6.9 C
London
February 23, 2025
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

অলিগার্ক গোষ্ঠীকে ভেঙে দিতে না পারলে সংস্কার সম্ভব হবে নাঃ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

বাংলাদেশে অলিগার্ক গোষ্ঠীকে ভেঙে দিতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে কোনো সংস্কার সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেন অর্থনীতিসংক্রান্ত শ্বেতপত্র প্রণয়ন জাতীয় কমিটির প্রধান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

শনিবার (১৭ নভেম্বর) ঢাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক বিজনেস স্কুল আয়োজিত ‘বাংলাদেশে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার’ শীর্ষক এক সংলাপে এই অর্থনীতিবিদ এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠিত সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাষ্ট্রের মেরামত না হলে দুই পয়সার সংস্কার করে আপনি টিকতে পারবেন না এবং পুরোনো ব্যবস্থা ফিরে আসার পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবেন না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য তিনি আগে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার উপর জোর দেন।

এ সময় তিনি সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের নাম উল্লেখ না করেই বলেন, যার নজরদারি করার কথা ছিল, তিনি এর বারোটা বাজিয়ে চলে গেছেন।

গত দেড় দশকে আর্থিক খাত কীভাবে কিছু রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলাদের মাধ্যমে লুটপাটের শিকার হয়েছে, তার ভয়ংকর বর্ণনা দেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, এই গোষ্ঠী সংস্কারের বিপক্ষে ও দুর্নীতির পক্ষে যোগসাজশ করে একটি অলিগার্ক শ্রেণির উত্থান ঘটিয়েছে।

তিনি বলেন, উন্নয়নের যে বয়ান তৈরি করা হয়েছিল, সেটি বাংলাদেশের অর্থনীতির ইতিহাসে পরিচিতি পাবে অলিগার্ক উত্থানের দশক হিসেবে। অলিগার্কদের তিনি বর্ণনা করেন এভাবে, একটি গোষ্ঠী যারা বেসরকারি খাতের সামগ্রিক স্বার্থে নয়, বরং রাষ্ট্রের দখল নিয়ে নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে এর নীতি প্রণয়নকে প্রভাবিত করেছে।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান বলেন, এই অলিগার্করা কেবল একটি ক্ষেত্রে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেনি। বরং তারা ব্যাংকিং কিংবা জ্বালানি খাত থেকে শুরু করে পুঁজিবাজার এবং সম্ভবত অফশোর ব্যাংকিং ও অবৈধভাবে অর্থ পাচারের সঙ্গে নিজেদের জড়িত করেছে। তারা বাংলাদেশের দুই ফুসফুস—আর্থিক খাত ও জ্বালানি খাত খেয়ে ফেলেছে। তারাই ব্যাংক লুট করেছে, পুঁজিবাজার লুট করেছে, অবৈধপথে বিদেশে অর্থ পাঠিয়েছে। তারাই মেগা প্রকল্পের ঠিকাদার।

আর্থিক খাতের লুটপাটে কীভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিয়ে কথা বলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, যার নজরদারি করার কথা ছিল, তিনি এর বারোটা বাজিয়ে চলে গেছেন। যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি করার কথা, তারাই সবচেয়ে বড় সমস্যার সৃষ্টি করেছে।

সাবেক গভর্নরের বিষয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দিনের বেলা বলেছেন আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) কথা মতো কাজ করছি, রাতের বেলা টাকা ছাপিয়েছি। একদিকে বলছি আইন করছি, অন্যদিকে অব্যাহতি দিয়েছি বিভিন্ন কোম্পানিকে। একদিকে বলছি রিজার্ভ ঠিক আছে, অন্যদিকে রিজার্ভে আসলে ওই টাকা নেই, হিসাবে গন্ডগোল।

সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিস্থিতি কতটা খারাপ হয়েছিল, সে সম্পর্কেও কথা বলেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান। তার কথায়, ‘মাসোহারা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভেতর লোক রেখেছিল অলিগার্করা। এটা তো এখন প্রকাশ্য হচ্ছে।’

আর্থিক খাতের করপোরেট সুশাসনের বিষয়ে দেব্রপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাষ্ট্রমালিকানার ব্যাংকগুলোতে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত যেসব ব্যক্তিকে নিজস্ব লোক হিসেবে পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ করা হয়েছিল, তারা সেখানে বসেই ব্যবসা করেছেন, যার ভাগ আবার অনেকেই পেয়েছেন। এ ছাড়া নতুন যেসব ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তাদের ব্যাংকের মালিক হওয়ার যোগ্যতাই ছিল না।

ব্যাংকিং খাতের আইন প্রণয়নে অলিগার্করা কীভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল, তার উদাহরণ দেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ব্যাংকিং কোম্পানি আইন পাসের সময় সংসদে কেবল একজন দাঁড়িয়ে বললেন, পরিচালকদের পদে থাকার মেয়াদ বাড়াতে হবে, একই পরিবার থেকে আরও বেশি লোক পর্ষদে থাকতে হবে। মাত্র আধা মিনিটের এই বক্তব্যের পর সেটাই সংসদে পাস হলো।

দেব্রপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, অলিগার্করা শুধু নজরদারিতেই নয়, আইন প্রণয়নেও কাজ করেছে। আপনি যদি রাষ্ট্রের কাঠামোর দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন আইন প্রণয়নের সঙ্গে জড়িতরা, নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে জড়িতরা, এমনকি আইন বিভাগের সঙ্গে জড়িতরা—সবাই একত্র হয়ে পুরো দেশকে এখানে নিয়ে এসেছে।

অর্থনীতির পাশাপাশি বাজারে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল করার জন্য অর্থ উপদেষ্টাকে পরামর্শ দিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এটা না করলে সংস্কারের পথে এগোতে সমস্যা হবে, এ ক্ষেত্রে মানুষ ধৈর্য রাখতে পারবে না। তিনি মনে করেন, মুদ্রার বিনিময় হার, সুদের হার ও বাজারের স্থিতিশীল কাজে সমন্বয় থাকা দরকার।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো বলেন, এরপর যদি সংস্কার না করতে পারি, ১৫ বছরের কাজ ১৫ মাসে শেষ করতে না পারি, তা না হলে যে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের কথা বলছি, তা সমস্যায় পড়ে যাবে। গণতান্ত্রিক রূপান্তর যদি মূল লক্ষ্য হয়, তাহলে অর্থনৈতিক সংস্কারগুলোর অগ্রাধিকার ঠিকমতো সাজাতে হবে। এর গতি কী হবে, সেটা ঠিক করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এম.কে
১৭ নভেম্বর ২০২৪

আরো পড়ুন

এইচএসসি পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত

ক্ষমতাচ্যুতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করলেন শেখ হাসিনা, সতর্ক করলেন অন্তর্বর্তী সরকারকে

রমজানে স্কুল বন্ধঃ হাইকোর্ট