গাজা উপত্যকা থেকে ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে স্থায়ীভাবে লিবিয়ায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এই প্রচেষ্টার সঙ্গে পরিচিত পাঁচ জন ব্যক্তির বরাতে মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম এনবিসি নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।

পরিকল্পনা সম্পর্কে সরাসরি জ্ঞান রাখা দুই ব্যক্তি এবং একজন প্রাক্তন মার্কিন কর্মকর্তা এনবিসি নিউজকে জানিয়েছেন, পরিকল্পনাটি এতটাই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনাধীন যে, প্রশাসন লিবিয়ার নেতৃত্বের সঙ্গে এটি নিয়ে আলোচনা করেছে।

এই তিন জন ব্যক্তি বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের বিনিময়ে ট্রাম্পের প্রশাসন সম্ভাব্যভাবে লিবিয়াকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের তহবিল ছেড়ে দেবে, যেসব অর্থ যুক্তরাষ্ট্র এক দশকেরও বেশি সময় আগে জব্দ করেছিল।

তিনটি সূত্রই জানিয়েছে, কোনো চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছানো যায়নি এবং প্রশাসনের আলোচনা সম্পর্কে ইসরায়েলকেও অবহিত রাখা হয়েছে।

এনবিসি’র প্রতিবেদন অনুসারে, এই রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ একাধিকবার সংবাদমাধ্যমটির মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি। এটি প্রকাশের পর, একজন মুখপাত্র এনবিসি নিউজকে বলেন, ‘এই প্রতিবেদনগুলো অসত্য। মাঠের পরিস্থিতি এমন পরিকল্পনার পক্ষে অযোগ্য। এই ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়নি এবং এর কোনো অর্থ হয় না।’

এনবিসি নিউজের প্রশ্নের জবাবে হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাসেম নাইম বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনিরা তাদের মাতৃভূমিতে খুব গভীরভাবে প্রোথিত, মাতৃভূমির প্রতি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তারা শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে এবং তাদের ভূমি, তাদের মাতৃভূমি, তাদের পরিবার এবং তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।’

নাইম আরও বলেন, হামাস একমাত্র দল – যাদের গাজা এবং গাজার বাসিন্দাদের জন্য কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়, তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে।

এনবিসি নিউজ জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকম্পনা নিয়ে ইসরায়েলি সরকারের প্রতিনিধিরাও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সমর্থিত বিদ্রোহে দীর্ঘস্থায়ী শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকে প্রায় ১৪ বছর ধরে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে লিবিয়ায়। দেশটির ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলায় জর্জরিত।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর দেশটিতে ‘অপরাধ, সন্ত্রাসবাদ, অবিস্ফোরিত ল্যান্ডমাইন, নাগরিক অস্থিরতা, অপহরণ এবং সশস্ত্র সংঘাতের’ কথা উল্লেখ করে আমেরিকানদের লিবিয়া ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিচ্ছে।

এ বিষয়ে লিবিয়া শাসনকারী দবেইবাহ সরকার ও হাফতারের লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি উভয়েই এনবিসি’র মন্তব্যের জন্য অনুরোধের জবাব দেয়নি।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের লিবিয়ায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা ট্রাম্প প্রশাসন কখন বা কীভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে, তার বিশদ বিবরণ অস্পষ্ট। সেখানে ১০ লাখ লোককে পুনর্বাসনের প্রচেষ্টা সম্ভবত উল্লেখযোগ্য বাধার সম্মুখীন হবে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসন লিবিয়াকে এমন একটি জায়গা হিসেবেও দেখেছে, যেখানে তারা কিছু অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করে পাঠাতে পারে। তবে, এই মাসে একজন মার্কিন বিচারক অভিবাসীদের একটি দলকে লিবিয়ায় পাঠানোর পরিকল্পনা স্থগিত করে দেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচেষ্টা নিয়ে সরাসরি জ্ঞান রাখা একজন প্রাক্তন মার্কিন কর্মকর্তা এনবিসি নিউজকে বলেন, লিবিয়ায় ফিলিস্তিনিদের কোথায় পুনর্বাসিত করা হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের আবাসনের বিকল্পগুলো খুঁজছেন এবং গাজা থেকে লিবিয়ায় তাদের পরিবহনের জন্য প্রতিটি সম্ভাব্য পদ্ধতি বিবেচনা করা হচ্ছে – আকাশপথে, স্থলপথে এবং সমুদ্রপথে।

দুই বর্তমান মার্কিন কর্মকর্তা, প্রাক্তন কর্মকর্তা এবং এই প্রচেষ্টার সঙ্গে সরাসরি জ্ঞান থাকা দুই ব্যক্তি বলেছেন, আলোচনার অধীনে থাকা পরিকল্পনাটি যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের পূর্বের দৃষ্টিভঙ্গির অংশ। তিনি ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন, আমেরিকা অঞ্চলটির ‘মালিকানা’ নিতে এবং এটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ হিসাবে গড়তে চান।

ট্রাম্প সেই সময় বলেছিলেন, ‘আমরা সেই অংশটি (গাজা) দখল করব, এটিকে উন্নত করব এবং হাজার হাজার কর্মসংস্থান তৈরি করব। এটি এমন কিছু হবে, যার জন্য সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য গর্বিত হতে পারে।’ এই ধারণার লক্ষ্য অর্জনের জন্য ট্রাম্প বলেছিলেন, সেখানকার ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে অন্যত্র পুনর্বাসিত করতে হবে।

এরপর, গত মার্চ মাসে ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তর না করে গাজা পুনর্নির্মাণের জন্য মিশরের একটি প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল।

লিবিয়া-পরিকল্পনা নিয়ে প্রশাসনের কাজ এমন এক সময়ে শুরু হয়েছে যখন নেতানিয়াহুর সাথে ট্রাম্পের সম্পর্ক টানাপোড়েনপূর্ণ হয়ে উঠেছে , যার একটি কারণ ইসরায়েলের গাজায় নতুন সামরিক আক্রমণ শুরু করার সিদ্ধান্ত।

আলোচনার সাথে পরিচিত একজন জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা, একজন প্রাক্তন মার্কিন কর্মকর্তা এবং এই প্রচেষ্টার সাথে সরাসরি জ্ঞান রাখা একজন ব্যক্তির মতে, ট্রাম্প প্রশাসন গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের জন্য একাধিক স্থান বিবেচনা করেছে।

প্রচেষ্টার সাথে সরাসরি পরিচিত একজন ব্যক্তি এবং আলোচনার সাথে পরিচিত একজন প্রাক্তন মার্কিন কর্মকর্তার মতে, ডিসেম্বরে বাশার আল আসাদের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে সিরিয়াও গাজার ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের জন্য একটি সম্ভাব্য স্থান হিসেবে আলোচনার অধীনে রয়েছে।

এরই মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন সিরিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের দিকে পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি সৌদি আরবে সিরিয়ার নেতা আল-শারার সঙ্গে দেখা করেছেন ট্রাম্প। মার্কিন নেতা বলেছিলেন, আমেরিকা সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে।

সূত্রঃ এনবিসি নিউজ

এম.কে
১৮ মে ২০২৫

আরো পড়ুন

এক্স প্রসঙ্গে ইলন মাস্কঃ আমরা ব্যর্থ হতে পারি

শ্রমবাজার আকর্ষণীয় করতে এবার নিয়োগদাতাদের ‘বাগে’ আনছে সৌদি

ভারতসহ ৪ দেশকে কঠোর হুমকি দিলেন ট্রাম্প