TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

কর্মী শোষণে দ্বিতীয় ঝুঁকিপূর্ণ খাত হয়ে উঠছে যুক্তরাজ্যের নির্মাণ শিল্প

অ্যান্টি-স্লেভারি দাতব্য সংস্থা আনসিন-এর হেল্পলাইন তথ্য দেখিয়েছে যে যুক্তরাজ্যের নির্মাণশিল্পে আধুনিক দাসত্বের ঝুঁকি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ২০২৪ সালে সম্ভাব্য শোষণের অভিযোগে নির্মাণখাত থেকে ৪৯২টি কল তারা পেয়েছে, যা কেয়ার সেক্টরের পরেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

সংস্থাটি জানায়, নির্মাণ খাত এখন আধুনিক দাসত্বের নতুন হটস্পট হিসেবে দ্রুত উন্মোচিত হচ্ছে। অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ হওয়া সত্ত্বেও এবং আগামী পাঁচ বছরে ১৫ লাখ ঘর নির্মাণের জাতীয় পরিকল্পনার কেন্দ্রে থাকা সত্ত্বেও এই খাতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে।

দাতব্য বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান সিসিএলএ কয়েক বছর ধরেই এ খাতে শ্রমিক শোষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। তাদের মূল্যায়নে দেখা গেছে, ২০১৫ সালের মডার্ন স্লেভারি অ্যাক্ট বাস্তবায়নে নির্মাণশিল্প স্পষ্টভাবে পিছিয়ে আছে। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে—শারীরিকভাবে কঠিন পরিবেশ, অভিবাসী শ্রমিকের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা এবং বিচ্ছিন্ন কর্মস্থল, যা অনেক শ্রমিককে শোষণের মুখে ফেলে।

সেফগার্ডিং মন্ত্রী জেস ফিলিপস বলেন, নির্মাণশিল্প জাতীয় স্বপ্ন পূরণের অন্যতম ভরসা হলেও এর ভেতরে শোষণের ঝুঁকি অত্যন্ত উচ্চ। তিনি সতর্ক করে বলেন, “আধুনিক দাসত্ব সর্বত্র রয়েছে। যদি কেউ এটিকে খুঁজে না পায়, তাহলে বুঝতে হবে সে যথেষ্ট খুঁজছে না।”

পার্লামেন্টে চলমান এমপ্লয়মেন্ট রাইটস বিল আধুনিক দাসত্ব মোকাবিলায় কিছু সুরক্ষা যোগ করলেও নাগরিক সমাজের দাবি—এই সুরক্ষাগুলো যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি সরকার সরবরাহচেইনের স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন নির্দেশনা দিলেও বাস্তব প্রয়োগে বড় ফাঁক রয়ে গেছে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে—নির্মাণ শিল্পের প্রকৃত পরিস্থিতি এখনও আড়ালে রয়ে গেছে। যথাযথ তথ্য, রিপোর্টিং ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় শোষণের ঘটনাগুলো সামনে আসে না, ফলে প্রকৃত মাত্রা বোঝা যাচ্ছে না।

সিসিএলএ–র আধুনিক দাসত্ববিষয়ক পরিচালক সারা থর্নটন জানান, বহুতল সাবকন্ট্রাক্টিং, ক্যাজুয়াল লেবারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার এবং দক্ষ কর্মীর ঘাটতি নির্মাণশিল্পকে শোষণের বিশেষ ঝুঁকির মধ্যে রেখেছে। পাশাপাশি কাঁচামালের আন্তর্জাতিক সরবরাহচেইনের অস্বচ্ছতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে।

এদিকে নির্মাণশিল্পে দাসত্বের শিকার ফ্র্যাঙ্ক (ছদ্মনাম) নিজের তিন বছরের দুঃসহ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, প্রতারণা ও হুমকির মাধ্যমে তাকে ও তার ১৪ বছরের ছেলেকে নির্মম পরিশ্রমে বাধ্য করা হয়। তিনি জানান, অমানবিক কষ্ট, অল্প খাবার এবং কঠোর আবহাওয়ায় কাজ করতে করতে একসময় তিনি ভেঙে পড়েন। এরপর তাকে ও তার ছেলেকে একটি অচেনা এলাকায় ফেলে পালিয়ে যায় দাসব্যবসায়ীরা।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এ ধরনের অজানা ও অদেখা গল্পই প্রমাণ করে—যুক্তরাজ্যের নির্মাণশিল্পে আধুনিক দাসত্ব বাস্তবতা, এবং এটি দ্রুত মোকাবিলা জরুরি।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে খারাপ আবহাওয়ার কারণেও পেতে পারেন নগদ অর্থ

পার্টিগেট কেলেঙ্কারির কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এমপির পদত্যাগ

যুক্তরাজ্যে শিশুকে অচেনা নারীর জিজ্ঞাসাবাদঃ স্কুলের সতর্কবার্তা অভিভাবকদের জন্য