TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

চলে গেলেন লোকসংগীতের বরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীন

বাংলাদেশের লোকসংগীত জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ফরিদা পারভীন আর নেই। আজ শনিবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। খবরটি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশীষ কুমার চক্রবর্তী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি স্বামী এবং চার সন্তান রেখে গেছেন।

কয়েক বছর ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন ফরিদা পারভীন। প্রায়ই তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হতো। বেশির ভাগ সময়ই তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকতেন। সর্বশেষ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় তার শ্বাসকষ্ট তীব্র আকার ধারণ করে। পাশাপাশি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, রক্তে সংক্রমণ এবং কিডনির গুরুতর সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালাইসিস করতে হতো তাকে। চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা ব্যর্থ করে আজ না–ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই কিংবদন্তি শিল্পী।

১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়া থানায় জন্মগ্রহণ করেন ফরিদা পারভীন। ছোটবেলা থেকেই তিনি চঞ্চল ও প্রাণবন্ত ছিলেন। খেলাধুলা আর দৌড়ঝাঁপেই কাটতো দিন। বাবার চাকরির কারণে পরিবারকে প্রায়ই বিভিন্ন জেলায় বদলি হয়ে যেতে হতো। এভাবেই নানা জেলার পরিবেশ ও সংস্কৃতির ছোঁয়ায় বেড়ে উঠেছিলেন তিনি।

শৈশবে মাগুরায় থাকাকালীন ওস্তাদ কমল চক্রবর্তীর কাছে সংগীতে হাতেখড়ি হয় তার। পরবর্তীতে একে একে মীর মোজাফফর আলীসহ বহু গুরুর কাছে তালিম নেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে, ১৯৬৮ সালে তিনি পেশাদার সংগীতজীবন শুরু করেন এবং রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত নজরুলসংগীতশিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি পান।

শুরুতে নজরুলসংগীত ও আধুনিক গানে পরিচিতি পেলেও ভাগ্যের এক বাঁক তাকে নিয়ে যায় লালনগীতির জগতে। কুষ্টিয়ার এক হোমিও চিকিৎসক তার কণ্ঠে লালনগীতি শুনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রথমে অনীহা থাকলেও বাবার উৎসাহে মকছেদ আলী সাঁইয়ের কাছে তালিম নিতে শুরু করেন। সেই তালিমের প্রথম গান ছিল “সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন”। দোলপূর্ণিমা উৎসবে গানটি গাওয়ার পর শ্রোতাদের প্রশংসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয় তার জীবনে। এরপর থেকে লালনের গানই হয়ে ওঠে তার ধ্যানজ্ঞান।

১৯৭৩ সালে ঢাকায় রেডিওতে ১৫ মিনিটের একক সংগীত পরিবেশন করেছিলেন তিনি। স্টুডিওতে উপস্থিত ছিলেন সমর দাস, কাদের জমিলি, কমল দাশগুপ্ত, আবদুল হামিদ চৌধুরীর মতো বরেণ্য সংগীতজ্ঞেরা। তাদের প্রশংসা আজীবনের প্রেরণা হয়ে ছিল তার কাছে।

ফরিদা পারভীনের প্রথম স্বামী ছিলেন প্রখ্যাত গীতিকার ও কণ্ঠশিল্পী আবু জাফর। এই সংসারে তাদের তিন ছেলে ও এক মেয়ে—জিহান ফারিয়া, ইমাম নিমেরি উপল, ইমাম নাহিল সুমন ও ইমাম নোমানি রাব্বি।

লালন সাঁইয়ের গানের প্রচার ও প্রসারে ফরিদা পারভীনের অবদান অনন্য। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের বহু দেশেই তিনি লালনের গান ছড়িয়ে দিয়েছেন। জাপান, সুইডেন, ডেনমার্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বহু দেশে অনুষ্ঠান করেছেন।

১৯৮৭ সালে তিনি একুশে পদক অর্জন করেন। ১৯৯৩ সালে অন্ধ প্রেম চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত ‘নিন্দার কাঁটা’ গানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানজনক জাপানের ফুকুওয়াকা পুরস্কারে ভূষিত হন।

লালনগীতির আধ্যাত্মিক বাণী, দর্শন ও সুরকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজবোধ্য ও জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে ফরিদা পারভীন ছিলেন অগ্রদূত। পাশাপাশি ‘তোমরা ভুলে গেছ মল্লিকাদির নাম’, ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’সহ তার কণ্ঠে পরিবেশিত আধুনিক ও দেশাত্মবোধক গানও মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে।

গানের জগতে অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় কাটানো এই শিল্পী আজ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। তবে তার কণ্ঠে লালনের গান, তার আধ্যাত্মিক সুর ও বাণী চিরকাল বেঁচে থাকবে মানুষের হৃদয়ে।

সূত্রঃ স্যোশাল মিডিয়া

এম.কে
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আরো পড়ুন

সাহাবুদ্দিন চুপ্পু’র দুবাই সেকেন্ড হোম ও ভিনদেশী নাগরিকত্ব নিয়ে সমালোচনা

রাশিয়ান গুপ্তচরেরা ইংল্যান্ডের রাস্তায় গোলযোগের পাঁয়তারা করছেঃ এমআই ফাইভ

নিউজ ডেস্ক

বাবা মুুক্তিযোদ্ধা না হলেও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিয়েছেন ডিবি হারুন