6.4 C
London
December 23, 2024
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

এমসি কলেজে ধর্ষণের ঘটনা এবারই প্রথম নয়!

বিশেষ প্রতিনিধি: সিলেটের এমসি কলেজের হোস্টেলে স্বামীর সামনে স্ত্রীকে গণধর্ষনের ঘটনার পর থেকে শুরু হয় প্রতিবাদের ঝড়। সিলেট থেকে শুরু হওয়া এ প্রতিবাদ ছড়িয়ে যায় দেশব্যাপী, এমনকি বিদেশেও। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযুক্তদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

এদিকে এমসি কলেজের শিক্ষার্থী এবং স্থানীয়দের অভিযোগ, এমসি কলেজে এরকম ঘটনা এর আগেও অনেক হয়েছে। কিন্তু সামাজিক হয়রানির ভয়ে সেগুলো নিয়ে মামলা হয়নি বা প্রকাশ পায়নি। এমসি কলেজের একজন প্রাক্তণ শিক্ষার্থী ও শৈলী পাঠক সংঘের প্রতিষ্ঠাতা মাহা জেনেল নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তুলে ধরেন এ বিষয়ে তার অভিজ্ঞতার কথা।

মাহা জেনেলের বক্তব্য:

মাফ করবেন।

গতকাল এমসি কলেজে যেটা হয়েছে এরকম হাফ ডজন ঘটনা আমি জানি। এমসি কলেজে ভর্তির দিন থেকেই এইসব শুনে আসছি,দেখে আসছি। ভিসি বাংলো রোড,ছাত্রী হোস্টেলের বামপাশের পাহাড়,শহীদ মিনার রোড,কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের পিছনে সব জায়গাতেই এমন হয়ে আসছে। আমি যেহেতু রাজনৈতিক ছেলেপেলেদের সাথে বেশি মিশতাম তাই এসব জায়গায় কারা কি করতো আমার মুটামুটি জানা।ক্যাম্পাসের বাইরের প্রেমিক-প্রেমিকাদের দেখলে তারা কি কি করতো তা আবার আড্ডায় রসিয়ে রসিয়ে বলতো। আমি অবাক হতাম! কখনো যদি প্রতিবাদ করে বলতাম, ‘এইগুলা তো ঠিক না, ওরা প্রেম করুক না যা করুক তাতে তোমাদের কি সমস্যা?’ জবাব আসতো ওরা এসব করে নাকি ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট করছে! আমি কখনোই বুঝতে পারিনি প্রেম ভালোবাসা কিভাবে একটা পরিবেশ নষ্ট করে? চুমু দেয়ার মতো ব্যাপারও এতো অশ্লীল গণ্য করা হবে? ঠিক আছে, পরিবারের সামনে এটা দিতে লজ্জা লাগা উচিত, লজ্জা লাগেও কিন্তু লজ্জা এক জিনিস আর অশ্লীলতা আরেক ব্যাপার৷ একটা উত্তাল বয়সে সেটেল হওয়ার আগে বিয়েও করতে দিবেন না আবার প্রেমও করতে দিবেন না তাতে কি হয় জানেন? সেক্সুয়াল ফ্রাস্টেশন।

তাদের জিজ্ঞাসা কর‍তাম এইগুলা করে কি লাভ? তারা বলতো মজা লাগে। স্রেফ মজার জন্য তারা কি কি করতে পারে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।

কাল যেটা হয়েছে এটা এমসি কলেজে রেগুলার হয়ে আসছে৷ প্রেমিকা প্রেমিকা একসাথে থাকলে হেস্তনেস্ত করা,চড় থাপ্পড় দিয়ে মানিব্যাগ মোবাইল কেড়ে নেয়া, মেয়ের বুকে হাত দেয়া, এমনকি সুযোগ বুঝে মেয়েকে রেপ করা… কি হয় না?

কালকের ঘটনা কেন ফ্লাস হইছে জানেন? কারণ তারা স্বামী স্ত্রী ছিলো।আজ যদি তারা প্রেমিক প্রেমিকা হতো তাহলে কিছুই হতো না।কেউ জানতোও না।

২০১৮ সালে সেইম একটা ঘটনা ঘটেছে ভিসি বাংলো রোডে(কারা করেছে নামসহ বলে দিতে পারবো), ছেলে মেয়েকে আপত্তিকর অবস্থায় পেয়েছে এমন অযুহাতে মেয়েকে রেপ করা হয়,মোবাইল মানিব্যাগ রেখে দেয়া হয়। পরবর্তীতে ছেলেটা ক্যাম্পাসেরই হওয়াই জনৈক নেতা তাদের ধমক দিয়ে মোবাইল মানিব্যাগ ফেরত দিতে বলে। তারা বলে , “ভাই টাকা খরচ করে ফেলছি”,তখন নেতা বলে,” খরচ করে ফেললে কি আর করার অন্তত ওর মানিব্যাগ তো দিবি!”  বুঝেন এই হলো অবস্থা। ধর্ষণ যে হলো এটা নিয়ে কোন কথায় হয়নি।অবৈধ প্রেম করলে এরকম হবে এটাই নিয়তি আবার চ্যলারা এরকম একটু আধটু সুবিধা নিবে এটাও নিয়ম।

এতো কিছু লেখার কারণ হলো শুধুমাত্র তাদের জন্য যারা এসব কিছুই জানে এবং অনেকে নিজেরাও সরাসরি যুক্ত। তোমরা যারা আজ ধর্ষকের ফাসি চাই,হেন চাই তেন চাই করছো তোমরা তো সব জানো তারপরেও এসব লিখতে তোমাদের একটু বাধে না? এতোটা ভালোমানুষ কিভাবে সাজো তোমরা?

আর হ্যা এটা শুধু এমসি কলেজের চিত্র না,সারা বাংলাদেশের সব ক্যাম্পাসের চিত্র। কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে না আমার ক্যাম্পাস মেয়েদের জন্য নিরাপদ। কেননা আমরা সবাই জানি, সুযোগের অভাবে আমরা সবাই সৎ…

আখতার হোসেন আতিক কমেন্ট করেছেন:

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ এমসি কলেজের মর্যাদা ভুলণ্ঠিত করে নষ্ট রাজনীতি গডফাদার-নেতাদের ছত্রছায়ায় তথাকথিত ছাত্রনেতা-কর্মী সন্ত্রাসীরা একের পর এক ঘৃণ্য ঘটনার জন্ম দিয়ে যাচ্ছে। এখন মনে পড়ে, এমসি কলেজের ছাত্রাবাস পুড়িয়ে যারা উল্লাস করেছিলো তাদের কি বিচার হয়েছে? আমাদের দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে নষ্ট ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ না হলে এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকবে।

ফাহিমা আখতার নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন:

যে কোনো ঘটনা ঘটার সাথে সাথে প্রতিবাদ না করাটাও অন্যায়। অন্যায় যে করে আর যে সহ্য করে দুজনই সমান অপরাধী! এসব সত্য কথা গুলো আরো আগেই প্রকাশ করে দেওয়া দরকার ছিলো।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় স্বামীর সঙ্গে এমসি কলেজে ঘুরতে এসেছিলেন ওই তরুণী। এ সময় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে মহানগর ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী তাদের জোরপূর্বক কলেজের ছাত্রবাসে নিয়ে যায়। সেখানে একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে তরুণীকে গণধর্ষণ করে তারা।

রাত ১১টায় শাহপরাণ থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। বর্তমানে ওই তরুণী সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আই,সি,ইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

অভিযুক্তরা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক রণজিৎ সরকারের অনুসারী বলে তথ্য জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ছাত্রলীগ কর্মী যদিও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি নাহিয়ান খান জয় টিভি থ্রি বিশেষ প্রতিনিধিকে বলেছেন  এম,সি কলেজের ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতরা ছাত্রলীগের কেউ নন।

আরও পড়ুন: সিলেট এমসি কলেজের হোস্টেলে গণধর্ষণের প্রতিবাদে লন্ডনে মানববন্ধন

দেখুন সিলেট পরিক্রমা:


৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০
এমকেসি / এনএইচ

আরো পড়ুন

সেই উপস্থাপিকার কাছে ক্ষমা চাইলেন সাবেক বিচারপতি মানিক

ঈদবাজারে বিক্রি হচ্ছে না ভারতীয় পোশাক

প্রথমবারের মতো এস আলম গ্রুপের বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে