মার্কিন প্রেসিডেন্টের একের পর এক বেপরোয়া সিদ্ধান্তে ব্যাপক ক্ষুব্ধ কানাডার মানুষ। এবার প্রতিবাদ জানাতে রাজপথে নেমেছে বিশ্বজুড়ে ‘বিনয়ী’ হিসেবে পরিচিত এই জাতি। কনুই উঁচিয়ে বিশেষ র্যালির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা।
প্রথমে ছিল শুল্কারোপের হুমকি-ধমকি, এরপর বাস্তবেই তা কার্যকর করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এরপর তার আর কোনো কথাকে নিছক ঠাট্টা হিসেবে নিচ্ছেন না কানাডার নাগরিকেরা। বিশেষ করে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য বানানোর যে কথা ট্রাম্প বলে আসছেন, তা নিয়ে এবার উদ্বিগ্ন দেশটির বাসিন্দারা। তারই প্রতিবাদ জানাতে কনুই উঁচিয়ে মাঠে নেমেছেন তারা।
‘এলবোজ আপ’ মূলত হকি খেলার একটি সংকেত—যার অর্থ ‘আমরা পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রস্তুত’। টি-শার্ট, ব্যানার থেকে শুরু করে কানাডার অলিগলি এখন ছেয়ে গেছে এই স্লোগান সংবলিত পোস্টারে।
এই আন্দোলন জোরদার হয়েছে মূলত একটি পডকাস্ট থেকে। কানাডার প্রখ্যাত সাংবাদিক জর্ডান হিথ-রলিংস, ক্ষোভ প্রকাশের জন্য তিনি ‘এলবোজ আপ’ শীর্ষক একটি পডকাস্ট চালু করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র–কানাডা দ্বন্দ্বকে একটি ‘তিক্ত বিবাহবিচ্ছেদ’–এর সঙ্গে তুলনা করেছেন।
জর্ডান বলেন, ‘আপনার জীবনের যেসব জিনিস স্বাভাবিক মনে হতো, হঠাৎ খেয়াল করলেন সেগুলো হারিয়ে গেছে। আপনাকে নতুন করে আত্মপরিচয় খুঁজতে হবে, আর আমি মনে করি, কানাডা এখন সেই পর্যায়ে রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কানাডীয়রা এখন সত্যিই ব্যথিত। একই সঙ্গে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। আমিও তার ব্যতিক্রম নই।’
সাংবাদিক জর্ডান পডকাস্টটির প্রথম পর্বেই আলোচনা করেছেন, কীভাবে একটি নাগরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করা যেতে পারে।
ক্ষুব্ধ কানাডীয়দের কেউ কেউ ট্রাম্পকে সাম্রাজ্যবাদী বলে আখ্যায়িত করছেন। শহরে শহরে আয়োজন করা হচ্ছে ট্রাম্পের বেপরোয়া, একরোখা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিশেষ র্যালি। শুধু তাই নয়, দেশটিতে ব্যাপকভাবে বয়কট করা হচ্ছে মার্কিন পণ্য। বিভিন্ন দোকান থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের খাবার-পানীয়-অ্যালকোহলসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্য। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণও বাতিল করছেন কানাডীয়রা। তারা বলছেন, কানাডার বহু দিনের পুরোনো মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। হঠাৎ করে তারা কানাডার সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, যা বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। আর এই বিশ্বাসঘাতকতা কোনোভাবেই মেনে নেবেন না তারা।
এলবোজ আপ র্যালির অন্যতম আয়োজক পিটার ওয়াল বলেন, ‘উদ্বেগ, হতাশা ও ক্ষোভের মিশ্রণ থেকে এই ধরনের পদক্ষেপগুলো নিচ্ছেন কানাডার নাগরিকেরা। আমাদের দীর্ঘদিনের মিত্র ও বন্ধু এখন আমাদের বিরুদ্ধে চলে গেছে, শত্রুর মতো আচরণ করছে। কী করব আমরা বুঝতে পারছি না। কানাডার নাগরিকেরা চরমভাবে ব্যথিত’।
গত শুক্রবার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কণ্ঠেও উচ্চারিত হয়—‘এলবোজ আপ’। বলেন, ‘যত দিন সম্ভব কূটনীতি দিয়েই সমাধান চায় কানাডা। কিন্তু প্রয়োজনে লড়াই করতেও প্রস্তুত আমরা।’
এম.কে
১৬ মার্চ ২০২৫