মিয়ানমারের সাড়ে ৫ কোটি মানুষের অর্ধেক এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেওয়ার তিন বছর পরের এ হার ২০১৭ সালের তুলনায় দ্বিগুণ। দেশজুড়ে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে জান্তার লড়াই, ব্যাপক বেকারত্ব ও মৌলিক জিনিসের আকাশচুম্বী দামে বিপর্যস্ত দেশটির মানুষ। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে কিডনি বিক্রি করছেন তারা। ফেসবুকে কিডনি কেনাবেচার বেশ কয়েকটি গ্রুপও রয়েছে। কয়েক বছরে দেশটিতে অঙ্গ বিক্রির পোস্টগুলো খুব সাধারণ হয়ে উঠেছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক বছরব্যাপী তদন্তে দেখা গেছে, মিয়ানমারের ঋণে জর্জরিত অনেক মানুষ বাধ্য হয়ে ধনীদের কাছে কিডনি বিক্রি করছেন। এজেন্টদের সহায়তার নথি জাল করে পরিবারের সদস্য সেজে ক্রেতা-বিক্রেতা ভারতে গিয়ে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করছেন।
সিএনএন অন্তত তিনটি বার্মিজ ভাষার ফেসবুক গ্রুপে অঙ্গ বিক্রির প্রস্তাবের পোস্ট খুঁজে পেয়েছে। এমনই একজন পণ্য ডেলিভারির চাকরি করা মং মং (ছদ্মনাম)। বিরোধী গোষ্ঠীর জন্য পণ্য পরিবহনের সন্দেহে ২০২২ সালের শেষ দিকে তাকে আটক করেছিল সামরিক জান্তা। কয়েক সপ্তাহ তাকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। এ সময় সংসার চালাতে তার স্ত্রীকে ঋণ করতে হয়েছিল। অবশেষে মং মুক্তি পেলেও চাকরি হারান। তার পরিবার ঋণে ডুবে গিয়েছিল। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে তিনি নিজের কিডনি বিক্রির প্রস্তাব দেন।
মং বলেন, ‘সেই মুহূর্তে আমি অনুভব করেছি, জীবন খুব কঠিন। টাকার জন্য ডাকাতি বা খুন করা ছাড়া আমার বাঁচার কোনো উপায় নেই। আমার স্ত্রী আত্মহত্যার চিন্তাও করেছিল। কিন্তু ছোট্ট মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে আমাদের বেঁচে থাকতে হয়েছে।
কয়েক মাস পর ২০২৩ সালের জুলাইয়ে মং ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারির জন্য ভারত যান। এক ধনী চীনা বার্মিজ ব্যবসায়ী ১ কোটি বার্মিজ কিয়াট (৩ হাজার ৮০ ডলার) দিয়ে তার কিডনি কিনেছিলেন। এ অর্থ মিয়ানমারের শহুরে পরিবারের গড় বার্ষিক আয়ের প্রায় দ্বিগুণ।
সূত্রঃ সিএনএন
এম.কে
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪