TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ইউকের ডিজিটাল ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা অভিবাসীদের মধ্যে ভয় ও বঞ্চনা তৈরি করছেঃ গবেষণা

যুক্তরাজ্যের নতুন ডিজিটাল-শুধু ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা অভিবাসীদের মধ্যে ভয়, চাপ এবং বঞ্চনার অভিজ্ঞতা তৈরি করছে বলে এক যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। মাইগ্র‍্যান্ট ভয়েস এবং ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইক–এর গবেষকদের মতে, বাধ্যতামূলক ই-ভিসা ব্যবস্থায় অভিবাসীরা স্ট্যাটাস প্রমাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে গুরুতর ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছেন।

 

২০১৮ সালে অভিবাসীদের স্ট্যাটাস ডিজিটালাইজেশন শুরু হলেও চলতি বছরের মাঝামাঝি সরকার ঘোষণা করে—এখন থেকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশকারী বা দেশে বৈধভাবে বসবাসকারী প্রায় সবাইকে ই-ভিসা ব্যবহার করে নিজেদের অধিকার প্রমাণ করতে হবে। এ সিদ্ধান্তের ফলে অভিবাসীরা বিশ্বের প্রথম বাধ্যতামূলক ডিজিটাল-শুধু পরিচয়ব্যবস্থা ব্যবহারকারী গোষ্ঠীতে পরিণত হন।

গবেষণার জন্য ৪০ জন অভিবাসীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, যাদের বেশিরভাগই জানান যে সীমিত সময়সীমা, সিস্টেমে ভুল, প্রযুক্তিগত ত্রুটি এবং পরিবর্তিত নির্দেশনা তাদের তীব্র মানসিক চাপের মধ্যে ফেলছে। অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন—সিস্টেমে সামান্য ভুল বা সার্ভার সমস্যার কারণেও তারা বৈধ স্ট্যাটাস হারাতে পারেন।

একজন অংশগ্রহণকারী বলেন, “উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারির পর থেকে সরকারের তথ্য সংরক্ষণ নিয়ে ভরসা নেই। ইউরোপীয় নাগরিকদের আবেদনই যখন সিস্টেম থেকে হারিয়ে যায়, তখন আমাদেরটাও হারিয়ে যাওয়ার ভয় থেকেই যায়।”

প্রতিবেদনে উঠে আসে—ডিজিটাল সিস্টেমে সমস্যার কারণে অনেকের কাজ করা, ফ্লাইটে যাওয়া, বাসা ভাড়া নেওয়া, পড়াশোনা করা এবং সরকারি সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি হয়েছে। নিজের কোনো ভুল না থাকা সত্ত্বেও সিস্টেমের ভুল ঠিক করতে গিয়ে অনেকে অসহায় ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

আরেকটি বড় সমস্যার মধ্যে রয়েছে নিয়োগকর্তা, বাড়িওয়ালা, এয়ারলাইন কর্মী এবং সীমান্ত কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব। অনেক ক্ষেত্রে অভিবাসীদেরকেই ডিজিটাল যাচাই প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে দিতে হয়েছে, যা পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে।

গবেষণার অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন—জটিল প্রক্রিয়া, ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা, শেয়ার কোড তৈরি করতে ব্যর্থতা এবং স্পষ্ট নির্দেশনার অভাব তাদের সমস্যায় ফেলেছে। হোম অফিসের ইমেইল বা হেল্পলাইনে যোগাযোগ করেও অধিকাংশই সঠিক দিকনির্দেশনা পাননি।

গবেষকরা সতর্ক করে বলেন, যাদের ডিজিটাল জ্ঞান সীমিত, ইংরেজি ভালো বোঝেন না, অথবা যাদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আছে—তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন। ইংরেজি জানলেও কেবল একটি ভাষায় পুরো সিস্টেম পরিচালনার বিষয়টি অনেকেই অন্যায্য বলে মনে করেছেন। এ কারণে তারা বন্ধু, কমিউনিটি গ্রুপ এবং অনলাইন অভিবাসী প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হয়েছেন।

ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইক-এর ড. ডেরিয়া ওজকুল বলেন, “মানুষ চাকরি হারাচ্ছে, ফ্লাইট মিস করছে, ব্যক্তিগত তথ্য অনিচ্ছায় অন্যের কাছে চলে যাচ্ছে, প্রযুক্তিগত সমস্যায় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারছে না এবং স্ট্যাটাস হারানোর ভয় পাচ্ছে—এগুলো গুরুতর সংকেত। বিকল্প ব্যবস্থা না দিয়ে ডিজিটাল-(ই-ভিসা) ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করলে কী ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে, এই রিপোর্ট সেই সতর্কবার্তাই দিচ্ছে।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

লন্ডনের স্টেশনে বাংলায় লেখা সাইনবোর্ডের সমালোচনা ব্রিটিশ এমপির

পশ্চিম লন্ডনের পাঁচ তারকা হোটেলের সামনে ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত

লন্ডনে সাফিয়া খাতুন হত্যাঃ ৪৫ বছরের মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ