যুক্তরাজ্যের উচ্চশিক্ষা খাত গভীর আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়া, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়া এবং সরকারি সহায়তা নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে দেশটির প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ই চাপের মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে খরচ কমাতে বিভাগ একীভূতকরণ, চাকরি ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় পুরো ক্যাম্পাস বিক্রির মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে।
রাশেল গ্রুপভুক্ত ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহাম তাদের সেলি ওক ক্যাম্পাসে বড় ধরনের পুনর্গঠন শুরু করেছে। ২০০১ সালে অধিগ্রহণ করা এই ক্যাম্পাসে একসময় ধর্মীয় শিক্ষা কলেজ ছিল এবং এর বহু ভবন গ্রেড–২ তালিকাভুক্ত ঐতিহাসিক স্থাপনা। সম্প্রতি তিনটি ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং ক্যাম্পাসের দুটি অংশ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেখানে বহু পুরোনো বাড়ি ও ভবন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এই জমি বিক্রির ফলে নতুন আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠবে, কর্মসংস্থান বাড়বে এবং শহরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে। একই সঙ্গে সেলি ওকের অবশিষ্ট অংশ নিয়েও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা পর্যালোচনা চলছে।
ইউনিভার্সিটি অব এসেক্স আরও এক ধাপ এগিয়ে তাদের তিনটি ক্যাম্পাসের একটি পুরোপুরি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। ২০২৬ সালের আগস্টে সাউথএন্ড ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাবে। সেখানে অধ্যয়নরত প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থীকে মূল কোলচেস্টার ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হবে, যা যাতায়াতের দিক থেকে অনেকের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রায় ৪০০ শিক্ষক ও কর্মচারী চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে যাওয়ায় তারা দুটি ক্যাম্পাসে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম সীমিত করে টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চাইছে।
ইউনিভার্সিটি অব গ্লস্টারশায়ার ইতোমধ্যে তাদের হার্ডউইক ক্যাম্পাস বিক্রি করে দিয়েছে। এই ক্যাম্পাসে আবাসন ভবন, ফটোগ্রাফি সেন্টার ও প্রশাসনিক দপ্তর ছিল। বিক্রির পর এটি কেয়ার হোম বা আবাসন প্রকল্পে রূপান্তরিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি স্পষ্ট করে যে, আর্থিক চাপের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবকাঠামোগত সম্পদ বিক্রিকেই তাৎক্ষণিক সমাধান হিসেবে বেছে নিচ্ছে।
সবচেয়ে আলোচিত সিদ্ধান্ত এসেছে ইউনিভার্সিটি অব নটিংহাম থেকে। চলতি বছরের ডিসেম্বরেই তারা ঘোষণা দেয়, নতুন চালু হওয়া ক্যাসল মিডো ক্যাম্পাস বিক্রি করা হবে। ২০২১ সালে £৩৭.৫ মিলিয়নে কেনা এবং £৪০ মিলিয়নের বেশি ব্যয়ে সংস্কার করা এই ক্যাম্পাসের বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ খরচ প্রায় £১০০ মিলিয়ন। চাকরি ছাঁটাই ও সম্ভাব্য কোর্স বন্ধের প্রেক্ষাপটে এই ব্যয় নিয়ে আগে থেকেই সমালোচনা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আর্থিক বাস্তবতা বদলে যাওয়ায় কৌশলগত অগ্রাধিকার বিবেচনায় এই ক্যাম্পাস ধরে রাখা সম্ভব নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এসব সিদ্ধান্ত যুক্তরাজ্যের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ক্যাম্পাস বিক্রি ও চাকরি ছাঁটাই তাৎক্ষণিকভাবে ব্যয় কমালেও, শিক্ষার মান, গবেষণা সক্ষমতা এবং শিক্ষার্থী অভিজ্ঞতার ওপর এর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বর্তমান সংকট সামাল দিতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও বিশ্ববিদ্যালয় একই পথে হাঁটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সূত্রঃ দ্য ট্যাব
এম.কে

