নিউজ ডেস্ক: সাত বছর কোমায় থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজাকে পদোন্নতি দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) শয্যাশয়ী তাছাওয়ার রাজাকে গত ১৩ অক্টোবর কর্নেল পদমর্যাদার ব্যাজ পরিয়ে দেওয়া হয়।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার ২০১৩ সালের ১১ মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ঢাকা সিএমএইচে ভর্তির পর ওই বছরের মার্চে তাকে থাইল্যান্ডে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বেশ কয়েকবার তার অস্ত্রোপচারও হয়েছে, তবে চেতনা ফেরেনি।
সিএমএইচের ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ মজুমদার সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তাছাওয়ার যে সমস্যায় ভুগছেন সেটাকে হাইপোক্সিক ইশকেমিক ইনজুরি টু ব্রেইন ইফেক্টস বলা হয়। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তার ব্রেইনই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এই সমস্যা হয়।
২০তম বিএমএ লং কোর্সের তাছাওয়ার রাজা ১৯৬৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিন দশকের চাকুরি জীবনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনসহ বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিখ্যাত মরমী কবি ও বাউল শিল্পী হাছান রাজার বংশধর বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন।
এই পদোন্নতিতে সন্তোষ জানিয়ে তার স্ত্রী মোসলেহা মুনীরা রাজা সাংবাদিকদের বলেন, আমি চিন্তাও করিনি তাকে এই সন্মাননা দেওয়া হবে। তবে এটা তার (তাছাওয়ার) একটা অর্জন। সবাই জানে সে একজন ভালো নামকরা অফিসার। পদোন্নতির ঠিক এক মাস আগে সে অসুস্থ হয়ে যায়। এখন তাকে পদ্দোন্নতি দেওয়ায় আমরা সেনাবাহিনীর কাছে কৃতজ্ঞ। পদোন্নতি পাওয়ায় সেনাবাহিনী থেকে তার বিদায়টা অত্যন্ত সন্মানের হবে।
তিন দশকের চাকুরি জীবনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনসহ বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব পালন করেছেন তাছওয়ার। স্বামীর চিকিৎসায় সিএমএইচ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পাওয়ার কথা জানান তিনি।
দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে তাছওয়ারের। তিনি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন বলে আশায় আছেন স্ত্রী মোসলেহা মুনীরা রাজা।
তাছওয়ারের শারীরিক অবস্থা নিয়ে সিএমএইচের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক সাংবাদিকদের বলেন, তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল লম্বা সময় ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে। পুরো পক্রিয়ার সময় ব্রেইনের সার্কুলেশনটা ৫ মিনিটের বেশি বন্ধ থাকে। ৩ মিনিট যদি হার্ট বন্ধ থাকে ব্রেইনে যদি সার্কুলেশন না যায় তখন কিছু পরিবর্তন ঘটতে থাকে। ৫ মিনিট পরে যে পরিবর্তন আসে এগুলো স্থায়ী হতে থাকে। এই পরিবর্তনগুলো ছয় মাস একই রকম থাকে, এটা তখন স্থাযী হয়ে যায়। এই ছয় মাস পরে খুব বেশি আর আশা করা যায় না।
তাছওয়ার রাজার হার্ট ফিরলেও ব্রেইন ফিরে আসেনি জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, তার হার্ট অ্যাটাকের পুরো পক্রিয়ার সময় ব্রেইনের সার্কুলেশনটা ৫ মিনিটের বেশি এবং ১৫ মিনিটের কম বন্ধ ছিল। আমরা বিভিন্নভাবে তার হার্টকে সচল করতে পেরেছি, কিন্তু ওই সময়টিতে মানে মাঝের এই সময়টিতে ব্লাড প্রেসার ছিল না। ব্লাড প্রেসার না থাকার কারণে ব্রেইন হাইপোকসিয়া হয়। ব্রেইন চলে অক্সিজেন ও গ্লুকোজ দিয়ে। ব্লাড সাপ্লাই বন্ধ থাকলে এই দুইটা পায় না। তখন তার ব্রেইনের কিছু ক্ষতি হয়। ৩ মিনিট পরে যে ক্ষতি হওয়া শুরু হয় ৫ মিনিট পরে তা স্থায়ী হয়।
তিনি আরও জানান, এখন তার ব্রেইনের নিচের অংশ ভালো। তবে বাইরের অংশগুলো যা চিন্তা-চেতনার সঙ্গে জড়িত সেগুলো ফিরে আসেনি। জীবন চালানোর জন্য শরীরে প্রটেকটিভ সিস্টেম ভালো থাকলেও, হাত-পা নাড়াচাড়া করলেও তার সেন্স সে রকম নেই।
সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা তাছাওয়ার পাকিস্তানের বেলুচিস্তান বিশ্ববদ্যালয় থেকে এমএসসি পাশ করেন ২০০৪ সালে।
দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজা তার পূর্ব পুরুষ হাছন রাজার কর্মময় জীবন নিয়ে ‘হাছন রাজা সমগ্র’, মেজর জেনারেল এম এ জি ওসমানীকে নিয়ে ‘ও জেনারেল মাই জেনারেল’, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসসহ বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন।
প্রায় ৩১ বছরের চাকুরি জীবনে ১৯৯৬ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অধীন ইরাক-কুয়েত এবং ২০০৭ সালে সুদানে শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেন তাছওয়ার।
১৬ অক্টোবর ২০২০
সূত্র: বিডিনিউজ
এনএইচ