রাজা চার্লস তৃতীয় জানতেন, ভবিষ্যতের রাজা প্রিন্স উইলিয়ামের জন্য সবচেয়ে অস্বস্তিকর উত্তরাধিকার হবে তার চাচা প্রিন্স অ্যান্ড্রু। সম্প্রতি রাজপরিবার ঘোষণা দিয়েছে, অ্যান্ড্রুর ডিউক অব ইয়র্ক উপাধি, অন্যান্য রাজকীয় সম্মাননা ও অর্ডার অব দ্য গার্টার নাইটহুড তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজপরিবারের লক্ষ্য—রাজতন্ত্রের ভাবমূর্তি রক্ষা এবং ভবিষ্যতের রাজা উইলিয়ামের জন্য ‘অ্যান্ড্রু সমস্যা’কে আগেই নিয়ন্ত্রণে আনা।
বাকিংহাম প্যালেসের তথ্য অনুযায়ী, ঘোষণার আগে প্রিন্স অব ওয়েলস উইলিয়ামকে পরামর্শ করা হয়েছিল। ফলে অ্যান্ড্রুর স্বেচ্ছায় উপাধি ত্যাগের সিদ্ধান্তে উইলিয়াম স্পষ্টতই স্বস্তি পেয়েছেন। রাজা চার্লসের বয়সে ১২ বছর ছোট অ্যান্ড্রু হয়তো ভবিষ্যতে উইলিয়ামের অভিষেক অনুষ্ঠান টেলিভিশনে দেখবেন, তবে রাজপরিবারের মহলে ধারণা—তিনি হয়তো অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত থাকবেন না।
চার্লসের শাসনকালেই “অ্যান্ড্রু সমস্যা” আংশিকভাবে সমাধানের চেষ্টা শুরু হয়েছে। তবে সংসদের অনুমোদন ছাড়া তার ডিউক উপাধি পুরোপুরি বাতিল সম্ভব নয়। রাজা চার্লসের মতে, সংসদের সময় ব্যয় না করেই উপাধি ‘অচল অবস্থায়’ রাখা যথেষ্ট। তবু লেবার এমপি র্যাচেল মাস্কেল একটি প্রস্তাবিত বিলের মাধ্যমে রাজার বা সংসদীয় কমিটির হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে উপাধি প্রত্যাহারের ক্ষমতা দিতে চান।
উইলিয়াম, যিনি রাজা হলে রাজতন্ত্রের ভাবমূর্তি রক্ষায় আরও দৃঢ় অবস্থান নিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, তার চাচাকে এখনও ‘সুনামের ঝুঁকি’ ও ‘হুমকি’ হিসেবে দেখেন। সানডে টাইমস-এর তথ্য মতে, ভবিষ্যতে তিনি অ্যান্ড্রুকে রাজকীয় ও পারিবারিক সব অনুষ্ঠানে নিষিদ্ধ করতে পারেন, এমনকি নিজের অভিষেক অনুষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় আয়োজনে অংশগ্রহণ থেকেও।
২০১৯ সালে নিউজনাইট সাক্ষাৎকারে অ্যান্ড্রুর বিপর্যয়কর পারফরম্যান্সের পর থেকেই তার জনসম্মুখে উপস্থিতি সীমিত। তবে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর সময় ও রাজা চার্লসের অভিষেকে তাকে রাজপরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা গেছে, যা অনেকের মতে রাজকীয় সহানুভূতির প্রকাশ। এর মধ্যেই ভার্জিনিয়া জিউফ্রের সঙ্গে দায়স্বীকারহীন বহু-মিলিয়ন ডলারের সমঝোতা রাজতন্ত্রের ভাবমূর্তিতে গভীর দাগ ফেলেছে।
জিউফ্রে, যিনি চলতি বছরের এপ্রিলে আত্মহত্যা করেন, তার মৃত্যুর আগে লেখা আত্মজীবনীতে জানান—“আমি এক বছরের জন্য গোপনীয়তার চুক্তি করেছিলাম, যা প্রিন্সের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ এতে তার মায়ের প্লাটিনাম জুবিলি আর কলঙ্কিত হতো না।” বইটি প্রকাশের আগেই অ্যান্ড্রুর উপাধি স্থগিত করে রাজপরিবার একপ্রকার প্রতিরোধমূলক কৌশল নিয়েছে।
তবে এখনো বিতর্ক থামেনি। অ্যান্ড্রু ও তার প্রাক্তন স্ত্রী সারা ফার্গুসন এখনো উইন্ডসরের ৩০ কক্ষের বিশাল ‘রয়্যাল লজ’-এ বসবাস করছেন। রাজা চার্লস reportedly তাকে ছোট বাসভবন ফ্রগমোর কটেজ-এ যেতে বললেও, অ্যান্ড্রু রাজি হননি। তার ক্রাউন এস্টেটের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাড়ার চুক্তি থাকলেও এর আর্থিক বিবরণ প্রকাশ হয়নি, যা নিয়ে সমালোচনা অব্যাহত।
রাজপরিবারের ভাবমূর্তি রক্ষা, উপাধি প্রত্যাহার এবং ভবিষ্যতের রাজা উইলিয়ামের জন্য সম্ভাব্য জটিলতা দূর করা—সব মিলিয়ে এখন ‘অ্যান্ড্রু সমস্যা’ ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের সবচেয়ে সংবেদনশীল অধ্যায় হয়ে উঠেছে। রাজা চার্লস যেখানে কৌশলগতভাবে বিষয়টি সামলাচ্ছেন, সেখানে উইলিয়াম রাজা হলে তাঁর অবস্থান হবে আরও কঠোর ও নির্দয়।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২১ অক্টোবর ২০২৫