TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

কালো ও এশীয়দের ভুল শনাক্তে শীর্ষেঃ ফেসিয়াল রিকগনিশন নিয়ে তদন্তের দাবি জোরালো

যুক্তরাজ্যের হোম অফিস স্বীকার করেছে যে পুলিশের ব্যবহৃত ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি নির্দিষ্ট সেটিংসে কালো ও এশীয় ব্যক্তিদের ভুল শনাক্ত করার ঝুঁকি সাদা মানুষের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। ফলে প্রযুক্তিটির নিরাপত্তা, ন্যায়সংগততা এবং ব্যাপক ব্যবহারের বিষয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

 

ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরি (এনপিএল) পরিচালিত সাম্প্রতিক পরীক্ষায় দেখা যায়, কম-স্তরের সেটিংসে এ প্রযুক্তির ভুল শনাক্তের হার এশীয়দের জন্য ৪% এবং কালো মানুষের জন্য ৫.৫%, যেখানে শ্বেতাঙ্গদের ক্ষেত্রে মাত্র ০.০৪%। বিশেষ উদ্বেগের বিষয়, কালো নারীদের ভুল শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৯.৯%—যা তালিকার সবার উপরে।

পুলিশ অ্যান্ড ক্রাইম কমিশনারদের সংগঠন এপিসিসি এই ফলাফলকে “প্রযুক্তিতে উদ্বেগজনক জাতিগত পক্ষপাতের প্রমাণ” বলে অভিহিত করে। তারা প্রশ্ন তোলে কেন এই তথ্য আগে জনসমক্ষে আনা হয়নি এবং কেন সংশ্লিষ্ট জাতিগত সম্প্রদায়গুলোকে জানানো হয়নি। তাদের ভাষায়, “ব্যক্তিগত ক্ষতির প্রমাণ না থাকলেও, এটি ছিল ভাগ্য; নকশাগত নিরাপত্তার অভাব স্পষ্ট।”

এরপরও সরকার ফেসিয়াল রিকগনিশন ব্যবহারের পরিসর বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে এবং এ বিষয়ে ১০ সপ্তাহের গণপরামর্শ ঘোষণা করেছে। এতে জনসাধারণের মত নেওয়া হবে—পুলিশ কি তাদের নিজস্ব ডাটাবেস ছাড়াও পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছবিতে প্রবেশাধিকার পাবে কি না।

মানবাধিকার সংস্থা ‘লিবার্টি’ বলছে, বৈষম্যমূলক অ্যালগরিদম দিয়ে প্রতি মাসে হাজারো অনুসন্ধান হচ্ছে, কিন্তু এর ফলে কত মানুষ ভুলভাবে সন্দেহভাজন হয়েছেন—তা অজানা। তাদের বক্তব্য, “স্বচ্ছতা, কঠোর নজরদারি ও স্পষ্ট আইনি কাঠামো ছাড়া এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা জনঅধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করছে।”

অন্যদিকে সমালোচকরা সতর্ক করে বলছেন, শপিং সেন্টার, স্টেডিয়াম বা পরিবহন কেন্দ্রগুলোতে নজরদারি ক্যামেরা বসানো হলে যুক্তরাজ্য যেন “বিগ ব্রাদার ব্রিটেনে” পরিণত হয়। সাবেক মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস বলেন, “এত বড় পরিসরের প্রযুক্তি ব্যবহারের আগে সংসদে বিস্তৃত বিতর্ক প্রয়োজন।”

হোম অফিস জানিয়েছে, তারা ইতোমধ্যে নতুন এক অ্যালগরিদম সংগ্রহ করেছে যা স্বাধীন পরীক্ষায় ‘গুরুত্বপূর্ণ কোনো পক্ষপাত’ দেখায়নি। এটি আগামী বছর পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে। পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীতে ব্যবহৃত প্রযুক্তির কার্যকারিতা ও ঝুঁকি মূল্যায়নে পুলিশের পরিদর্শন সংস্থা ও ফরেনসিক সায়েন্স রেগুলেটরকে যৌথ পর্যালোচনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ মুহূর্তে যুক্তরাজ্যে প্রযুক্তিটির প্রসার থামানো হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত এখনও অনিশ্চিত। তবে পক্ষপাত ও ভুল শনাক্তের ঝুঁকি সামনে আসায় ফেসিয়াল রিকগনিশন নিয়ে বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

ইসরায়েলে কিছু অস্ত্র রপ্তানি স্থগিত করছে যুক্তরাজ্য, জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

এসাইলাম প্রার্থীদের ব্যাকলগ পরিষ্কার করতে চায় যুক্তরাজ্য

যে কারণে যুক্তরাজ্যে কেউ আর ট্রাক চালাতে চান না