1.4 C
London
November 22, 2024
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

কিয়ার স্টারমারের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক সংস্কার

প্রায় দেড় দশক পর নির্বাচনে জিতে ইংল্যান্ডে ক্ষমতায় এল লেবার পার্টি। ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে বসেছেন কিয়ার স্টারমার। নির্বাচনে রক্ষণশীলদের ভরাডুবির কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে ব্রিটিশ অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থাকে। বিষয়টিকে কিয়ার স্টারমারের লেবার পার্টি সরকারের জন্যও সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় ধরনের সংস্কার ছাড়া দ্রুত এ চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে না।

কনজারভেটিভ পার্টির ১৪ বছরের শাসন বিশেষ করে শেষ দিকে কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে যুক্তরাজ্য। আর্থিক কৃচ্ছ্রতা, বেক্সিট, কোভিডের অভিঘাত, কর-রাজস্বে পতনসহ একের পর এক বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে দেশটিকে। বছরের পর বছর দ্রুতগতিতে বেড়েছে সরকারি ঋণ। আর সাম্প্রতিক সময়ে আয়ে স্থবিরতা, জীবনযাত্রার মানে পতন ও ব্যবসায়িক বিনিয়োগ কমে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো পরিস্থিতিকে আরো কঠিন করে তোলে।

যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধান আইন কর্মকর্তা কিয়ার স্টারমারের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বেশি দিনের নয়, ২০১৫ সালে পার্লামেন্টে প্রবেশ করেন তিনি। নির্বাচনে জিতে তাৎক্ষণিক বক্তব্যে শোনালেন আশাবাদ। তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্ত থেকে পরিবর্তন শুরু হলো।’ তবে পরিবর্তন যে সহজ নয় সেটা আগে থেকে বলে আসছেন বিশ্লেষকরা। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একগুচ্ছ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এতে সরকারি ও বেসরকারি দুই পর্যায়ে সংস্কারের প্রয়োজন পড়বে। এ সমস্যার তালিকা বেশ দীর্ঘ—দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্তে থাকা স্থানীয় সরকার, ভেঙে পড়া অবকাঠামো, দীর্ঘস্থায়ী আবাসন ঘাটতি, গৃহহীনের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা ও জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা সংকট।

ক্রেডিট রেটিং সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের তথ্যানুসারে, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে কর-জিডিপি অনুপাত শতভাগের কাছাকাছি। যদিও নির্বাচনে সব পক্ষই বড় ধরনের কর না বাড়িয়ে নিম্নমুখী পরিষেবা খাত ও অবকাঠামোর উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এসঅ্যান্ডপির জ্যেষ্ঠ পরিচালক ফ্রাংক গিলের মতে, রাজস্ব ও ব্যয়ের ভারসাম্যের মধ্যে নতুন সরকারের আর্থিক সফলতা নির্ভর করছে।

গত মার্চে ক্রেডিট রেটিং সংস্থা ঋণমানে যুক্তরাজ্যকে ‘এএ-’ অর্থাৎ স্থিতিশীল রেটিং দেয়। এ রেটিং মুডি’সের কাছাকাছি হলেও এসঅ্যান্ডপির ‘এএ’ থেকে এখনো নিচে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানে নতুন সরকারের সামনে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঋণের বোঝা। কারণ দেশটির অর্থনীতির আকারের তুলনায় ঋণের বোঝা বেশ বড়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের অনিবার্য উপায় কর বাড়ানো বা সরকারি ব্যয় কমানো। কিন্তু জনগণের করচাপ তথা ব্যয় বেড়ে যাওয়া জনিত টানাপড়নে ২০২২ সালে মাত্র ৪৯ দিনের মাথায় প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয় লিজ ট্রাসকে।

বর্তমানে ১৬-৬৪ বছর বয়সী ব্রিটিশ কর্মজীবীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ২৪ লাখ। এর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার কারণে ২৮ লাখের বেশি মানুষ বেকার। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসে প্রায় ৬৭ লাখ মানুষ ইউনিভার্সাল ক্রেডিটের আওতায় সরকারি সাহায্য নিচ্ছে।

এসব সমস্যার সমাধান করা আরো কঠিন করে তুলছে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পতন। সম্প্রতি এক দফা মন্দাও দেখে ফেলেছে যুক্তরাজ্য। গত বছর যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি খুব কমই বেড়েছে। ২০১০ সালের তুলনায় মূল্যস্ফীতিকে সমন্বয় করলে দেশটিতে বেতন বাড়ার হার খুবই কম।

গত মাসে পরামর্শক সংস্থা রেজল্যুশন ফাউন্ডেশন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, করোনা-পরবর্তী বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর থেকে যুক্তরাজ্য স্থবিরতার মধ্যে রয়েছে। অর্থনৈতিক সক্ষমতার সূচক উৎপাদনশীলতায় এক দশকের বেশি সময় ধরে অস্বাভাবিক দুর্বল যুক্তরাজ্য। এ অবস্থার পরিবর্তনে ব্যবসা ও সরকারের বিনিয়োগে বড় অংকের অর্থ প্রয়োজন হবে।

রেজল্যুশন ফাউন্ডেশনের গবেষণা পরিচালক গ্রেগরি থোয়াইটস বলেন, ‘উচ্চতর বিনিয়োগের মাধ্যমে অবকাঠামো, সরঞ্জাম এবং গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এতে কর্মীরা আরো দক্ষ হয়ে উঠবেন। উচ্চ উৎপাদনশীলতার মাধ্যমে উচ্চ জিডিপি ও উচ্চ মজুরি অর্জিত হবে।’

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, লেবার সরকার এরই মধ্যে অগ্রাধিকার হিসেবে উচ্চ সরকারি বিনিয়োগ, নতুন শিল্প কৌশল ও নীতি সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছে। তবে একই সঙ্গে সরকারি ঋণের লাগাম টানার ঘোষণা দিলেও কর ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে এড়িয়ে গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে পূর্বাভাসের চেয়ে অর্থনীতি বেশি শক্তিশালী হবে— এমন আশা করছে ব্রিটিশ সরকার। এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ফিসক্যাল স্টাডিজের (আইএফএস) পরিচালক পল জনসনের মত হলো প্রবৃদ্ধি যদি চমক জাগিয়ে বেড়ে যায়, আমাদের হিসাব মেলানো সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু এটি না হলে ব্যয় কমাতে হবে বা বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না। একই সঙ্গে বাড়তে পারে কর।

লেবার পার্টির উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ৭৩০ কোটি পাউন্ড বা ৯৩০ কোটি ডলারের ন্যাশনাল ওয়েলথ ফান্ডে বিনিয়োগ। বিস্তৃত শিল্পকৌশল হিসেবে এর আওতায় রয়েছে অবকাঠামো নির্মাণ ও গ্রিন এনার্জি ট্রানজিশন। নতুন সরকারি কোম্পানি গ্রেট ব্রিটিশ এনার্জি নিয়ে সরকারের রয়েছে বড় পরিকল্পনা। এর মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যের এনার্জি গ্রিডকে ডিকার্বনাইজ করার লক্ষ্য তাদের। এতে বিনিয়োগ হবে ৮৩০ কোটি পাউন্ড বা ১ হাজার ৬০ কোটি ডলার। এ অর্থের কিছু অংশ আসবে জ্বালানি কোম্পানিগুলো থেকে পাওয়া উইন্ডফল ট্যাক্সের মাধ্যমে।

সূত্রঃ রয়টার্স

এম.কে
১০ জুলাই ২০২৪

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বৃহৎ কোম্পানিগুলোর অগ্রগতি ক্ষীণ

যুক্তরাজ্যে অভিবাসন আইনে পরিবর্তন

অনলাইন ডেস্ক

টিকার চেয়ে লকডাউন বেশি কার্যকর: বরিস জনসন