ইউরোপীয় মানবাধিকার সনদের ব্যাখ্যা নতুনভাবে বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে নয়টি ইউরোপীয় দেশের উদ্যোগের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করেছেন কাউন্সিল অব ইউরোপের মহাসচিব এলাঁ বেরসে। ইতালি ও ডেনমার্কের নেতৃত্বে পাঠানো একটি যৌথ চিঠিতে বিদেশি অপরাধীদের সহজে বহিষ্কার এবং অভিবাসন ইস্যুতে আরও সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দাবি করা হয়।
এই চিঠিতে অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, চেক প্রজাতন্ত্র, এস্টোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ডের নেতারাও স্বাক্ষর করেন। এতে বলা হয়, “যেটা একসময় সঠিক ছিল, তা ভবিষ্যতের সমস্যার সমাধান নাও হতে পারে।”
এর জবাবে এলাঁ বেরসে বলেন, “আলোচনা গ্রহণযোগ্য, কিন্তু বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক চাপ অগ্রহণযোগ্য। মানবাধিকার রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যদি রাজনৈতিক চাপে নতি স্বীকার করে, তবে আমরা আমাদের স্থিতিশীলতাই হারাবো।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতই এখন একমাত্র আন্তর্জাতিক আদালত যা রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করছে—এটি কখনোই দুর্বল করা উচিত নয়।
এর আগে ইউরোপীয় আদালত অভিবাসন ইস্যুতে ইতালি ও ডেনমার্কের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল। ২০১৬ সালে তিউনিসীয় শরণার্থীদের আটকের ঘটনায় ইতালিকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। আবার ২০২১ সালে এক সিরীয় শরণার্থীর পরিবার পুনর্মিলনের অধিকার অস্বীকার করায় ডেনমার্কের বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হয়।
এদিকে, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩০টিরও বেশি মামলায় অভিযোগ রয়েছে যে তারা অভিবাসীদের বেলারুশে ‘পুশব্যাক’ করেছে। লাটভিয়া সীমান্তে ২৬ জন কুর্দি ইরাকি নাগরিক অভিযোগ করেছেন, তাদের জঙ্গলে ফেলে রাখা হয় এবং কোনো খাবার, পানি বা আশ্রয় দেওয়া হয়নি।
বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো ও পোল্যান্ডের দাবি, বেলারুশ অভিবাসীদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ইউরোপকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তারা এই পরিস্থিতিকে ‘হাইব্রিড যুদ্ধ’ বলে বর্ণনা করেছে।
নয়টি দেশ এর আগে ইইউতে অভিবাসন নীতি কঠোর করার উদ্যোগ নিয়েছিল। ২০২৪ সালে তারা ‘রিটার্ন হাব’ নামে একটি কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়, যেখানে আশ্রয় প্রত্যাখ্যাত ব্যক্তিদের ফেরত পাঠানো হবে। তবে বাস্তবে এখনো কোনো কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি।
২০২২ সালে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত যুক্তরাজ্যের রুয়ান্ডা পাঠানোর পরিকল্পনায় বাধা দিলে তা নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এরপর বরিস জনসন ইউরোপীয় সনদ থেকে যুক্তরাজ্যকে বের করে আনার জন্য গণভোটের আহ্বান জানান।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২৭ মে ২০২৫