রাষ্ট্র দ্রোহিতার মামলার আসামি বিতর্কিত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর পক্ষে আদালতে আসেনি কোন আইনজীবী। তার জামিন আবেদনের শুনানি ছিল আজ মঙ্গলবার। মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালতে এই জামিন শুনানিতে অংশ নেন রাষ্ট্র পক্ষে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী। কিন্তু চিন্ময়ের পক্ষে কেউ আসেনি।
সাধারণ আইনজীবীরা বলছেন, দেশ বিরোধী কর্মকাণ্ড এবং আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার পর চিন্ময় এবং তার উগ্রপন্থি সমর্থকদের প্রতি যে ঘৃণা এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে আজ তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আইনজীবীরা তার পক্ষে দাঁড়াতে আসেনি। সাধারণ হিন্দুদের কেউ তার সমর্থনে আদালত এলাকায় আসেনি। অপকর্মের কারণে তাকে খোদ সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজনও ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেছে বলে মনে করেন সাধারণ আইনজীবীরা।
তারা বলেন, এটা এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপির হয়ে এ দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা যারা করছে চিন্ময় তাদের একজন। সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে তার এমন দেশ বিরোধী কর্মকাণ্ড সাধারণ হিন্দুদের মাঝেও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। কারণ তারা এ দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার পক্ষে।
বিগত ২৬ নভেম্বর তার জামিন আবেদন নামঞ্জুরকে কেন্দ্র করে যে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে তার দায়ও কেউ নিতে চাইছেন না। জানা গেছে চিন্ময়ের সাথে কিছু উগ্রবাদী ইসকন সদস্য এবং ভারতের কেনা কিছু চিহ্নিত দালাল ছাড়া আর কেউ নেই। আদালতে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে আজ। আদালত আগামী ২ জানুয়ারি তার জামিন আবেদন শুনানির পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন।
এর আগে ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের এ মামলায় জামিন নাকচ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম। ওই আদেশের পর আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে চিন্ময়ের সমর্থক উগ্রবাদী লোকজন। আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে নিয়ে যায়।
বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করে। তারা কোর্টে হিল মসজিদ হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এরপর আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে সাইফুল ইসলাম আলিফ নামের এক আইনজীবীকে হত্যা করা হয়।
জামিন নামঞ্জুর হবার পর সেদিনই চিন্ময় দাশের আইনজীবীরা ওই আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন চেয়ে আবার জামিন আবেদন করেছিলেন। তবে সেদিন আর শুনানি হয়নি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত হামলার প্রতিবাদে আট দফা দাবিতে সনাতনী সম্প্রদায়ের মুখপাত্র হিসেবে বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন চট্টগ্রামের ইসকন পরিচালিত মন্দির পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রক্ষচারী।
গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে জনসভার মিছিল নিয়ে নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে বিজয় স্তম্ভে ছাত্র-জনতার উড়ানো জাতীয় পতাকার উপর জঙ্গিবাদি গোষ্ঠীর গেরুয়া পতাকা উড়িয়ে জাতীয় পতাকার প্রতি অবমাননা করা হয়। ওই ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হলে ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়, সেখানে চিন্ময় দাশকেও আসামি করা হয়। মামলা হওয়ার এক মাসের মাথায় ২৫ নভেম্বর বিকালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে জানানো হয়, কোতোয়ালি থানার ওই মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর প্রতিবাদে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা, দিনাজপুর, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ চলে। চিন্ময় দাশকে সেদিন রাতেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নেওয়া হয়। পরদিন আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয় কারাগারে। এতে আদালত এলাকায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধাদানের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করেছে।
এছাড়া আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার ঘটনায় তারা বাবা বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেছেন। পাশাপাশি আলিফের ভাই খানে আলম বাদী হয়ে যানবাহন ভাঙচুর ও জনসাধারণের উপর হামলার ঘটনায় ১১৬ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেছেন নগরীর কোতোয়ালী থানায়।
এম.কে
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪