TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

“অভিবাসনে বড় রদবদলঃ যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হতে নতুন শর্ত, কেয়ার খাতে বিদেশি নিয়োগ বন্ধ”

যুক্তরাজ্যে বিদেশি কর্মীদের সঙ্গে আসা প্রাপ্তবয়স্কদের ইংরেজি ভাষা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে এবং কেয়ার হোমগুলো বিদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে নিষিদ্ধ করা হবে — এ ধরনের একগুচ্ছ নতুন পদক্ষেপ আগামী সোমবার ঘোষণা করবেন কিয়ার স্টারমার, যার মাধ্যমে অভিবাসন ব্যবস্থাকে “আরও কড়া” করার কথা জানাবেন তিনি।

সম্প্রতি রিফর্ম ইউকে-র সমর্থন বেড়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলবেন, বিদেশ থেকে আগতদের “আমাদের ভাষা শেখার প্রতিশ্রুতি” দিতে হবে এবং তিনি এমন এক “ভাঙা” ব্যবস্থার সংস্কার করার অঙ্গীকার করবেন, যা ব্যবসায়ীদের “কম বেতনের কর্মী আনার” সুযোগ দেয়।

সরকার আরও জানাবে, বিদেশি কর্মীরা আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাঁচ বছর পর যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হতে আবেদন করতে পারবে না, বরং তাদেরকে ১০ বছর অপেক্ষা করতে হবে।

এই ঘোষণা লেবার পার্টির বহু প্রতীক্ষিত অভিবাসন সংক্রান্ত হোয়াইট পেপারের অংশ, যা সোমবার পার্লামেন্টে উপস্থাপন করা হবে। এটি এমন এক সময় আসছে যখন এই মাসের স্থানীয় নির্বাচনে নাইজেল ফারাজের দল রিফর্ম ইউকে সাফল্য পেয়েছে।

এছাড়াও হোয়াইট পেপারে থাকছে বিদেশি অপরাধীদের বেশি সংখ্যায় বহিষ্কারের পরিকল্পনা, নিয়োগদাতাদের নিজস্ব কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে বাধ্য করা এবং যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করা দক্ষ কর্মীদের জন্য ডিগ্রিধারী হওয়া বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত।

২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ১২ মাসে যুক্তরাজ্যে নিট অভিবাসনের সংখ্যা ছিল ৭২৮,০০০। আগের কনজারভেটিভ সরকারের সময় এ সংখ্যা ৯০০,০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলবেন, “অভিবাসন ব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্র — কর্ম, পরিবার ও শিক্ষা — আরও কঠোর করা হবে যাতে আমরা আরও নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি।”

জনপ্রিয়তাবাদী দলগুলোর মতো ভাষা ব্যবহার করে স্টারমার বলবেন, “এই হোয়াইট পেপার নিশ্চিত করবে যে এই দেশে স্থায়ী বসবাস একটি অধিকার নয়, বরং একটি অর্জিত সুযোগ। আর যারা আমাদের দেশে আসবে, তাদের ভাষা শেখা ও সমাজে একীভূত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।”

বিদেশি কর্মীদের সঙ্গে আসা প্রাপ্তবয়স্কদের ইংরেজি A1 স্তরের একটি অনলাইন পরীক্ষা পাস করতে হবে, যেখানে দৈনন্দিন কথাবার্তা ও ব্যক্তিগত বিষয়ে সহজ প্রশ্নোত্তরের সক্ষমতা যাচাই করা হবে।

যদি কর্মীরা ভিসার মেয়াদ বাড়াতে চায়, তাহলে তাদের পরিবারের সদস্যদের আরও উন্নত A2 স্তরের পরীক্ষা পাস করতে হবে। আর স্থায়ী বাসস্থানের আবেদন করতে চাইলে তাদের B2 স্তরের পরীক্ষা দিতে হবে, যেখানে জটিল বিষয়েও স্বচ্ছভাবে মত প্রকাশ করার দক্ষতা প্রয়োজন।

সূত্র জানিয়েছে, ভবিষ্যতে প্রতিটি অভিবাসন রুটেই ইংরেজি ভাষা দক্ষতার মানদণ্ড আরও বাড়ানো হবে, এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আসা ব্যক্তিরাও অনুমতি পাওয়ার আগে ভাষা পরীক্ষায় বসতে বাধ্য হতে পারেন।

হোম সেক্রেটারি ইয়েভেট কুপার রবিবার বলেছেন, প্রস্তাবিত হোয়াইট পেপারের অংশ হিসেবে কেয়ার ওয়ার্কার ভিসা বন্ধ করে দেয়া হবে।

বিবিসির লরা কুয়েনসবার্গের প্রশ্নে কুপার বলেন, কেয়ার হোমগুলো তাদের অতীত অভিজ্ঞতা থাকা বিদেশি কর্মীদের মধ্য থেকেই নিয়োগ দিতে পারে, যাদের অনেকেই “অসাধু নিয়োগকারীদের” দ্বারা শোষণের শিকার হয়েছেন।

তারা তাদের বিদ্যমান ভিসাও বাড়াতে পারবে। অন্যান্য ভিসাধারী যারা ইতিমধ্যেই যুক্তরাজ্যে রয়েছেন, তাদের মধ্য থেকেও নিয়োগ দিতে পারবে। তবে আমরা মনে করি বিদেশ থেকে সরাসরি কেয়ার ওয়ার্কার নিয়োগের সময় শেষ।

কুপার নিট অভিবাসনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেননি, তবে তিনি বলেন, ভিসার কিছু পরিবর্তনের ফলে আগামী এক বছরে “৫০,০০০ কম দক্ষ ভিসা” ইস্যু হতে পারে।

বর্তমানে বিদেশি অপরাধীদের কেবল তখনই হোম অফিসে রিপোর্ট করা হয় যখন তারা কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, এবং সাধারণত এক বছরের সাজাপ্রাপ্তদেরই বহিষ্কারের জন্য বিবেচনা করা হয়।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশি নাগরিক যারা যেকোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তাদের তথ্য হোম অফিসে পাঠানো হবে এবং অনেক বিস্তৃত ক্ষমতা ব্যবহার করে অপরাধীদের দ্রুত বহিষ্কার করা হবে, বিশেষ করে যারা সদ্য এসেছে এবং ইতিমধ্যে অপরাধ করেছে।

যেসব বিদেশি নাগরিক যৌন অপরাধ রেজিস্টারে নাম লেখাবে, তাদের সবাইকে ‘গুরুতর অপরাধী’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং তারা আর যুক্তরাজ্যে আশ্রয় পাওয়ার যোগ্য হবেন না।

নতুন প্রস্তাবনার মধ্যে আরও থাকবে — যদি কোনো কোম্পানি বারবার প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয় যে তারা ব্রিটেনে বসবাসরত কর্মীদের নিয়োগে যথাযথ চেষ্টা করেছে, তাহলে তাদের বিদেশি কর্মী স্পনসর করার অধিকার কেড়ে নেয়া হতে পারে। সরকার এর মধ্যে টার্গেট করছে প্রকৌশল ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত।

এছাড়া, গ্র্যাজুয়েট স্তরের নিচের চাকুরির ক্ষেত্রে কর্মভিসার মেয়াদ কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ করা হবে।

যুক্তরাজ্যে পড়তে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্যও ডিগ্রি শেষ করার পর থেকে থাকার নিয়ম আরও কঠোর করা হবে।

সরকার আরও একটি “লেবার মার্কেট এভিডেন্স গ্রুপ” গঠন করবে, যেখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান, দক্ষতা সংস্থা, সরকার ও মাইগ্রেশন অ্যাডভাইসরি কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা থাকবেন। হোম অফিস বলেছে, “এটি বিদেশি শ্রমের অতিনির্ভরতা এবং দেশীয় দক্ষতায় বিনিয়োগের ঘাটতি চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে।”

১ মে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনে রিফর্ম ইউকে ১০টি কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে এবং এখন জাতীয় ভোটের জরিপে এগিয়ে আছে।

এই প্রস্তাবনার প্রতিক্রিয়ায় রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী এনভার সলোমন বলেন, “অভিবাসন নিয়ে জনমত বিবেচনায় নেওয়া অবশ্যই দরকার, তবে জনগণ চায় নীতিনিষ্ঠ ও দক্ষ প্রশাসন, কেবল চমকপ্রদ কথাবার্তা নয়।”

কেয়ার ইংল্যান্ড, যা কেয়ার হোমগুলো প্রতিনিধিত্ব করে, কেয়ার ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্তকে “দুর্বল খাতের জন্য একটা কঠিন আঘাত” বলে বর্ণনা করেছে। ইউনিসন নামের একটি ইউনিয়ন বলেছে, “বিদ্বেষপূর্ণ ভাষা” ব্যবহারই আবেদন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

কেয়ার ইংল্যান্ডের প্রধান নির্বাহী মার্টিন গ্রিন সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা যখন আগেই সংকটে, তখন এই সিদ্ধান্ত আমাদের আরও ধাক্কা দিল।”

“বছরের পর বছর ধরে এই খাত সীমিত সম্পদ, খরচ বৃদ্ধি এবং নিয়োগ সংকটে ভুগেছে,” তিনি বলেন। “আন্তর্জাতিক নিয়োগ কোনো জাদুকরী সমাধান না হলেও, এটি ছিল একটি লাইফলাইন। এখন এটি হঠাৎ কেড়ে নেওয়া, কোনো বিকল্প বা অর্থায়ন ছাড়া, এটা শুধু স্বল্পদৃষ্টির নয় — এটা নিষ্ঠুর।”

ইউনিসনের সেক্রেটারি জেনারেল ক্রিস্টিনা ম্যাকআনিয়া বলেন, “বিদেশি কর্মীদের ছাড়া এনএইচএস এবং কেয়ার খাত অনেক আগেই ভেঙে পড়ত।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
১২ মে ২০২৫

আরো পড়ুন

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইয়ুথ মোবিলিটি স্কিমের প্রস্তাব যুক্তরাজ্যের প্রত্যাখান

বিবিসির সাংবাদিকের স্ত্রী-কন্যা খুন, আটক ১

ইংল্যান্ডে রোগী হস্তান্তরে বিলম্বের কারণে বিপদে পড়ে দিনে হাজারের বেশি রোগী