TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

কিয়ের স্টারমার বলছেন টাকা নেই – আমি তাকে বিশ্বাস করি নাঃ জেরেমি করবিন

বর্তমান লেবার সরকারের সমালোচনা করেছেন জেরেমি করবিন। তিনি বলেন, যখনই যুক্তরাজ্যের বিশাল সংকট মোকাবিলা করার কথা আসে, তখনই সকল সরকারের প্রতিক্রিয়া প্রায় একই রকম হয়।

কিয়ের স্টারমার যখন সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির ঘোষণা দেন এবং র‍্যাচেল রিভস যখন কল্যাণ বাজেটে কাটছাঁটের পরিকল্পনা করেন, তখন আমাদের মনে রাখা দরকার যে, সরকারি অর্থ ব্যয়ের সিদ্ধান্ত সমাজের সবচেয়ে দুর্বল মানুষদের ওপর কী প্রভাব ফেলে।

এই মুহূর্তে, যুক্তরাজ্যে ৪.৩ মিলিয়ন শিশু আপেক্ষিক দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে। শুধুমাত্র ইংল্যান্ডেই ৩,৫০,০০০ মানুষ গৃহহীন।

লাখো মানুষ গরমের খরচ নিয়ে উদ্বিগ্ন, কারণ জ্বালানির বিল আবারও বেড়ে যাবে। অন্যদিকে, ধনকুবেররা আগের চেয়ে আরও বেশি সম্পদশালী হয়ে উঠছে।

সরকার চাইলে শিশুদের দারিদ্র সীমার বাইরে আনতে পারত দুই-সন্তান ভাতার সীমা বাতিল করে।
তারা চাইলে পেনশনভোগীদের সাহায্য করতে পারত শীতকালীন জ্বালানি ভাতা প্রদান করে।
তারা চাইলে কাউকে রাস্তায় ঘুমাতে না দিয়ে বৃহৎ পরিসরের সরকারি আবাসন নির্মাণ প্রকল্প শুরু করতে পারত।

কিন্তু এসব না করে, সরকার সামরিক ব্যয়ে ১৩.৪ বিলিয়ন পাউন্ড বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই অর্থ দিয়ে দুই-সন্তান ভাতা সীমা অন্তত ১০ বার বাতিল করা যেত।

এখন আমাদের জানানো হচ্ছে যে সরকার কল্যাণ বাজেট থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন পাউন্ড কেটে ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তারা হয়তো আবার বলবে, “এটি কঠিন সিদ্ধান্ত”— যেমন কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল শিশুদের দারিদ্র্য থেকে না তোলা।

বা কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল শীতকালীন জ্বালানি ভাতা কেটে দেওয়া, ২-পাউন্ড বাস ভাড়া সীমা তুলে দেওয়া এবং বিদেশি সাহায্য কমানো।

কিন্তু কেন যেন সরকার সবসময় “কঠিন সিদ্ধান্ত” নেয় তখনই, যখন তা সমাজের সবচেয়ে দুর্বলদের ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিন্তু প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি করা একদমই সময়োচিত সিদ্ধান্ত নয়।

দারিদ্র্যের জন্য কোনো টাকা নেই, কিন্তু যুদ্ধের জন্য সবসময় টাকা আছে

কিয়ের স্টারমার বলেছেন, প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির ফলে মানুষের পকেটে টাকা যাবে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, কাদের পকেটে?

আসলে, তারা যা বলতে চাইছে তা হলো— ট্যাক্সপেয়ারদের অর্থ সরাসরি অস্ত্র কোম্পানিগুলোর কাছে চলে যাবে। যুদ্ধে বিজয়ী শুধু এই অস্ত্র ব্যবসায়ীরা।

অন্যদিকে, অস্ত্র প্রতিযোগিতার কারণে কোটি কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে— তা যুক্তরাজ্যের নিজস্ব সামরিক ব্যয় হোক বা অন্য দেশকে অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে হোক।

আমরা কখনো ভুলতে পারি না যে, ব্রিটিশ তৈরি বোমায় মানুষ নিহত হয়েছে। এমনকি ডেভিড ল্যামি নিজেও স্বীকার করেছেন যে গাজা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

কিন্তু তিনি ভুলে গিয়েছেন যে, গাজা ধ্বংস হয়েছে সেইসব অস্ত্রের মাধ্যমে, যা আমাদের দেশসহ বিভিন্ন দেশ সরবরাহ করেছে।

আমরা যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।

এই কারণেই আমি এবং আমার সহকর্মীরা ইসরায়েলের প্রতি অস্ত্র বিক্রি বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছি।

আমরা এমন একটি বৃহৎ আন্দোলনের অংশ, যেখানে সকল ধর্মের মানুষ এবং নাস্তিকরাও রয়েছেন। যারা গাজা, ইউক্রেন, ইয়েমেন, সুদান, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো ও অন্যান্য অঞ্চলে যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে।

কিন্তু শান্তির পথ বেছে নেওয়ার পরিবর্তে, কিয়ের স্টারমার যুদ্ধকে আরও ত্বরান্বিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এই সপ্তাহে, আমি উদ্বেগ প্রকাশ করেছি যখন কিয়ের স্টারমার ব্রিটিশ সেনাদের ইউক্রেনে পাঠানোর সম্ভাবনার কথা বলেছেন।

যুদ্ধে কোনো গৌরব নেই, আছে শুধু মৃত্যু ও ধ্বংস।

রাজনীতিবিদরা যখন কূটনীতির ভাষা ব্যবহার করতে ব্যর্থ হন, তখন তাদের মনে রাখা উচিত— মূল্য দিতে হয় অন্যদের সন্তানদের।

আমরা প্রকৃত নিরাপত্তার দাবি জানাই

কিয়ের স্টারমারকে অবশ্যই ব্যাখ্যা করতে হবে যে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির ফলে গৃহায়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা বাজেটে কী প্রভাব পড়বে।

প্রাথমিক লক্ষণ ভালো নয়।

প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিরাপত্তার কথা বলছেন, কিন্তু বাস্তব নিরাপত্তা হলো— একটি নিরাপদ ছাদের নিচে থাকা, পর্যাপ্ত খাবার পাওয়া এবং প্রয়োজনের সময় একটি সম্পূর্ণ-সরকারি NHS-এর সেবা পাওয়া।

এই দিক দিয়ে, সরকার বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।

নির্বাচনের সময় আমি বলেছিলাম, যদি সরকার মানুষের জীবনমানের উন্নতি ঘটায়, আমি অভিনন্দন জানাবো; কিন্তু যদি ব্যর্থ হয়, আমি সেটাও প্রকাশ করবো।

যেমন, আমি ভাড়াটিয়াদের অধিকার সুরক্ষিত করতে “রেন্টার্স রিফর্ম বিল” পাস হওয়াকে স্বাগত জানিয়েছি।
কিন্তু আমি হতাশ যে সরকার এখনো ভাড়া নিয়ন্ত্রণ নীতি বাস্তবায়ন করেনি।

তেমনি, আমি খুবই চিন্তিত বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ নিয়ে, যা স্বাস্থ্যসেবাকে দুই স্তরে বিভক্ত করতে পারে এবং NHS-এর মূল নীতিকে নষ্ট করতে পারে— ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।

এদিকে, আপনার জ্বালানির বিল বেড়ে গেছে, আর বেসরকারি কোম্পানিগুলো ৪ বিলিয়ন পাউন্ড লাভ করেছে।

সরকার চাইলে এখনই এই অবস্থা বদলাতে পারত— এই কোম্পানিগুলোকে সরকারি মালিকানায় ফিরিয়ে এনে।

কিন্তু তারা তার পরিবর্তে ব্যবহারকারীদের উপর ব্যয় চাপিয়ে দিচ্ছে।

এদিকে, সরকার নিজ দেশের ব্যর্থতাগুলো আড়াল করতে শরণার্থীদের বলির পাঁঠা বানাচ্ছে।

তারা নিষ্ঠুরভাবে অভিবাসীদের দেশছাড়া করার ফুটেজ প্রচার করছে এবং ছোট নৌকায় আসা মানুষদের যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব চিরতরে নিষিদ্ধ করছে।

শরণার্থীরা আমাদের শত্রু নয়। তারা আমাদের ভবিষ্যৎ ডাক্তার, শিক্ষক, বন্ধু এবং প্রতিবেশী।

নাইজেল ফারাজের মতো ঘৃণার রাজনীতি অনুকরণ করলে তা ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে, আর মূল্য দিতে হবে দুর্বল মানুষদের— যেমন মূল্য দিতে হবে প্রতিরক্ষা ব্যয় ও কল্যাণ বাজেট কাটছাঁটের কারণে।

আমাদের বিকল্প পথ বেছে নিতে হবে

একটি মানবিক সমাজ গড়ার জন্য করপোরেট লোভ নয়, মানুষের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

সবচেয়ে ধনীদের ওপর উচ্চ কর আরোপ করে স্কুল ও হাসপাতাল পুনর্নির্মাণ করতে হবে।

জ্বালানি, পানি, রেল ও স্বাস্থ্যসেবার বেসরকারিকরণ বন্ধ করতে হবে।

যুদ্ধের পরিবর্তে কল্যাণে বিনিয়োগ করতে হবে।

মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ কিয়ের স্টারমারকে ভোট দিয়েছিলেন পরিবর্তনের আশায়।

তারা এখনো অপেক্ষা করছেন খারাপ সময়ের। যা হতে দেয়া উচিত নয়।

সূত্রঃ মেট্রো

এম.কে
০৬ মার্চ ২০২৫

আরো পড়ুন

মেট পুলিশের সার্জেন্টের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ

বেলারুশের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাজ্যে টেলি-কমিউনিকেশন ব্যবসায় একীভূত হচ্ছে বড় দুই জায়ান্ট