রোববার ৩ ডিসেম্বর মাংস ব্যবসায়ী, ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন, ক্যাব, ট্যারিফ কমিশন, সুপারশপ প্রতিনিধি এবং ভোক্তা-অধিকারের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে রাজধানীর শাহজাহানপুরের মাংস ব্যবসায়ী খলিল আহমেদ এবং ভোক্তা-অধিকারের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন মাংস ব্যবসায়ীরা।
ভোক্তা-অধিকারের পক্ষ থেকে খলিলের মাংসের মান নিয়ে সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডল বলেন, অনেকে বলেছেন, খলিলের মাংসের মান খারাপ। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে এবং অন্য সময়ে লোক পাঠিয়ে দেখা যায়, খলিলের মাংসের মান অন্যদের থেকে অনেক ভালো।
কম দামে মাংস বিক্রি করে খলিলের লাভ হচ্ছে নাকি লোকসান এমন প্রসঙ্গে খলিল বলেন, আগে ৮০০ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রি করলে দিনে ৩-৪টি গরু জবাই হতো। এখন ৫৯৫ টাকায় মাংস বিক্রি করায় প্রতিদিন ৫-৭ মণ ওজনের ৩৫-৩৭টি গরু জবাই হচ্ছে। এতে করে কেজিতে লাভ কম আসলেও সব মিলিয়ে মাংস বিক্রি করে আগের তুলনায় অনেক বেশি লাভ হচ্ছে।
তবে খলিলের মাংসের মান খারাপ উল্লেখ করে সুপারশপ মিনা বাজারের প্রতিনিধি জানান, কদিন আগে খলিলের থেকে পাইকারি মূল্যে মাংস কিনে এনে দেখা যায়, মাংসের তুলনায় চর্বির পরিমাণ বেশি। এছাড়া মাংসের মানও ভালো না।
খলিলের এলাকার আরেক মাংস বিক্রেতা হাজী মিয়া বলেন, খলিল যেভাবে মাংস বিক্রি করে তা আমাদের ব্যবসার নীতির পরিপন্থী। যারা এলাকার মাংসের ক্রেতা তারা খলিলের দোকানের সস্তা মাংস না খুঁজে, ভালো মানের মাংস খোঁজেন। কদিন আগেও একজনের কাছে ১০০ কেজি মাংস বিক্রি করেছি। সে জানিয়েছে, খলিলের থেকে সস্তায় খারাপ মানের মাংস নেয়ার থেকে, বেশি দাম দিয়ে ভালো মাংস নেয়া উচিত।
ভোক্তা-অধিকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে এ ব্যবসায়ী বলেন, ভোক্তা-অধিকার পারে শুধু ছোট ব্যবসায়ীদের জরিমানা করতে। বড় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।
খলিল বলেন, ‘আমার থেকে যারা মাংস কেনে তারা জানে আমি ভালো মাংস দিই, নাকি খারাপ। মাংসের মধ্যে অযথা চর্বি কখনোই যোগ করি না আমি।’
খলিল প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, এ কয়দিন মাংস বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে খলিল। দেখা যাক, কতদিন সে এই দামে মাংস বিক্রি করতে পারে।
ব্যবসায়ীদের উসকানিদাতা হিসেবে রবিউল আলমের নাম উল্লেখ করে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান বলেন, মাংস ব্যবসায়ী সমিতির নিবন্ধন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয়নি। আমি বহুকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছি, সেখানেও কোনোদিন তাদের সভাপতিকে দেখিনি।
এদিকে মাংস ও চর্বির অনুপাতের দ্বন্দ্ব নিরসনে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ) সেমিনারে, মাংস এবং চর্বির অনুপাত ঠিক করে দেয়ার প্রস্তাব করে। অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, মাংস, চর্বি এবং হাড়ের অনুপাত ঠিক করে দিলে এ ধরণের বিতর্কের সমাধান হবে।
মাংসের দাম নিয়ে ভোক্তা-অধিকার জানিয়েছে, বর্তমানে ৮০০ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রি করলে প্রতি কেজিতে ১০০-১৫০ টাকা লাভ করেন ব্যবসায়ীরা। মাংসের দাম কোনোভাবেই ৭০০-৮০০ টাকা হতে পারে না।
ভোক্তার মহাপরিচালক জানান, ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং মাংস ব্যবসায়ী সমিতি বুধবার ৬ ডিসেম্বর একসঙ্গে বসে মাংসের দাম নির্ধারণ করবে। পরে ভোক্তা-অধিকার তাদের সঙ্গে আলোচনা করে মূল দাম নির্ধারণ করে পরদিন সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেবে।
এম.কে
০৪ ডিসেম্বর ২০২৩