বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগে বলা হয়েছে, গত বছরের সরকারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তার নির্দেশেই নিরাপত্তা বাহিনী দেশজুড়ে গুলি চালায়, যাতে ১,৪০০ জনেরও বেশি নিহত হন।
বৃহস্পতিবার তিন সদস্যের বিচারক প্যানেল অনুপস্থিতিতে হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। তার সঙ্গে অভিযুক্ত হয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তাদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, শেখ হাসিনা ছিলেন এই সহিংস অভিযানের “মূল হোতা ও সর্বোচ্চ কমান্ডার”। আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে প্রাণহানি ও গণহারে গ্রেপ্তারের পেছনে হাসিনার সরাসরি নির্দেশনার প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করা হয়। তারা ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ড ও ফেলে যাওয়া সরকারি নথিপত্রকে সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করছে।
এই আন্দোলন এবং রক্তপাতের ফলে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। ৫ আগস্ট তিনি হেলিকপ্টারে দেশ ত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান এবং সেখানে আত্মগোপনে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে তিনটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, হাসিনার শাসনামলে “মহাবিপর্যয়” ঘটেছে এবং দেশ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। একইসঙ্গে ভারতকে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করা হলেও দিল্লি এখনও সাড়া দেয়নি বলে জানান তিনি।
এই মামলায় অভিযুক্ত সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ইতিমধ্যে দোষ স্বীকার করেছেন এবং রাষ্ট্রের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে সম্মত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগ এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ট্রাইব্যুনালকে ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ বলে অভিহিত করেছে। দলটির বিবৃতিতে বলা হয়, “এই বিচার আমাদের বিরুদ্ধে চলমান রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ।”
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে আগামী ৩ আগস্ট। এরই মধ্যে আদালত অবমাননার দায়ে তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। এক অডিও রেকর্ডে হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, “আমার নামে ২২৭টি মামলা আছে, তাই এখন আমার ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স আছে।”
ড. ইউনূসের সরকার জানিয়েছে, ২০২৬ সালের এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগকে বাইরে রাখা হবে কিনা তা এখনও পরিষ্কার নয়।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১১ জুলাই ২০২৫