12.5 C
London
October 22, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

‘ওয়ান ইন, ওয়ান আউট’ স্কিমে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো আশ্রয়প্রার্থী ফের ছোট নৌকায় যুক্তরাজ্যে

‘ওয়ান ইন, ওয়ান আউট’ চুক্তির আওতায় ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো এক আশ্রয়প্রার্থী আবার ছোট নৌকায় করে যুক্তরাজ্যে ফিরে এসেছেন। দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি বর্তমানে যুক্তরাজ্যের একটি ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে আটক আছেন এবং দাবি করেছেন যে তিনি ফ্রান্সে মানবপাচারকারীদের হাতে আধুনিক দাসত্বের শিকার হয়েছিলেন।

 

হোম অফিসের সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মধ্যে হওয়া এই চুক্তির আওতায় যারা ছোট নৌকায় চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ব্রিটেনে পৌঁছায়, তাদের ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হয়, এবং বিনিময়ে সমান সংখ্যক শরণার্থীকে ফ্রান্স থেকে বৈধ পথে যুক্তরাজ্যে আনা হয়। তবে ফেরত পাঠানো ওই ব্যক্তি আবার যুক্তরাজ্যে ফিরে আসায় এই নীতির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আশ্রয়প্রার্থীটি বলেন, “যদি ফ্রান্স আমার জন্য নিরাপদ হতো, আমি কখনও যুক্তরাজ্যে ফিরে আসতাম না।” তিনি জানান, ফ্রান্সে ফেরত পাঠানোর পর তাকে প্যারিসের এক আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল, কিন্তু বাইরে বের হতে ভয় পেতেন কারণ পাচারকারীরা সেখানে ঘোরাফেরা করত। তিনি অভিযোগ করেন, পাচারকারীরা তাকে বনে বন্দি করে রাখে, জোর করে শ্রমে নিযুক্ত করে, অস্ত্রের মুখে হুমকি দেয় এবং সামান্য প্রতিবাদ করলেই হত্যার ভয় দেখায়।

“প্রতিদিন আতঙ্কে কাটত, প্রতিটি শব্দ, ছায়া বা অচেনা মুখ দেখলেই ভয়ে কাঁপতাম,” বলেন তিনি। “প্রথমবার যুক্তরাজ্যে পৌঁছালে হোম অফিস যখন জিজ্ঞেস করেছিল কী ঘটেছিল, আমি লজ্জা ও আতঙ্কে কিছুই বলতে পারিনি।”

মানবাধিকার সংগঠন Humans For Rights Network জানিয়েছে, ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলে পাচারকারীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এমন বহু আশ্রয়প্রার্থী তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ম্যাডি হ্যারিস বলেন, “আমরা ডানকার্ক ও ক্যালের পথ দিয়ে যুক্তরাজ্যে আসতে চাওয়া বহু মানুষের কাছ থেকে সহিংসতা, জোরপূর্বক শ্রম, মারধর, যৌন সহিংসতা ও দাসত্বের ভয়াবহ বর্ণনা শুনেছি।”

তিনি আরও বলেন, “যেসব মানুষ ‘ওয়ান ইন, ওয়ান আউট’ স্কিমে ফ্রান্সে ফেরত গেছেন, তারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের অনেকেই ফ্রান্সে আশ্রয়ের আবেদন করেও এখন রাস্তায় নিঃস্ব অবস্থায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।”

ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, “ফ্রান্সে ফেরত আসা ব্যক্তিরা মূল্যায়নের সময় আশ্রয় ও সহায়তা পাচ্ছেন। যারা নিজ দেশে ফিরতে সম্মত হয়েছেন, তাদের প্রস্তুতিমূলক কেন্দ্রে রাখা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, ফ্রান্স ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়ম অনুযায়ী ‘ডাবলিন স্কিম’ মেনে চলবে, যার মাধ্যমে আশ্রয়প্রার্থীদের সেই দেশে ফেরত পাঠানো হয়, যেখানে তারা প্রথম আবেদন করেছিলেন।

ব্রিটিশ হোম অফিস জানিয়েছে, গত সপ্তাহে ১৬ জন ছোট নৌকায় আসা অভিবাসীকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় দলগত ফেরত প্রেরণ। এ পর্যন্ত মোট ৪২ জনকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং ২৩ জনকে ফ্রান্স থেকে বৈধভাবে যুক্তরাজ্যে আনা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে হোম অফিসের মুখপাত্র বলেন, “আমরা আমাদের সীমান্তের কোনো অপব্যবহার সহ্য করব না। যারা যুক্তরাজ্যে থাকার বৈধ অধিকার রাখে না, তাদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেব। ফেরত পাঠানোর পর যারা অবৈধভাবে পুনরায় প্রবেশের চেষ্টা করবে, তাদেরও ফেরত পাঠানো হবে।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনার পর যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের যৌথ অভিবাসন নীতির কার্যকারিতা ও মানবাধিকার প্রশ্নে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে এযাবৎকালের উষ্ণতম দিনের পূর্বাভাস

বিশ্বে প্রথমঃ ইংল্যান্ডে চালু হলো ‘ট্রোজান হর্স’ ক্যানসার চিকিৎসা

বাংলাদেশের কাছে যেসব অস্ত্র বিক্রি করতে চায় যুক্তরাজ্য