10.4 C
London
February 23, 2025
TV3 BANGLA
বাংলাদেশযুক্তরাজ্য (UK)

আওয়ামী ওলিগার্ক তৈরি মিশনের মূল খেলোয়াড় ছিলেন টিউলিপ

রাশিয়ান আদলে বাংলাদেশে ওলিগার্ক সমাজ সৃষ্টি নিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে যুক্তরাজ্যে। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের দূর্নীতি সম্রাজ্য তৈরিতে কেয়ার স্টারমারের ভুমিকা নিয়ে নানা সমালোচনা করেছে ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টি।

টিউলিপ সিদ্দিকের ব্রিটেনের রাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছিল নাসিম আলীর হাত ধরে। নাসিম আলী – যিনি টিউলিপ সিদ্দিকের কোনো আত্মীয় নন। তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ। তিনি যুক্তরাজ্যের ক্যামডেন এলাকায় বসবাস করেন বলে তথ্যমতে জানা যায়। নাসিম আলী ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সফর করেন এবং বাংলাদেশের স্থানীয় একটি টেলিভিশনে উপস্থিত হয়েছিলেন।

সিলেটি ভাষায় কথা বলার সময় তিনি ব্যাখ্যা করেন কিভাবে ২০১০ সালে টিউলিপ সিদ্দিক কাউন্সিলর হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, আমার শেখ রেহানার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। রেহানা এবং আওয়ামী লীগের আরেক নেতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন: “তারা দুজন আমাকে টিউলিপ সিদ্দিককে সাহায্য করতে বলেছিলেন যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে। শুরুতে ক্যামডেনে টিউলিপ সিদ্দিককে কেউ চিনত না। আমি তাদের বলেছিলাম, ‘ সময় দেন সব ঠিক করে দিব।’

লন্ডনের পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন: “আমি শেখ রেহানাকে বলেছিলাম, ‘টাওয়ার হ্যামলেটসের লোকজনকে এখানে আনবেন না, এখানে আমার নিয়ন্ত্রণ আছে। টিউলিপ সিদ্দিক জিতবে, আমরা জিতব।’ আমরা টিউলিপকে কাউন্সিলর বানিয়েছিলাম। টিউলিপের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না।”

তিনি যোগ করেন, ” কয়েকজন কাউন্সিলর টিউলিপের রাজনৈতিক অবস্থান ও নির্বাচনের ফলাফলে অবাক হয়ে গিয়েছিল এবং তারা বলল, ‘তুমি তাকে মন্ত্রিসভায় নিয়ে এলে, আর তার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই।’ আমি বলেছিলাম, ‘না, তার কিছু আছে। টিউলিপের কিছু গুণ আছে। হয়তো তার অভিজ্ঞতা কম।’

নাসিম আলী দাবি করেন: “টিউলিপ নিজেই বলেছিল – আমি টিউলিপ সিদ্দিককে তৈরি করেছি। টিউলিপ নিজেই বলেছিল, এটি নাস (নাসিম আলীর ডাকনাম) এর কারণে।”

তিনি আরও বলেন: “টিউলিপ নিজেই বলেছিল, ‘আমি নাসিম আলীর সাহায্য ছাড়া এমপি হতে পারতাম না।'”

২০১৭ সালে, যখন টিউলিপ সিদ্দিককে একজন ব্রিটিশ ব্যারিস্টারের “গুম” হওয়ার বিষয়টি উত্থাপনের জন্য অনুরোধ করা হয়,( যিনি তার খালার শাসনামলে অপহৃত হয়েছিলেন)। টিউলিপ অভিযোগ করেছিলেন চ্যানেল ৪ নিউজ বর্ণবাদী আচরণ করছে তার সাথে। তিনি চ্যানেল ৪ নিউজ প্রযোজককে বলেন: “আমি বাংলাদেশি নই,” এরপর তার গর্ভাবস্থা সম্পর্কে একটি হুমকিমূলক মন্তব্য করেন। পরে তিনি এই চ্যানেলের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আক্রমণের অভিযোগ দায়ের করেন।

টিউলিপ সিদ্দিক পরে দাবি করেন যে তিনি তার খালার সাথে রাজনীতি নয়, কেবল পারিবারিক বিষয়ে আলোচনা করেন।

টিউলিপ জানিয়েছিলেন তিনি নিজেকে তার খালার প্রশাসন থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করে থাকেন সবসময়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তখনও টিউলিপ সিদ্দিক আওয়ামী লীগের দেওয়া ঘুষের বিনিময়ে প্রাপ্ত সম্পত্তিতে বসবাস করছিলেন। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে যে টিউলিপ সিদ্দিক উত্তর লন্ডনের কিংস ক্রসে £১,৯৫,০০০ মূল্যের একটি ফ্ল্যাটের মালিক, যা ২০০১ সালে কেনা হয়েছিল এবং কয়েক বছর পর তার খালার সহযোগী আবদুল মতালিফ তাকে দিয়েছিল। তিনি আগে বলেছিলেন এটি তার বাবা-মা দিয়েছেন, যা পরবর্তীতে তিনি ভুল হিসেবে সংশোধন করেছেন।

সানডে টাইমস গত সপ্তাহে জানিয়েছে যে তিনি £৬,৫০,০০০ মূল্যের হ্যাম্পস্টেড ফ্ল্যাটে থাকতেন, যা তার বোনকে দেওয়া হয়েছিল। পরে জানা যায় যে এটি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সাথে যুক্ত একটি ট্রাস্টের মালিকানাধীন ছিল। বর্তমানে তিনি £২.১ মিলিয়ন মূল্যের একটি বাড়িতে বসবাস করছেন, যা আবদুল করিম নজিমের মালিকানাধীন একটি কোম্পানির কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হয়েছে। নজিম যুক্তরাজ্যের আওয়ামীলীগ শাখার সদস্য।

প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে যে, দুটি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সঙ্গে যুক্ত একটি অফশোর কোম্পানি হ্যাম্পস্টেডে একটি সম্পত্তি কিনেছিল, যেখানে টিউলিপ সিদ্দিক দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করেছিলেন।

২০০০ সালে, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে নিবন্ধিত একটি অফশোর কোম্পানি পেডরক ভেঞ্চারস, £২,৪৩,০০০ দিয়ে ফ্ল্যাটটি কিনেছিল। পানামা পেপার্সের অংশ হিসেবে ফাঁস হওয়া এবং ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (ICIJ) দ্বারা প্রকাশিত নথি থেকে জানা যায়, পেডরক ভেঞ্চারস একটি ছয় অঙ্কের ঋণের মাধ্যমে অর্থায়ন পেয়েছিল।

ছাত্র আন্দোলনের কর্মী ও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম মত প্রকাশ করে বলেন, টিউলিপ সিদ্দিককে শেখ হাসিনা পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবহার করেছিল। “পারিবারিক উদ্যোগে” বিদেশে পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তির মালিক করে দেওয়া ছিল “একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া”। যা ১৫ বছর ধরে পরিচালিত হচ্ছিল।

সাবেক আওয়ামীলীগ সরকারের প্রশাসনের বিষয়ে তিনি বলেন: “তারা অর্থ লুটপাট করছিল এবং শেখ হাসিনা এমন লোকদের সহায়তা করছিল যারা তার এবং তার রাজনীতির পক্ষে অবস্থান নিবে।”

উল্লেখ্য যে, যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টির এমপিরা টিউলিপ ইস্যুতে কথা বলতে দ্বিধাগ্রস্ত। যদিও অনেকে জিজ্ঞাসা করছেন কেন স্টারমার এত দেরি করছেন টিউলিপকে পদত্যাগে বাধ্য করতে। স্টারমার,টিউলিপ সিদ্দিক বন্ধু হওয়ার কারণে এবং যুক্তরাজ্যের আওয়ামী লীগের সাথে ঘনিষ্ঠতার জন্যও সমালোচিত হচ্ছেন।

টিউলিপ সিদ্দিকের সাথে “অর্থনৈতিক অপরাধ, মানি লন্ডারিং এবং অবৈধ অর্থায়ন” নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি তার বোনের নামে থাকা সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন তার বোনকে করা উচিত বলে মন্তব্য করেন। তার বোন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

ঢাকার ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট গত বুধবার টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অ্যাকাউন্টের লেনদেনের বিস্তারিত চেয়ে ব্যাংক গুলোকে নির্দেশ দেওয়ায় টিউলিপের অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা দাবি করেছেন আওয়ামীলীগই যুক্তরাজ্যে টিউলিপ সিদ্দিকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সূচনা করে দিয়েছিল।

সূত্রঃ দ্য টাইমস

এম.কে
১২ জানুয়ারি ২০২৫

আরো পড়ুন

করোনার ট্যাবলেট অনুমোদন দিলো যুক্তরাজ্য

অনলাইন ডেস্ক

পালানোর সময় সিলেটের বিমানবন্দরে আটক আওয়ামী লীগের ২ নেতা

ব্রিটিশ রানি হতে চান মেগান ম্যার্কেল, বিস্ফোরক দাবি