25.1 C
London
September 19, 2025
TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

আরব দেশগুলোর আকাশপথ অবরোধে ইসরায়েলের বিপর্যয়ের আশঙ্কাঃ প্রতিবেদন

আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সম্ভাব্য আকাশপথ অবরোধ ইসরায়েলের অর্থনীতি, রাজনীতি ও নিরাপত্তার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক আল হাবতুর রিসার্চ সেন্টার। কাতারের রাজধানী দোহায় গত ৯ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলের হামলার পর এ সম্ভাবনার বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ওই হামলায় এক কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা সহ ছয়জন নিহত হন, তবে কোনো হামাস নেতা নিহত হয়নি।
হামলার পর ৫৭ সদস্যবিশিষ্ট ওআইসি (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন) এবং আরব লীগের জরুরি বৈঠক দোহায় অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ইসরায়েলের আগ্রাসনের জবাবে আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়ার নানা দিক আলোচনা করা হয়। আল হাবতুর সেন্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমন্বিত আকাশপথ অবরোধ ইসরায়েলের অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং দেশটিকে মন্দার মুখে ঠেলে দেবে।

গবেষণা প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, এ ধরনের পদক্ষেপে ইসরায়েলের জিডিপি ৪.৮ থেকে ৫.৭ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। এতে এয়ারলাইন এল-আল ৬০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত রাজস্ব হারাতে পারে। এ ছাড়া ৪ থেকে ৬ ঘণ্টার অতিরিক্ত ডিট্যুরের কারণে প্রতি ফ্লাইটে ৩০ হাজার থেকে ৬০ হাজার ডলার পর্যন্ত খরচ বাড়তে পারে। এর ফলে এশিয়া ও আফ্রিকার সম্ভাবনাময় বাজারে ইসরায়েলের প্রবেশে বড় বাঁধা সৃষ্টি হবে।

পর্যটন খাত, ডায়মন্ড ও মেডিকেল সরঞ্জামের মতো সময়-সংবেদনশীল রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, চুক্তি বাতিল হতে পারে এবং গবেষণা ও উন্নয়নমূলক অনেক প্রকল্প দেশ ছাড়তে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যেও বড় পরিবর্তন ঘটতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতারসহ উপসাগরীয় দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু দোহায় ৮ হাজারেরও বেশি মার্কিন সেনা অবস্থান করলেও ইসরায়েলের হামলা ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে। ফলে নতুন আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামো গঠনের আলোচনা শুরু হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র কঠিন কূটনৈতিক সংকটে পড়বে—মধ্যপ্রাচ্যের মিত্র না কি ইসরায়েলকে বেছে নেবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি স্বীকার করেছেন যে, দেশটি বৈশ্বিক মঞ্চে বিচ্ছিন্নতার মুখোমুখি। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলকে “আত্মনির্ভরশীল” অর্থনীতির দিকে যেতে হবে এবং দেশীয় অস্ত্রশিল্প গড়ে তুলতে হবে। ইউরোপের একাধিক দেশ গাজায় গণহত্যার ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক অবরোধের আহ্বান জানিয়েছে।

প্রতিবেদনটি সম্ভাব্য আকাশপথ অবরোধকে “গ্রে জোন” বা “শান্তি ও ঘোষিত যুদ্ধের মাঝামাঝি এক ধরনের জবরদস্তিমূলক পদক্ষেপ” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। এতে সতর্ক করা হয়, ইসরায়েল যদি বলপ্রয়োগ করে অবরোধ চ্যালেঞ্জ করে, তাহলে তা আঞ্চলিক যুদ্ধেও রূপ নিতে পারে। এতে উপসাগরীয় দেশ, ইরান এবং ইরান-সমর্থিত বিভিন্ন গোষ্ঠীও জড়িয়ে পড়তে পারে।

আইনি দিক থেকেও জটিলতা রয়েছে। শিকাগো কনভেনশনের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে সামরিক বা জননিরাপত্তাজনিত কারণে আকাশপথ বন্ধ করার অনুমতি থাকলেও তা বৈষম্যমূলক হওয়া চলবে না। ইসরায়েল দাবি করতে পারে যে এটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন। তবে অবরোধকারী দেশগুলো যুক্তি দিতে পারে যে দোহায় হামলার ফলে তাদের নিরাপত্তার ওপর গুরুতর হুমকি তৈরি হয়েছে।

আল হাবতুর রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবসায়ী খলাফ আহমেদ আল হাবতুর বলেছেন, আরবদের হাতে শক্তিশালী অর্থনৈতিক হাতিয়ার রয়েছে। একতাবদ্ধ সিদ্ধান্ত ইসরায়েলকে দুর্বল করে দেবে এবং এর নেতাদের নতুনভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করবে। তিনি আরব দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কার্যকর অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

২০২০ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের মাধ্যমে ইউএই, বাহরাইন, মরক্কো ও সুদান ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ সম্পর্ক স্থাপন করে। তবে গাজায় গণহত্যার ঘটনায় দেশগুলো ইসরায়েলকে নিন্দা করলেও এখনও পর্যন্ত ওই চুক্তি বাতিল বা স্থগিত করেনি। কাতারে হামলার পর আমিরাত ইসরায়েলকে “বিশ্বাসঘাতক আগ্রাসন” বলে অভিহিত করেছে, যা কূটনৈতিক অবস্থানের পরিবর্তনের ইঙ্গিত হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

সূত্রঃ মিডল ইস্ট আই

এম.কে
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আরো পড়ুন

বিদেশীদের জন্য নতুন ভিসা চালু করছে দক্ষিণ কোরিয়া

গাজায় ভাসমান হাসপাতাল পাঠাচ্ছে ফ্রান্স

২০২৪ সালকে সৌদির ‘উটবর্ষ’ ঘোষণা