25.2 C
London
July 10, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

অবৈধ অভিবাসীরা কেন যুক্তরাজ্যকে বেছে নিতে চায় তাদের ঠিকানা হিসাবে তা নিয়ে চলছে গবেষণা

যুক্তরাজ্যে ছোট নৌকায় করে অভিবাসন বন্ধে নতুন ও উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণে একমত হয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। দুই দেশের মধ্যে একাধিকবার আলোচনা হলেও আশ্রয়প্রার্থীদের আগমন ঠেকাতে কার্যকর অগ্রগতি হয়নি।

ব্রিটেন ইতিমধ্যে ফ্রান্সকে কয়েকশো মিলিয়ন পাউন্ড দিচ্ছে যেন ফরাসি উপকূল থেকে নৌকায় অভিবাসীদের পাড়ি ঠেকানো যায়। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকেই নৌপথে যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসীর সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়েছে।

ফরাসি সরকার দাবি করছে, অভিবাসীদের কাছে যুক্তরাজ্য আকর্ষণীয় কারণ সেখানে তারা কাগজপত্র ছাড়াই অবৈধভাবে কাজ করতে পারে। একে “ইনফরমাল ইকোনমি” বলা হয়, যার আকার নির্ধারণ করা কঠিন হলেও ২০২২ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যুক্তরাজ্যে এর পরিমাণ মোট অর্থনীতির ১১ শতাংশ। ফ্রান্সে এই হার ১৪ শতাংশ এবং ইউরোপীয় গড় ১৭ শতাংশ।

এই অবৈধ শ্রমবাজারই অনেক অভিবাসীর জন্য একটি ‘পুল ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠেছে বলে স্বীকার করেছে ব্রিটিশ সরকারও। গৃহমন্ত্রী ইয়েভেট কুপার জানিয়েছেন, অবৈধভাবে কর্মরত অভিবাসীদের ধরতে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। এক বছরে ১০,০০০-এর বেশি অভিযান চালিয়ে ৭,১৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি।

একই সময়ে অবৈধ নিয়োগদাতাদের ওপর ২,১৭১টি জরিমানা আরোপ করা হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ১১১ মিলিয়ন পাউন্ড। হোম অফিস জানিয়েছে, রেস্তোরাঁ, নেইল বার এবং নির্মাণ খাতে এসব অভিযান বেশি হয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ লেবার এমপিরা দেশের কর্মসংস্থান খাতে ডিজিটাল আইডি চালুর দাবি তুলেছেন, যাতে অবৈধ নিয়োগ বন্ধ করা যায়। যদিও ইউরোপের অনেক দেশে ডিজিটাল আইডি থাকলেও সেখানেও অবৈধ অর্থনীতির প্রসার রয়ে গেছে।

আইনি পদ্ধতিতে কাজের সুযোগে যুক্তরাজ্য অনেক পিছিয়ে। একজন আশ্রয়প্রার্থীকে আবেদন করার পর কমপক্ষে এক বছর অপেক্ষা করতে হয়। এরপর সীমিত কিছু পেশায় কাজের অনুমতি পাওয়া যায়। তুলনায় ফ্রান্সে ৬ মাস ও ইতালিতে মাত্র ৬০ দিনের মধ্যেই কাজের অনুমতি পাওয়া যায়।

ভাষাগত সুবিধা, পারিবারিক সংযোগ এবং যুক্তরাজ্য সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণাও একে জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত করেছে বলে মনে করেন অভিবাসন বিশ্লেষকরা। এর বাইরে অনেক সময় মানব পাচারকারী চক্রও ‘ইংল্যান্ডে স্বপ্নের জীবন’ গড়ার প্রচারণা চালায়।

ব্রিটেনে আশ্রয়প্রার্থীরা রাষ্ট্রীয় ভাতা খুবই সীমিত পরিমাণে পান। যারা নিজেরা রান্না করতে পারেন, তারা সপ্তাহে £৪৯ এবং ক্যাটারিং সুবিধাপ্রাপ্তরা মাত্র £৯.৯৫ পান। তবে NHS-সহ চিকিৎসা, শিশুদের শিক্ষাসুবিধা ও কিছু সামাজিক সহায়তা তারা পান।

গবেষণায় দেখা গেছে, ভাতা বা সুবিধা নয়, বরং কোথায় শরণার্থী মর্যাদা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং পরিবার নিয়ে আসার সুযোগ বেশি—এসবই সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে। সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ কঠোর হলে অভিবাসনের সংখ্যা কমে, কিন্তু ভাতা কমলে খুব একটা প্রভাব পড়ে না।

সবশেষে, গবেষকরা বলছেন, অভিবাসীদের আগমনে মূল ভূমিকা রাখে ‘পুশ ফ্যাক্টর’—যেমন যুদ্ধ, দমন-পীড়ন, অনিশ্চয়তা। এই কারণেই কেবল যুক্তরাজ্যে নয়, বরং পুরো ইউরোপেই আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

এই বাস্তবতায় ফ্রান্স-যুক্তরাজ্য যৌথভাবে সমাধানের পথ খুঁজলেও, অভিবাসীদের আকর্ষণ বন্ধ করা কিংবা মানব পাচার চক্র ভেঙে দেওয়া—এই চ্যালেঞ্জ সহজে কাটবে না বলেই ধারণা।

সূত্রঃ বিবিসি

এম.কে
১০ জুলাই ২০২৫

আরো পড়ুন

১ জানুয়ারি থেকে ইইউতে প্রবেশ নিষিদ্ধ হতে পারে ব্রিটিশদের জন্য

ছোট নৌকা ঠেকাতে ফরাসি পুলিশের ‘ছুরি অভিযান’কে সমর্থন ব্রিটিশ সরকারের

আভা হোয়াইট হত্যাকাণ্ড: ভ্যানের ছবি প্রকাশ করল পুলিশ