২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আইরিশ নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগকারী সংস্থা (ICE)-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৯ জন আইরিশ নাগরিককে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যেখানে আগের অর্থবছরে (অক্টোবর ২০২৩ – সেপ্টেম্বর ২০২৪) সংখ্যা ছিল ৬০ জন।
আইরিশ নাগরিকদের মধ্যে বাড়তি এই প্রত্যাবাসন সংখ্যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিবাসন আইনজীবীরা। তাদের মতে, বর্তমান প্রশাসন অভিবাসন আইন প্রয়োগে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে এমন অনেক ব্যক্তির ওপর যাদের কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড নেই।
ম্যাকএন্টি ল’ ফার্মের অভিবাসন আইনজীবী ক্লেয়ার ডাউত্রে বলেন, “এখন আমরা দেখছি, অপরাধমূলক পটভূমি না থাকা অনেক মানুষও গ্রেফতার ও আটক হচ্ছেন। অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে প্রবেশ করেছিলেন, কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও থেকে গেছেন। এখন সবাই ঝুঁকির মধ্যে।”
মার্কিন নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য জিম ব্রাউন-এর স্ত্রী ডোনা হিউজেস-ব্রাউন, যিনি শিশুকালে আইরিশ পাসপোর্ট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং দীর্ঘদিনের গ্রিন কার্ডধারী, এখন ফেরত পাঠানোর মুখে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ— এক দশকেরও বেশি আগে মাত্র ৪৯ ও ২২ ডলারের দুটি খারাপ চেক লেখার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া।
জিম ব্রাউন বলেন, “তারা সব সময় খারাপ লোকদের কথা বলে, কিন্তু ডোনা তেমন কেউ নয়। সে ভুল করেছে, কিন্তু সেটা ছিল বেঁচে থাকার প্রয়াসে।” তার দাবি, ডোনা তখন আর্থিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত ছিলেন যে পরিবারের খাবারের জন্যই বাধ্য হয়ে ওই চেকগুলো লিখেছিলেন।
বর্তমানে ডোনা হিউজেস-ব্রাউন ৯০ দিন ধরে আইসির এক আটক কেন্দ্রে বন্দি। তার স্বামী অভিযোগ করেছেন, “সেখানে ২৫ জন নারী একটি টয়লেট ব্যবহার করেন, যা সপ্তাহজুড়ে বন্ধ ছিল। খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থাও ন্যূনতম মানের।”
আইরিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের (DFA) তথ্যমতে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫১ জন আইরিশ নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত সহায়তা চেয়েছেন— যা ২০২৪ সালের তুলনায় তিনগুণেরও বেশি। গত পাঁচ বছরে এত বেশি সহায়তার আবেদন আর দেখা যায়নি।
পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, “যেসব নাগরিক প্রত্যাবাসনের ঝুঁকিতে আছেন, তাদের আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য, আইনজীবীর তালিকা ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগে সহায়তা প্রদান করি।”
অন্যদিকে, ICE জানিয়েছে, তারা “জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি” হিসেবে বিবেচিত বিদেশি অপরাধীদের প্রত্যাবাসনে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তবে বাস্তবে, ক্ষুদ্র অপরাধে দোষী বা শুধুমাত্র ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া নাগরিকরাও এই নীতির আওতায় পড়ছেন।
আইনজীবী ক্লেয়ার ডাউত্রে বলেন, “এখন কোনো ভুলের সুযোগ নেই। প্রতিটি কেস কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যারা আটক হচ্ছেন, তাদের জামিন পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমার পরামর্শ হলো— আগেভাগে আইনজীবী নিয়োগ দিন, সব প্রমাণ ও নথি প্রস্তুত রাখুন। কারণ, একবার আটক হলে মামলার পক্ষে লড়াই করা খুব কঠিন হয়ে যায়।”
মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের একজন কর্মকর্তা অবশ্য দাবি করেছেন, “আইসি আটক কেন্দ্রে সর্বোচ্চ মানের সেবা দেওয়া হয়— বন্দিদের চিকিৎসা, খাবার ও আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ নিশ্চিত করা হয়।”
তবে জিম ব্রাউনের মতো পরিবারগুলোর কাছে এসব আশ্বাস কেবল কাগজে-কলমে। তিনি বলেন, “আমার স্ত্রী কোনো বিপজ্জনক অপরাধী নন। সরকারের এই আচরণ শুধু নির্মম নয়, অমানবিকও।”
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে

