ব্রিটেন হয়তো ইতিমধ্যেই রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে—এমন চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন এমআই৫-এর সাবেক প্রধান এলিজা ম্যানিংহাম-বুলার। তার মতে, মস্কোর পক্ষ থেকে সাইবার হামলা, নাশকতা, গুপ্তচরবৃত্তি ও সরাসরি হামলার মতো কর্মকাণ্ড এতটাই ব্যাপক যে এগুলো কার্যত এক ধরনের যুদ্ধ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ম্যানিংহাম-বুলার দ্য গার্ডিয়ান-এ দেওয়া রাশিয়া বিশেষজ্ঞ ফিওনা হিলের মন্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন। হিল বলেছিলেন, মস্কো ইতোমধ্যেই পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে। লর্ড স্পিকার জন ম্যাকফলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাবেক এমআই৫ প্রধান বলেন, “আমার মনে হয় তিনি হয়তো ঠিক বলেছেন। এটি ভিন্ন ধরনের যুদ্ধ হলেও এর বৈরিতা, সাইবার হামলা, শারীরিক আক্রমণ ও গোয়েন্দা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে চলছে।”
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ছয়জন বুলগেরীয়কে ইউরোপ জুড়ে বৈরী নজরদারির জন্য পরিচালিত এক রুশ গুপ্তচর চক্রে জড়িত থাকার দায়ে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাঁচজনকে দণ্ডিত করা হয়েছে মস্কোর নির্দেশে ইউক্রেনে পাঠানোর সরঞ্জাম রাখা একটি গুদামে অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগে। এ ছাড়া ব্রিটিশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একের পর এক সাইবার হামলার পেছনেও রাশিয়ার হাত রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
ন্যাটোর কয়েকটি পূর্ব ইউরোপীয় দেশ সম্প্রতি ড্রোন আক্রমণের শিকার হয়েছে। কেবল পোল্যান্ডেই এই মাসে ১৯টি রুশ ড্রোন তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। এ সব ঘটনায় পশ্চিমা নিরাপত্তা মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ম্যানিংহাম-বুলার জানান, তিনি ২০০৫ সালে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তখনও অনেকের আশা ছিল রাশিয়া পশ্চিমাদের অংশীদার হয়ে উঠবে। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই লন্ডনের রাস্তায় সাবেক রুশ এজেন্ট আলেকজান্ডার লিটভিনেঙ্কো হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে দেয় মস্কোর নীতির নির্মম বাস্তবতা। পরবর্তীতে তদন্তে প্রমাণিত হয়, রুশ এজেন্টরা তাকে তেজস্ক্রিয় পোলোনিয়াম দিয়ে বিষপ্রয়োগে হত্যা করেছিল এবং এতে পুতিনের প্রত্যক্ষ নির্দেশ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও সাবেক এমআই৫ প্রধান উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিদেশি সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। তার মতে, এতে চীনের জন্য দরিদ্র দেশগুলোতে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, নরম শক্তি—যেমন বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস, মানবিক সহায়তা বা মাইন অপসারণ কর্মসূচি—ব্রিটেনের বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫