TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

২০২৬ নির্বাচনঃ বাংলাদেশে কৌশলগত মোড়, উদ্বেগে নয়াদিল্লি

বাংলাদেশের আসন্ন ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালের সাধারণ নির্বাচন শুধু ক্ষমতার লড়াই নয়; এটি দেশের পররাষ্ট্রনীতি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার এক নির্ণায়ক মুহূর্তে পরিণত হয়েছে। ২০২৪ সালের ‘মৌসুমী বিপ্লব’-এ শেখ হাসিনার পতনের পর যে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে, সেটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার কাঠামো ও ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক—উভয়কেই নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।

এই শূন্যতার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে ভারতের ওপর। দীর্ঘদিন ধরে নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিবেচিত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ফলে বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রতিযোগিতা এক অজানা ও অস্থির পথে মোড় নিয়েছে। ফলে ভারতের জন্য চিরায়ত নিরাপত্তা-ভিত্তিক সহযোগিতার যুগ শেষ হয়ে নতুন, অনিশ্চিত অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে।

২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে সহিংসতা, অচলাবস্থা ও প্রাণহানির পর শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। আইনগত সংস্কার ও জবাবদিহিতার কথা উল্লেখ করে সরকার আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। দলটি এ সিদ্ধান্তকে অবৈধ ও রাজনৈতিকভাবে প্রণোদিত বলে অভিযোগ তোলে।

আওয়ামী লীগ না থাকায় রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে তিন শক্তি—বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি ও ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন থেকে জন্ম নেওয়া ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)। এর মধ্যে বিএনপি সবচেয়ে এগিয়ে আছে বলে আন্তর্জাতিক রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (IRI) জরিপে উঠে এসেছে। তবে ১৮ শতাংশ সিদ্ধান্তহীন ভোটার পুরো সমীকরণকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।

বিএনপি ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ ও ভারতের ‘হস্তক্ষেপবিরোধী’ ভাষ্যকে সামনে এনে নির্বাচনী প্রচারণা জোরদার করেছে। দলটি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে বাস্তবধর্মী হলেও কঠোর সার্বভৌমত্ব-অবস্থান নির্ভর করতে চায়। সাম্প্রতিক সময়ে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে ভারতের সহানুভূতির বার্তার জবাবে বিএনপির ধন্যবাদ বার্তা দুই দেশের সম্পর্কে বিরল এক উষ্ণতা তৈরি করেছে।

অন্যদিকে, আদালতের রায়ের পর রাজনীতিতে পুনরায় বৈধতা পাওয়ার ফলে জামায়াতে ইসলামির উত্থান ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ। ২০০১–০৬ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর আশ্রয় ও ২০০৪ সালের চট্টগ্রাম অস্ত্র জব্দের ঘটনা নয়াদিল্লির স্মৃতিতে এখনো তাজা। যদিও জামায়াত সাম্প্রতিক সময়ে নরম কূটনৈতিক ভাষা ব্যবহার করছে, তাদের তৃণমূলের ধর্মীয়-জাতীয়তাবাদী অবস্থান ভারতের জন্য অস্বস্তিকর।

ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকে আসা এনসিপি-ও নিজেদের ‘প্রো-ইন্ডিয়া বা প্রো-পাকিস্তানহীন’ জাতীয়তাবাদী শক্তি হিসেবে তুলে ধরছে। দলটি যুবসমাজের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, তবে বাস্তবে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা তুলনামূলক কম ধরে নেওয়া হচ্ছে।

ভারতের জন্য ২০২৬ নির্বাচন তিনটি সম্ভাব্য পথ তৈরি করছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার এলে সম্পর্ক হবে বেশি লেনদেনভিত্তিক এবং কম রাজনৈতিক। জামায়াত প্রভাবিত সরকার এলে চীন-পাকিস্তান ঘনিষ্ঠতা বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। আর ছাত্র-উদ্ভূত সংস্কারপন্থী সরকার এলে সম্পর্ক নতুন কাঠামোতে গড়তে পারে, তবে প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার অভাবে স্থিতিশীলতা কম হতে পারে।

বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক বর্তমানে অস্থির ও অনিশ্চিত পথে। আইআরআই জরিপে অংশ নেওয়া তরুণরা বলে, ভারতের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব বাড়ছে—বিশেষত হাসিনার সময়কার সম্পর্ককে কেন্দ্র করে। তবে সাংস্কৃতিক ও মানবিক বন্ধন দুই দেশের সম্পর্কের মূল শক্তি হিসেবে রয়ে গেছে। চিকিৎসক ডা. রেহান মনে করেন, “ব্যবসা, চিকিৎসা, শিক্ষা, সংস্কৃতি—সব ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতার বিকল্প নেই।”

তরুণ গবেষক তন্ময় সাহা জয় বলেন, “বিভিন্ন কারণে ভারত-বাংলাদেশ সরকারি সম্পর্ক দ্রুত উন্নত হবে বলে মনে হয় না। কিন্তু সাংস্কৃতিক যাত্রাপথ নতুন প্রজন্মকে আবারও এক করবে।”

 

২০২৬ সালের ফলাফল যে দলই নির্ধারণ করুক না কেন, বাংলাদেশের ভূরাজনীতি এখন নতুন এক সন্ধিক্ষণে। ভারতের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো দ্রুত নীতির পুনর্বিন্যাস, জন-পর্যায়ের কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং সাধারণ মানুষের জীবনে দৃশ্যমান সুফল নিশ্চিত করা—নইলে পূর্বাঞ্চলীয় নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্থিতিশীলতায় বড় চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে।

সূত্রঃ টাইমস অব ইন্ডিয়া

এম.কে

আরো পড়ুন

বৃষ্টিতে মন্ত্রীর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম যেন চাকুরির জন্য গিয়েছিঃ বানিজ্য উপদেষ্টা

তিন শর্তে আড়াই বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক-এডিবি

আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার পেলেন বাংলাদেশের সাদাত

অনলাইন ডেস্ক