বরফে ঢাকা অ্যান্টার্কটিকা জলবায়ু পরিবর্তনের কবলে পড়েছে। অ্যান্টার্কটিকায় ফুল ফোটার ঘটনায় বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনে সারা বিশ্ব ভয়ংকর হয়ে উঠছে।
গত ২০ বছর ধরে অ্যান্টার্কটিকায় খুব ধীরে ধীরে উদ্ভিদের প্রসার লক্ষ্য করছেন বিজ্ঞানীরা। আগে ঠান্ডার কারণে এই উদ্ভিদ খুব বেশি দিন বাঁচত না। কিন্তু সম্প্রতি এগুলো আয়ুষ্কালও বেড়েছে। ফুটেছে ফুল। তবে আনন্দের বদলে আশঙ্কার মেঘ দেখছেন বিজ্ঞানীরা। এর আগে এই তীব্র শীতল অঞ্চলে এত দ্রুত কখনো কোনো উদ্ভিদের বৃদ্ধি হয়নি। অ্যান্টার্কটিকার বুকে ফুল ফোটা আদতে জলবায়ুর পরিবর্তনেরই ইঙ্গিত দেয়। বরফে ঢাকা এই মহাদেশে ফুল ফোটা একপ্রকার অসম্ভব বলে জানান বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীদের রিপোর্ট বলছে, সিগনি দ্বীপে মূলত দুই ধরনের উদ্ভিদ জন্মাতে দেখা গেছে। ১৯৬০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলে যে হারে এই উদ্ভিদের জন্ম হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তার ১০ গুণ উদ্ভিদ জন্মেছে। অ্যান্টার্কটিকায় অন্য ধরনের উদ্ভিদের জন্মের হারও বৃদ্ধি হয়েছে। রিপোর্ট বলছে, আগের তুলনায় এখন ঐ অঞ্চলে বিভিন্ন উদ্ভিদের বৃদ্ধি বেড়েছে পাঁচ গুণ। সারা বছর হিমাঙ্কের অনেক নিচে তাপমাত্রা থাকে আন্টার্কটিকায়। সে কারণে মস, লিচেন জাতীয় শৈবালেরই জন্ম হয়।
এবার অ্যান্টার্কটিকায় নতুন ধরনের উদ্ভিদের দেখা মিলছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে সেখানে নতুন ধরনের উদ্ভিদের জন্ম হচ্ছে। এর ফলে অ্যান্টার্কটিকার বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, মাটির চরিত্রও বদলে যেতে পারে অ্যান্টার্কটিকার। এই ধরনের উদ্ভিদ পচে মাটির সঙ্গে মিশলে মাটির অম্লত্বের পরিমাণ বদলে যেতে পারে। তাতে নতুন ধরনের ব্যাকটিরিয়া জন্মাতে পারে। তার প্রভাব পড়তে পারে পরিবেশে, বাস্তুতন্ত্রে।
অ্যান্টার্কটিকার বুকে এই ফুল প্রথম লক্ষ করেন অস্ট্রেলিয়ার ওলংগং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। তারা দেখেন, অ্যান্টার্কটিকায় মূলত দুই ধরনের উদ্ভিদের বৃদ্ধি হচ্ছে আগের তুলনায় বেশি হারে। প্রথম দিকে নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে দেখা যেত এই উদ্ভিদ। এখন তার বাইরেও বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে এই উদ্ভিদ। বিজ্ঞানীরা বিশ্ব উষ্ণায়নের পাশাপাশি মানুষকেও দায়ী করেন। তাদের মতে, অ্যান্টার্কটিকায় গবেষকদের সঙ্গে অভিযাত্রীদের আনাগোনাও বেড়েছে। তাদের পায়ে পায়েই এই উদ্ভিদের বীজ ছড়িয়ে পড়েছে বহু দূর। সে কারণে এর বংশবৃদ্ধি হচ্ছে।
এম.কে
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩