9.6 C
London
November 16, 2025
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

গাউসুল আলম শাওনঃ ফ্যাসিজমের মিডিয়া ডন না কি ইভেন্ট মাফিয়া?

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) গাউসুল আলম শাওনকে “ফ্যাসিজমের মিডিয়া ডন” আখ্যায়িত করে তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে। দলটির সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পোস্টে শাওনের বিরুদ্ধে বিস্তারিত অভিযোগ তুলে ধরেন, যেখানে শাওনের পারিবারিক ও রাজনৈতিক সংযোগ থেকে শুরু করে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের নামে অর্থ লুটপাটের চিত্র উঠে এসেছে।
গাউসুল আলম শাওন সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ভায়রা ভাই। এই সম্পর্কের সূত্রে তিনি ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ রেহানার ছেলে ববি, এবং পরবর্তীতে সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আরাফাতের সঙ্গে। পারিবারিক ঘনিষ্ঠতা এবং সৃজনশীল মস্তিষ্কের সমন্বয়ে শাওন রাজনৈতিক প্রচারযন্ত্রের অন্যতম চালিকাশক্তিতে পরিণত হন।

শেখ হাসিনার শাসনামলে আওয়ামী লীগের প্রচার-প্রচারণার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ছিল জয়-ববির প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। এই প্রতিষ্ঠানের ছত্রছায়ায় দেশব্যাপী নানা ইভেন্ট, প্রচারাভিযান ও ক্যাম্পেইন পরিচালিত হয়। শাওনের হাত ধরে অনুষ্ঠিত হয় “লেটস টক উইথ হাসিনা”, “হাসিনা: এ ডটার্স টেল” চলচ্চিত্রের দেশ-বিদেশে প্রচার, “জয় বাংলা কনসার্ট”, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও মুজিববর্ষ উদযাপন, ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস, বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট, বিদ্যুৎ সপ্তাহসহ বহু আয়োজন। প্রতিটি আয়োজন জনসাধারণের চোখে সরকারি অনুষ্ঠান মনে হলেও এগুলো ছিল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রচারণা।

গ্রে বাংলাদেশ নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব কাজ বাগিয়ে নেন শাওন। অভিযোগ আছে, এই প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক পুরস্কার জেতা প্রকৃত ব্যক্তিদের কৃতিত্ব ছিনিয়ে নিজেদের নামে প্রচার করেছে। এমনকি চাপ প্রয়োগ করে সংশ্লিষ্টদের মুখ বন্ধ রাখা হয়েছে। শ্বেতপত্র অনুসারে আইসিটি বিভাগের প্রকল্প থেকে শাওনের গ্রে বাংলাদেশ একাই ৮০ কোটি টাকা দুর্নীতি করেছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য খাতেও একই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

২০২৩ সালে গ্রে বাংলাদেশ থেকে চাকরি হারানোর পর শাওন ডট বার্থ নামে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। নতুন এই কোম্পানি প্রথম আলোর প্রথম পাতায় পূর্ণ পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপন ছাপানোর মতো বিপুল অর্থ খরচ করে আলোচনায় আসে। অভিযোগ রয়েছে, এটুআইয়ের ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে কোম্পানি গড়ে শাওন ডট বার্থের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার উন্মোচন এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আরাফাতের প্রচারণা পরিচালনা করেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রকাশিত শ্বেতপত্রে গাউসুল আলম শাওনের নাম স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে দুর্নীতির দায়ে। তবুও তাকে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার পতনের পরেও গোপনে মিডিয়া সেল পরিচালনা ও প্রপাগান্ডা ছড়ানোর সঙ্গে শাওনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। পুরান ঢাকায় একটি গোপন অফিস থেকে সিআরআই–এর পুনর্গঠন ও প্রচার কার্যক্রম চালানোর কথাও শোনা যাচ্ছে।

প্রশ্ন রয়ে যায়, বাংলাদেশের কোটি কোটি টাকার ইভেন্ট, প্রচারণা ও মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের পেছনে গাউসুল আলম শাওনের ভূমিকা কবে বিচারাধীন হবে? এবং কে বা কারা এখনো তাকে রক্ষা করছে?

সূত্রঃ স্যোশাল মিডিয়া / আমার দেশ / বাংলা টাইমস

এম.কে
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আরো পড়ুন

কোথায় গেলেন পিটার হাস, তা নিয়ে রহস্য

তারেক রহমান-সালামের রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা বাতিলের রায় প্রকাশ

বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন বাতিল হচ্ছে