অনিয়মিত অভিবাসন ইস্যুতে টালমাটাল নেদারল্যান্ডসের রাজনীতি৷ ভেঙে গেছে জোট সরকার৷ এমন পরিস্থিতিতে অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে এবার সড়কে নেমেছেন দেশটির নাগরিকেরা৷ পুলিশের বদলে তারা নিজেরাই করেছেন গাড়ি তল্লাশি৷ এমন পদক্ষেপ আইন বহির্ভূত বলে সতর্ক করে দিয়েছে ডাচ সরকার৷
গত রোববার দেশটির বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, শনিবার সন্ধ্যায় নিরাপত্তাকর্মীদের মতো জ্যাকেট গায়ে দিয়ে এবং টর্চলাইট হাতে নিয়ে একদল ডাচ নাগরিক জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনির হারেন থেকে নেদারল্যান্ডসের টের অ্যাপেলে শরণার্থীদের কেন্দ্রীয় অভ্যর্থনা কেন্দ্রের দিকে চলমান একটি ফেডারেল মোটরওয়েতে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করছেন৷ এরকম বেশ কয়েকটি ফুটেজও বিভিন্ন মাধ্যমে এসেছে৷
ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গেই ভারপ্রাপ্ত অভিবাসনমন্ত্রী ডেভিড ফান ভিল আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন,‘‘আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা অবশ্যই কমাতে হবে৷ আর তাই, আমরা কঠোর আশ্রয় আইন এবং আরো কার্যকর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের পক্ষে কথা বলছি৷’’
অভিবাসনমন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘হতাশার জায়গাটা আমরা বুঝতে পারছি৷ কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না৷ পুলিশ এবং সীমান্ত পুলিশকে তাদের কাজটা করতে দিন৷ আইন মেনে চলুন৷’’
কঠোর অভিবাসন নীতি গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় নেদারল্যান্ডসের জোট সরকার থেকে বের হয়ে গেছে প্রধান শরিক দল পার্টি ফর ফ্রিডম (পিভিভি)৷ ৩ জুন দলটির নেতা ও কট্টর অভিবাসন বিরোধী রাজনীতিবিদ গিয়ার্ট ভিল্ডার্স সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন৷ এরপরই ভেঙে যায় দেশটির সরকার৷ নিজ পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও ভোটের আগ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী ডিক শুফ৷ তবে নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে তার দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি৷ বিশ্লেষকেরা বলছেন, আগামী অক্টোবর বা নভেম্বরের আগে ভোট হচ্ছে না৷
অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ডাচ নাগরিকদের রাস্তায় নেমে আসাকে স্বাগত জানিয়েছে ইসলামবিরোধী নেতা গিয়ার্ট ভিল্ডার্স৷ ডাচ নাগরিকদের কেউ কেউ ‘আইন নিজের হাতে তুলে নিলেও’ বিষয়টিকে ‘‘চমৎকার’’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি৷
ভিল্ডার্স বলেন, ‘‘সীমান্তের সবখানেই এমনটা হওয়া উচিত৷’’
প্রধানমন্ত্রী যদি অতি দ্রুত সীমান্ত তল্লাশিতে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করেন, তাহলে ‘‘আমাদের নিজেদেরই এটি করা উচিত’’, বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি৷
ভিল্ডার্স আরো জানিয়েছেন, এরপর দেশটির নাগরিকেরা সীমান্ত তল্লাশির উদ্যোগ নিলে তিনি সেখানে আনন্দের সঙ্গে অংশ নেবেন৷
ডাচ পুলিশ এবং ওয়েস্টারভোল্ডের সীমান্ত পৌরসভা জানিয়েছে, নাগরিকেরা গাড়ি থামাবেন, এটা অবৈধ৷ এই কাজটি শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা করবেন৷
এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘এই ধরনের কর্মকাণ্ড সড়কে অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করে৷’’
‘‘এসব একেবারেই অগ্রহণযোগ্য’’, বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে৷
কিন্তু ডাচ সংবাদপত্রগুলোতে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশটির বিভিন্ন সীমান্তে তল্লাশি শুরু করতে নাগরিকদের আহ্বান জানানো হয়েছিল৷
সীমান্ত তল্লাশির এই ঘটনায় নেদারল্যান্ডসের ১২ জন নাগরিক জড়িত বলে জানা গেছে, তাদের সবাই পুরুষ৷ অভিবাসন ইস্যুতে তারা বেশ ক্ষুব্ধ এবং অসন্তুষ্ট বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো৷
সংবাদপত্রগুলোতে দেয়া সাক্ষাৎকারে সীমান্ত তল্লাশিতে অংশ নেয়া এক ডাচ নাগরিক বলেছেন, ‘‘কিছুই করা হচ্ছে না৷ তাই আমরা নিজেরাই এটি করব৷’’
নেদারল্যান্ডস সীমান্তে যানবাহন তল্লাশিতে নাগরিকদের অংশ নেয়ার ঘটনায় কড়া সমালোচনা করেছেন প্রতিবেশী রাষ্ট্র জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও জার্মান ফেডারেল পুলিশ ইউনিয়নের প্রধান৷ তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি এমন ঘটনা বন্ধে দেশটির সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ চেয়েছেন তারা৷
জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডোব্রিন্ডট মঙ্গলবার (১০ জুন) বলেছেন, “নাগরিকের এমন পদক্ষেপ নেয়ার কোনো আইনি ভিত্তি নেই৷ আমি মনে করি, যদি এই ঘটনাটি চলতে থাকে, তবে আমাদের অবশ্যই ভাবতে হবে। আমি আশা করছি, কর্তৃপক্ষ এই ধরনের ব্যবস্থা বন্ধ করবেন৷’’
জার্মানির ফেডারেল পুলিশ ইউনিয়নের প্রধান আন্ড্রিয়াস রসকফ বলেছেন, ডাচ কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া ‘‘একটু নমনীয়’’ ছিল৷ উত্তেজনা এড়াতে আরো জোরালো পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷
রসকফ বলেন, ‘‘এটা স্পষ্টভাবে জানানো উচিত, আইনি অধিকার ছাড়া নাগরিকদের হস্তক্ষেপ করার, পর্যবেক্ষণ করার এবং শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা ও পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাজ সম্পাদন করার কোনো অধিকার নেই৷’’
ডাচ ব্রডকাস্টার আরটিএল জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে এসে কোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের আলামত খুঁজে পায়নি পুলিশ৷
সূত্রঃ এপি/ রয়টার্স
এম.কে
১৩ জুন ২০২৫