TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

“ইউরোপের গুয়ানতানামো” হয়ে উঠছে সিরিয়ার ক্যাম্পসমূহ—তীব্র সমালোচনায় যুক্তরাজ্যের নীতি

সিরিয়ার আল-হোল ও রোজ ক্যাম্পে আটকে থাকা শামীমা বেগমসহ ব্রিটিশ নাগরিকদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাজ্য সরকারকে কঠোর সুপারিশ করেছে একটি স্বাধীন পর্যালোচনা কমিশন। তারা বলেছে, ওইসব ক্যাম্পের পরিস্থিতি “অমানবিক, বিপজ্জনক ও মানবাধিকারবিরোধী”, এবং ব্রিটেন আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পালনে ব্যর্থ হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিটিশ সরকারকে সব নাগরিকের — এমনকি যাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে তাদেরও — স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দিতে হবে। কমিশনের মতে, মানবিকতা, আইনগত দায়িত্ববোধ এবং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই এমন একটি সুসমন্বিত প্রত্যাবাসন কৌশল এখন জরুরি।

শামীমা বেগমের ঘটনা নাগরিকত্ব-বাতিল নীতির কেন্দ্রবিন্দু। ২০১৫ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি আইএস–নিয়ন্ত্রিত এলাকায় যান এবং একজন আইএস যোদ্ধাকে বিয়ে করেন। তিন সন্তানের সবাই শৈশবে মারা যায়। ২০১৯ সালে সিরিয়ার একটি ক্যাম্পে তার অবস্থান শনাক্ত হওয়ার পর যুক্তরাজ্য তার নাগরিকত্ব বাতিল করে; ২০২৪ সালে আপিল আদালতও সেই সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। যদিও তিনি যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেছেন, বাংলাদেশ তাকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না।

জাতিসংঘের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, আল-হোল ও রোজ ক্যাম্পসহ সিরিয়ার আটক কেন্দ্রগুলোর পরিস্থিতি দুর্গতি ও অনিরাপত্তায় ভরা। নারী–শিশুসহ অনেকেই পাচার, জবরদস্তি বা শোষণের শিকার—যদিও তাদের মধ্যে কিছুজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস–সম্পর্কিত অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব ক্যাম্প জনসম্পদ, সেবা ও নিরাপত্তা সংকটে ভুগছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, আল-হোল ক্যাম্পে বর্তমানে প্রায় ৪০,০০০ মানুষ রয়েছে, যাদের অনেকেই আইএস–সংক্রান্ত পরিবার। বিদেশি নাগরিকদের ‘অ্যানেক্স’ নামে একটি দৃঢ় নিরাপত্তা–ঘেরা অংশে রাখা হয়। রোজ ক্যাম্প তুলনামূলক ছোট হলেও সেখানে ২,৬০০ নারী ও শিশু রয়েছে — অধিকাংশই সিরীয় বা ইরাকি নন।

কমিশনের হিসাবে, এখনো ৫৫–৭২ জন যুক্তরাজ্য–সম্পৃক্ত ব্যক্তি সিরিয়ার এসব ক্যাম্পে রয়েছে, তাদের মধ্যে ৩০–৪০ শিশু। প্রতিবেদনে বলা হয়, নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে ব্রিটেনের দীর্ঘ ‘অনিচ্ছা’ দেশটিকে উন্নত দেশসমূহের তুলনায় ব্যতিক্রমী এবং মানবাধিকার প্রশ্নে নেতিবাচক অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব নাগরিককে ফিরিয়ে না আনার নীতি দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তার জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে সব দেশকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। প্রতিবেদনটি সতর্ক করে বলেছে, যদি ইউরোপের দেশগুলো নিজ নিজ নাগরিক ফিরিয়ে নেয় আর ব্রিটেন না নেয়, তবে এই ক্যাম্পগুলো “ইউরোপের গুয়ানতানামো” থেকে “ব্রিটেনের গুয়ানতানামো”তে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কমিশনের দাবি, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে যুক্তরাজ্যকে দ্রুত ও মানবিক উদ্যোগ নিতে হবে—অন্যথায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন ও জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি আরও বাড়বে।

সূত্রঃ আল জাজিরা

এম.কে

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম ও ওয়ালসালে শিশুদের ভবিষ্যৎ গড়তে নতুন প্রকল্প চালু

এপ্রিল হতে যুক্তরাজ্যের রাস্তায় চালু হতে যাচ্ছে কিছু নতুন আইন

বার্মিংহামে ১৯ ডিসেম্বর বিজয় মেলার আয়োজন