সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে প্রায় অর্ধশত নারীর সঙ্গে ‘রোমান্স স্ক্যাম’ ও সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে সিটিটিসি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। গ্রেফতারকৃতের নাম মো. বেনজির হোসেন।
সোমবার ২৭ নভেম্বর দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, প্রতারক বেনজিরের ফেসবুকে ভুয়া জৌলুসপূর্ণ প্রোফাইল তৈরি করে এই প্রতারক নিঃসঙ্গ নারী ভিকটিমদের টার্গেট করে প্রথমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করতেন। পরে বিয়ের প্রলোভন ও সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে বছরের পর বছর ধরে। প্রথমে বিশ্বাস তৈরি করে সেই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে লাখ লাখ টাকা এমনকি কোটি টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছে এই প্রতারক।
প্রতারক বেনজির হোসেন নড়াইল জেলায় নিজের বাড়িতে থেকে প্রতারণার কাজ করলেও ক্যাশ আউট করতেন তার বাড়ি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে যশোর ও খুলনা জেলায় বিভিন্ন নগদ ক্যাশ আউট পয়েন্টে। তার প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিম এবং নগদ নাম্বারের রেজিস্ট্রেশনে ব্যবহৃত এনআইডি অন্য ব্যক্তির নামে। ক্যাশ আউট করার সময় প্রতারক বেনজির হোসেন পরিচয় ও চেহারা গোপন করার জন্য ক্যাপ, সানগ্লাস ও মুখে মাস্ক পড়ে থাকত।
দৃশ্যমান কোনো আয়ের উৎস না থাকা সত্ত্বেও বেনজির হোসেন গত কয়েক বছরে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অর্থ দিয়ে বিপুল অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে।
গত কয়েক বছরে প্রতারণার অর্থে ৫ বিঘা জমির ওপর বাগান বাড়িতে দুই তলা ডুপ্লেক্স ভবন, অনুমানিক ৩ বিঘা জমির ওপর সম্প্রতি কেনা বিলাসবহুল ভবন, নড়াইলে বিভিন্ন জায়গায় অনুমানিক ২০ বিঘা মাছের খামার, নড়াইলে বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ভবন, যশোর ও সাভারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবনসহ বিপুল ব্যাংক ব্যালান্স গড়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, বেনজির এইচএসসি পাস করে একটা চাকরিতে যোগ দেন। চুরির দায়ে সেই চাকরি চলে যায় তার। সে খুবই নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার পিতা সেই অঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারে তালের শাস বিক্রি করত। তবে বেনজির খুব মেধাবী ছিল। তার বৈধ কোনো পেশা নেই। তার মূল পেশাই প্রতারণা করা। এলাকার সাধারণ মানুষ সন্দেহ করলেও নানা অপরাধের জড়িত থাকায় কেউ কিছু বলতেন না।
তিনি বলেন, একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি। তার প্রতারণার শিকার অসংখ্য নারী। আমরা এরই মধ্যে ৫০ জনকে পেয়েছি যারা বেনজিরের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তার প্রতারণার শিকার হয়ে এক নারী আত্মহত্যাও করেছেন। ভিকটিমদের কাছ থেকে আপত্তিকর ছবিও সংগ্রহ করতেন। অনেক ভিকটিম মানসম্মানের ভয়ে প্রকাশও করতে চান না।
সূত্রঃ সিটিটিসি
এম.কে
২৭ নভেম্বর ২০২৩