২০২৫ সালে যুক্তরাজ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জার স্থাপনের গতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। সরকারি নীতিতে অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগ ব্যয় বৃদ্ধি এবং ইভি রূপান্তরের ধীরগতির কারণে গত এক দশকের মধ্যে এটি সবচেয়ে মন্থর বার্ষিক প্রবৃদ্ধির পথে রয়েছে।
চার্জার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা জ্যাপম্যাপের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে মোট পাবলিক চার্জারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৭,২০০টিতে। এক বছরে নতুন যুক্ত হয়েছে মাত্র ১৩,৫০০টি চার্জার, যা ২০২২ সালের পর সর্বনিম্ন। ফলে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ২০ শতাংশের নিচে, যেখানে ২০২৪ সালে এই হার ছিল ৩৭ শতাংশ।
যদিও বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি এখনও বাড়ছে, তবে প্রত্যাশার তুলনায় সেই গতি কম। ২০২৫ সালের প্রথম ১১ মাসে যুক্তরাজ্যে মোট গাড়ি বিক্রির ২৩ শতাংশ ছিল ইভি, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৯ শতাংশ। কিন্তু কিছু গাড়ি নির্মাতা পেট্রোল থেকে ইভিতে রূপান্তরের গতি শ্লথ করেছে এবং চার্জিং অবকাঠামোতে বিনিয়োগকারীরাও সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।
গাড়ি নির্মাতাদের চাপে যুক্তরাজ্য সরকার বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির লক্ষ্য শিথিল করেছে, যা চার্জিং শিল্পের জন্য নেতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, ইভি বিক্রি কমে গেলে চার্জার স্থাপনে বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়বে।
এনার্জি অ্যান্ড ক্লাইমেট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের পরিবহন বিভাগের প্রধান কলিন ওয়াকার বলেন, সরকারের ইভি নিয়ে “মিশ্র বার্তা” এই ধীরগতির অন্যতম কারণ। তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৮ সাল থেকে বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর মাইল-প্রতি ৩ পেনি কর আরোপ এবং জিরো এমিশন ভেহিকল নীতিমালা দুর্বল করার ফলে ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
চার্জারের ধরন অনুযায়ী চিত্র কিছুটা ভিন্ন। ধীরগতির চার্জারের সংখ্যা বেড়ে ৪৮,১০০ হলেও এর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি মাত্র ১৫ শতাংশ। বিপরীতে, দীর্ঘ যাত্রার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অতিদ্রুত চার্জার ৩৯ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৯,৮০০টিতে পৌঁছেছে, যা তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক প্রবণতা নির্দেশ করে।
চার্জিং শিল্পের লবি সংগঠন চার্জইউকের প্রধান নির্বাহী ভিকি রিড বলেন, দ্রুত বেড়ে চলা ব্যয় এবং গ্রিড সংযোগ জটিলতার কারণে অনেক এলাকায় চার্জার স্থাপন ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে ধীরগতির চার্জার, যা রাতভর সাশ্রয়ী চার্জিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোর সংখ্যা প্রত্যাশার তুলনায় কম বেড়েছে।
তবে সব বিশ্লেষণই হতাশাবাদী নয়। গবেষণা সংস্থা সেনেক্সের মতে, গ্রেট ব্রিটেনে বর্তমানে পাবলিক চার্জিং সক্ষমতা চাহিদার তুলনায় প্রায় দেড় বছর এগিয়ে রয়েছে। মোটরওয়ের পাশে দ্রুতগতির চার্জারগুলো এতটাই উন্নত যে আগামী ছয় বছর পর্যন্ত নতুন চার্জার ছাড়াই চাহিদা সামাল দেওয়া সম্ভব।
আঞ্চলিক বৈষম্য এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। লন্ডনে প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য ৩০১টি পাবলিক চার্জার থাকলেও উত্তর আয়ারল্যান্ডে এই সংখ্যা মাত্র ৩৯টি। উত্তর আয়ারল্যান্ড, ইস্ট মিডল্যান্ডস এবং উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডে মাথাপিছু চার্জার স্থাপনের হার সবচেয়ে কম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৬ ও ২০২৭ সালে স্থানীয় বৈদ্যুতিক যানবাহন অবকাঠামো তহবিল (Levi) পুরোপুরি কার্যকর হলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে তার আগে নীতিগত স্থিরতা, গ্রিড সংযোগ সহজ করা এবং বিনিয়োগ ব্যয় কমাতে সরকারি সহায়তাই নির্ধারণ করবে যুক্তরাজ্যের ইভি চার্জিং ভবিষ্যৎ।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে

