TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

ইউনূসের ‘রাজনৈতিক ভুল’ ও উগ্র ধর্মবাদ নিয়ে তীব্র সমালোচনা ফরহাদ মজহারের

কবি ও তাত্ত্বিক ফরহাদ মজহার অভিযোগ করেছেন, গণঅভ্যুত্থানের ‘ফল’ হিসেবে ক্ষমতায় এলেও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জনগণের সঙ্গে নয়, বরং সেনাবাহিনী ও আন্তর্জাতিক শক্তির সঙ্গে ‘আঁতাত’ করেছেন। তার মতে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর উদ্ভূত দ্বন্দ্বগুলোর সমাধান না করে নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত জনগণকে বিপদে ফেলে দিয়েছে।

 

ইনসাইড আউট নামে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পরে যে মব সহিংসতা, মাজার ভাঙা ও বাউলদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়েছে—এটি অনিবার্য ছিল, কারণ রাষ্ট্রকে নতুনভাবে পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। তার দাবি, “সেক্যুলার ফ্যাসিজমের বিপরীতপিঠে যে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়েছে, তা হিন্দুত্ববাদেরই ইসলামি সংস্করণ—এরা গণঅভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করে দিতে চাইছে।”

প্রধান উপদেষ্টার রাজনৈতিক সমঝোতার সমালোচনায় ফরহাদ মজহার বলেন, ইউনূস ‘জাতীয় ঐক্য’-র নামে ‘এলিট সমঝোতাকে জাতীয় ইচ্ছা’ হিসেবে হাজির করছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যে গণঅভ্যুত্থান জনগণ করেছে, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোকে আবার সামনে আনা হচ্ছে কেন? তারা তো লুটেরা মাফিয়া শ্রেণি।” তার মতে, সংস্কৃতি কমিশন, রাষ্ট্র পুনর্গঠনের রূপরেখা কিংবা সামাজিক দ্বন্দ্ব নিরসনের মতো উদ্যোগ না নেওয়ায় বর্তমান সংকট তৈরি হয়েছে।

ইউনূসের সিদ্ধান্তকে “মারাত্মক ভুল” আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “তিনি জনগণের সঙ্গে আঁতাত না করে সেনাবাহিনী, আন্তর্জাতিক শক্তি ও লুটেরা শ্রেণির সঙ্গে আঁতাত করেছেন। গণঅভ্যুত্থানের নায়ক তিনি ছিলেন না, কিন্তু তার ফল ভোগ করছেন।” তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে কি সরকার সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ অনুমোদন আদায়ের চেষ্টা করছে—এতে কি ডিজিএফআই বা অন্য কোনো বাহিনীকে ব্যবহারের পরিকল্পনা আছে?

ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বিস্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইউনূস সরকারের ‘সৎসাহসের অভাব’ ও দুর্বলতার কারণেই উগ্র ধর্মবাদীদের উত্থান ঘটছে। তার দাবি, জনগণ কখনোই এই উগ্রতা ও সহিংসতাকে সমর্থন করে না। “আমরা নিন্দা, আঘাত, বিরোধিতা—সবই নিতে প্রস্তুত যদি এ দেশের সাত কোটি মানুষ নিরাপদ থাকে,” বলেন তিনি।

ইসলামে গান ‘হারাম’—এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করে ফরহাদ মজহার বলেন, ধর্মীয় ব্যাখ্যার অজ্ঞতা থেকেই এই উগ্রতা বাড়ছে। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, “আজানের সুর তো রাগভিত্তিক—এটা কি গান নয়? ইসলামে গান হারাম নয়, হারাম সেই সব কাজ যা মানুষকে ধর্ম থেকে বিচ্যুত করে।”

মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতারও সমালোচনা করেন তিনি। স্রেফ হাদিস মুখস্থ থাকলেই কেউ আলেম হয় না—রাষ্ট্র, আইন, সমাজ, বিজ্ঞান ও দর্শনে জ্ঞান না থাকলে এমন ব্যক্তি রাষ্ট্রের জন্য ‘বিপদজনক’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। বাউলদের ওপর হামলার মতো ঘটনায় হুমকিদাতাদের আইনি শাস্তির বদলে ‘বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই’-এর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি।

সরকারকে আইন প্রয়োগে ‘অজ্ঞ’ এবং ‘দুর্বল’ বলে উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, যারা হত্যার হুমকি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া জনমনে ভুল বার্তা দিচ্ছে। কিছু জঙ্গি চরিত্রকে গ্রেপ্তার করলে তারা ‘হিরো’ হয়ে উঠতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি।

হেফাজতে ইসলামের সাম্প্রতিক ভূমিকা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ২০১৩ সালে যাদের মানবাধিকার রক্ষায় তিনি অবস্থান নিয়েছিলেন, আজ তারা “বাউল নিপীড়ন ও সহিংসতার পক্ষে দাঁড়াচ্ছে।” তার দাবি, হেফাজত এখন ‘গণঅভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করে শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসনের রাজনীতি’ করছে।

সবশেষে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থনের পর রাষ্ট্র পুনর্গঠন ছিল সময়ের দাবি, কিন্তু সেই সুযোগ নষ্ট করার দায় প্রধান উপদেষ্টা এড়াতে পারেন না। জনগণকে উপেক্ষা করায় আজকের সংকট তৈরি হয়েছে—এটাই ‘উপেক্ষার কুফল’।

সূত্রঃ স্যোশাল মিডিয়া

এম.কে

আরো পড়ুন

আর লোডশেডিং হবে নাঃ জ্বালানি উপদেষ্টা

২৯ ডিসেম্বর লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

গুজব, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উপদেষ্টা সংকটঃ নতুন মোড় বাংলাদেশের রাজনীতিতে