যুক্তরাজ্যে ২৪ সপ্তাহের আগে গর্ভপাতের কারণে মা-বাবা কিংবা সঙ্গীরা ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ডে দুই সপ্তাহের ছুটি অধিকারের সুবিধা পাবেন।
নতুন শ্রম অধিকার বিলের অধীনে, গর্ভধারণের ২৪ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই গর্ভপাতের শিকার হলে, মায়েরা এবং তাদের সঙ্গীরা দুই সপ্তাহের শোকাবকাশ পাবেন। গার্ডিয়ান প্রকাশ করেছে, ফ্ল্যাগশিপ ওয়ার্কার রাইটস রিফর্মের অংশ হিসাবে যুক্তরাজ্যে শোকাবকাশের (bereavement leave) অধিকার দেয়া হবে।
ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ডে লেবার পার্টির কর্মসংস্থান সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য এই বিলটি আগামী সপ্তাহে সংসদে চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে যাচ্ছে।
বর্তমানে, অভিভাবকরা শোকাবকাশ পাওয়ার অধিকারী হন শুধুমাত্র তখনই, যখন তারা ২৪ সপ্তাহের পর গর্ভস্থ সন্তান হারান বা মৃত সন্তানের জন্ম দেন।
এই অধিকার ২৪ সপ্তাহের আগেই গর্ভপাত হওয়া দম্পতিদের জন্য প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত একটি বড় বিজয় বলে বিবেচিত হচ্ছে। লেবার এমপি সারা ওয়েন দীর্ঘদিন ধরে এই পরিবর্তনের জন্য প্রচারণা চালিয়েছেন।
নারী ও সমতা বিষয়ক সংসদীয় কমিটি, জানুয়ারির এক প্রতিবেদনে জানায় এই আইনি পরিবর্তনের পক্ষে “অপ্রতিরোধ্য” যুক্তি রয়েছে।
যদিও যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকটি বড় নিয়োগকর্তা আগে থেকেই এই ছুটির সুবিধা দিচ্ছে, কমিটি বলেছে যে শিশু হারানোর শারীরিক ও মানসিক প্রভাব বিবেচনা করে এটি সকলের জন্য একটি সর্বজনীন অধিকার হওয়া উচিত।
প্রতি বছর যুক্তরাজ্যে প্রায় ২,৫০,০০০ নারী গর্ভপাতের শিকার হন। গবেষণা বলছে, ১০% থেকে ২০% গর্ভধারণ ১২ সপ্তাহের মধ্যেই গর্ভপাতের মাধ্যমে শেষ হয়।
ব্যবসা ও কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী জনাথন রেনল্ডস ব্যক্তিগতভাবে গর্ভপাতজনিত অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি জানুয়ারিতে আইটিভির “গুড মর্নিং ব্রিটেন” অনুষ্ঠানে বলেন,
“আমি এই প্রচারের প্রতি সহানুভূতিশীল, কারণ আমি জানি এটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের মতো আমিও ব্যক্তিগতভাবে এর অভিজ্ঞতা পেয়েছি, এবং এটি অত্যন্ত কঠিন।”
এই বিলটি যেসব মাতা সন্তান জন্মদানের সময় মারা যান কিন্তু নবজাতক বেঁচে থাকে, তাদের সঙ্গীর জন্যও শোকাবকাশের অধিকার নিশ্চিত করবে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী আরও জানা যায়, সরকার ট্রেড ইউনিয়নগুলোর কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ আরও সহজ করতে যাচ্ছে।
নতুন সংশোধনী অনুযায়ী,
শ্রমিক ইউনিয়নগুলো দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মীদের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবে।
যেসব নিয়োগকর্তা এই নিয়ম লঙ্ঘন করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর জরিমানা আরোপ করা হবে।
ইউনিয়নগুলো কর্মীদের ডিজিটাল মাধ্যমে অ্যাক্সেস পাবে।
গিগ-ইকোনমি (অনলাইনভিত্তিক চুক্তিভিত্তিক কাজ) কর্মীদের অধিকার রক্ষায় এটি সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীতে বলা হয়েছে,
কোনো নিয়োগকর্তা যদি শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া বাধাগ্রস্ত করতে পরিকল্পিতভাবে অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করে, তবে সেটিকে বেআইনি বলে গণ্য করা হবে।
মঙ্গলবার, রেনল্ডস এই বিলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিক সম্পর্কে মতামত জানাবেন, যার মধ্যে রয়েছে—
শূন্য ঘণ্টার চুক্তির (zero-hours contract) ওপর নিষেধাজ্ঞা
ফায়ার-অ্যান্ড-রিহায়ার (fire-and-rehire) অনুশীলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা
ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার
স্ট্যাটুটরি অসুস্থতাজনিত ছুটি (statutory sick pay) সম্পর্কিত নিয়ম
তবে, প্রবেশন সময়সীমা সম্পর্কিত পরিবর্তনগুলোর বিষয়ে এখনো আলোচনা করা হয়নি।
কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বলেছে, দীর্ঘতর প্রবেশন সময়সীমা তাদের খারাপ কর্মীদের দ্রুত বরখাস্ত করার সুযোগ দেবে।
বর্তমানে, কোনো কর্মীকে অন্যায়ভাবে বরখাস্তের অভিযোগ আনতে হলে তাকে অন্তত দুই বছর চাকরিতে থাকতে হয়।
কিন্তু এই নতুন বিল অনুযায়ী, কর্মীরা চাকুরির প্রথম দিন থেকেই এই অধিকার পাবেন।
লেবার নেতা কিয়ার স্টার্মার সম্প্রতি নাইজেল ফারাজ এবং তার রিফর্ম ইউকে দলের বিরুদ্ধে শ্রমিক অধিকার সংক্রান্ত বিরোধিতা করার অভিযোগ তোলেন।
তিনি স্কটিশ লেবার সম্মেলনে বলেন,
“তারা অনলাইনে এবং প্রচারণায় শ্রমিকদের অধিকারের কথা বলে কিন্তু তারা ‘ফায়ার-অ্যান্ড-রিহায়ার’ নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। তারা শূন্য ঘণ্টার চুক্তি বাতিলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে।”
এই বিল পাস হলে, যুক্তরাজ্যের কর্মসংস্থান নীতিতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৪ মার্চ ২০২৫