অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি, পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমদ মারুফ এবং সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত এসা ইউসুফ এসা আল দুহাইলান সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।
মঙ্গলবার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তারা পৃথক বৈঠকে মিলিত হন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বৈঠকে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেছেন, রাশিয়া আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
এসময় বাংলাদেশের গৌরবময় স্বাধীনতা যুদ্ধে রাশিয়ার ভূমিকা এবং চট্টগ্রাম বন্দরে এর গুরুত্বপূর্ণ মাইন পরিষ্কার কার্যক্রমের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা রাশিয়ার দূতকে বাংলাদেশ থেকে আমদানি বাড়ানোর আহ্বান জানান।
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত মান্টিটস্কি বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার। কারণ এটি দেশে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্য ও সার রপ্তানি করে। গত বছর রাশিয়া বাংলাদেশে ২.৩ মিলিয়ন টনের বেশি গম রপ্তানি করেছিল এবং এ বছর চালান দুই মিলিয়ন টন ছাড়িয়েছে।
এছাড়াও রাষ্ট্র পরিচালিত রাশিয়ান জ্বালানি কোম্পানি গ্যাজপ্রম ভোলা দ্বীপে আরও পাঁচটি গ্যাস কূপ এবং অভ্যন্তরীণ আরও কূপ অনুসন্ধানের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন মান্টিটস্কি।
পৃথক বৈঠকে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত এবং পাকিস্তান হাইকমিশনার বাংলাদেশের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা জানান। তারা উভয় দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেন।
বর্তমানে সৌদি আরবে প্রায় ৩২ লাখ বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছেন উল্লেখ করে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, তারা তার দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকরা বছরে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স বৈধ চ্যানেলে পাঠান এবং আরও ৫ বিলিয়ন ডলার অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের অর্থ বৈধ পথে পাঠানো সম্ভব হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘তারা কঠোর পরিশ্রমী এবং অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ।’
রাষ্ট্রদূত দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, সৌদি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে লজিস্টিকস, পরিষেবা খাত এবং আরএসজিটি ইন্টারন্যাশনাল ও আকওয়া পাওয়ারের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে আরও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
পৃথক বৈঠকে পাকিস্তানের হাইকমিশনার দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
হাইকমিশনার জানান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং দেশটির জনগণ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পাকিস্তান বাংলাদেশকে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আহমদ মারুফ পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ এবং উভয় দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর আহ্বান জানান।
তিনি উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্ব আরও জোরালো করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম টেস্ট জয়ে অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রদূত।
তিনি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী করার পাশাপাশি বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে সহযোগিতা বাড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং একসাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সার্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো একটি মডেল হতে পারে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের পারস্পরিক সুবিধার জন্য একসাথে কাজ করতে হবে।’
এম.কে
২৮ আগস্ট ২০২৪