ঋণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি মন্থর হয়ে গেছে কোম্পানিগুলোয় কর্মী নিয়োগের হার। উৎপাদন ও শ্রমবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সুদহারবিষয়ক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
আগস্টে শিল্পোৎপাদন কার্যক্রম বেড়েছিল যুক্তরাজ্যে। কিন্তু বড় পরিসরে বেসরকারি খাতের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মন্থরতাকে তা দূর করতে পারেনি। ব্যবসায়ীরা এর মধ্যে সুদহার পূর্বাভাসে পরিবর্তন এনেছেন। তাদের পূর্বাভাস, দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২১ সেপ্টেম্বরের সভায় সুদহার দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড় করাবে।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ড মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য কয়েক দফা সুদহার বাড়িয়েছে। কিন্তু অর্থনীতি মন্থর হয়ে যাওয়ায় এ প্রবণতায় ইতি টানা হতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। সুদহার বাড়ানোর সম্ভাবনা সেক্ষেত্রে অনেকটাই কম। সম্প্রতি শ্রমবাজারের তথ্য প্রকাশিত হয়। দেখা যায়, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিমাণ তুলনামূলক কমেছে। দেশটিতে টানা তৃতীয় মাসের মতো বেড়েছে বেকারত্বের হার। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নীতির প্রভাব পড়েছে শ্রমবাজারে। কোম্পানিগুলো নতুন কর্মী খোঁজার প্রবণতা কমিয়েছে।
এদিকে সুদহার বেশি হওয়ায় মন্থরতা এসেছে উৎপাদন কার্যক্রমে। উৎপাদন সূচকে ১ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট পতন ঘটেছে। পরিষেবা খাতে পতন ঘটেছে কম। অবশ্য শিল্পোৎপাদন খাতে ২০২১ সালের অক্টোবরের পর দ্বিতীয়বারের মতো সম্প্রসারণ হয়েছে কার্যক্রম। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগের চেয়ে বেশি আশাবাদী, মূল্যস্ফীতি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশে নেমে আসবে আগামী বছরে। গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি দাবি করেছিলেন, মূল্যস্ফীতির পতন বছরের শেষ দিকেই পরিলক্ষিত হবে। হেডলাইন মূল্যস্ফীতি কমছে। মানুষ আত্মবিশ্বাসী হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মজুরির ওপর এর প্রভাব নিয়ে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোয় ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে মূল্যস্ফীতির আতঙ্ক কিছুটা কমেছে। বেতন বৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্যের দাম কমানো এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছে। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার বাড়ানোর পূর্বাভাস দিয়েছে। যদিও ইউরোজোনের অর্থনীতি এখন মন্থরতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। জার্মানির অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে চলতি বছরে। ইউরোজোনের অন্য দেশগুলোর অবস্থাও খুব একটা ব্যতিক্রম নয়।
অর্থনীতিতে মন্থরতার আতঙ্ক এখনো দূর হয়ে যায়নি। উৎপাদন কার্যক্রমে সংকোচন চলতি বছরের শেষ মাসগুলোয়ও চলতে থাকবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, যুক্তরাজ্যের সুদহার দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করার সম্ভাবনা ৬৯ শতাংশ। সপ্তাহের শুরুর দিকেই এ হার ৮০ শতাংশে ছিল।
এম.কে
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩