বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এক ভয়াবহ মোড় নিয়েছে। একদিকে চাঁদপুরে মসজিদের ইমামকে কুপিয়ে আহত করা, অন্যদিকে ঢাকার মিটফোর্ডে প্রকাশ্যে এক ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে থেতলে হত্যার ঘটনা—এই দুই বর্বরতা জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। আর এসব ঘটনার পেছনে থাকা রাজনৈতিক সংঘাত, পরিকল্পিত সহিংসতা ও সরকারের নীরবতা ঘিরে তৈরি হয়েছে গভীর উদ্বেগ ও সন্দেহ।
চাঁদপুরে একটি মসজিদের ইমাম মসজিদের ভেতরে রাজনৈতিক সভা করতে নিষেধ করেছিলেন। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, এ কারণে জামায়াত-শিবিরের কয়েকজন তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো বড় প্রতিবাদ, সমাবেশ বা কার্যকর প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এনসিপি কিংবা সরকার, কেউই মুখ খোলেনি। যে দেশে ধর্মীয় উপাসনালয়ে নিরীহ ইমামকে কুপানো হয়, সে দেশে নীরবতা আরও ভয়ানক।
এরই মধ্যে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মিটফোর্ডে ঘটে আরেক ভয়াবহ ঘটনা। এক ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে পাথর দিয়ে থেতলে হত্যা করা হয়। এই নৃশংস ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ওই ব্যবসায়ীকে একদল মানুষ রাস্তায় ফেলে নির্মমভাবে পাথর দিয়ে আঘাত করছে, মাথাসহ শরীর থেতলে দিচ্ছে। এই ব্যবসায়ী নিয়ে জানা যায় তিনি গত বছর ৫ আগস্ট পরবর্তী বিএনপির সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেন। কার মাধ্যমে তিনি দলের সাথে যুক্ত হলেন কেনই বা হত্যার শিকার হলেন তা নিয়ে জল্পনা থেমে নেই। যদিও তার পরিবারের দাবি যারা মূল হত্যাকারী তাদের গ্রেফতার করা হয় নাই।
তাছাড়া গতকাল স্যোশাল মিডিয়াতে আপলোড হওয়া আরেকটি ভিডিওতেও দেখা যায়, নিহত ওই ব্যক্তি একটি চেয়ার তুলে নিয়ে কাউকে মারতে উদ্যত হচ্ছেন বা মারছেন—সেই দৃশ্যও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এই দুই বিপরীত ভিডিও ঘিরে বিভ্রান্তি তৈরি হলেও, যুবকটিকে হত্যা করতে যেভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে পাথর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে—তা কোনো সভ্য সমাজে কল্পনাও করা যায় না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে অনেকে বলেন, এই ঘটনাগুলোর সবচেয়ে ভয়ানক দিক হলো—দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার চূড়ান্ত নীরবতা। এতো বড় বড় সহিংসতা, খুন, ভিডিও ফুটেজ প্রকাশের পরেও এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। না কোনো বড় ধরনের গ্রেফতার, না কোনো উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত—কিছুই নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নিস্ক্রিয়তা কেবল অবহেলা নয়, বরং এতে সুস্পষ্ট চক্রান্তের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
তথ্যমতে জানা যায়, যুক্তরাজ্য থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর আগেই একটি ভিডিও বার্তায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করার জন্য একের পর এক ষড়যন্ত্র চলছে এবং এই ষড়যন্ত্র ডালপালা মেলে বিস্তৃত হচ্ছে। তার আশঙ্কাই যেন একে একে বাস্তব হয়ে উঠছে।
অন্যদিকে গতকাল রাতে ঢাকায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কয়েকটি বিক্ষোভ মিছিলও দেখা গেছে, যা রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বর্তমান প্রশাসন পরিচালনায় ড. ইউনুস থাকলেও, কেন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এমন বিক্ষোভ—এই প্রশ্নের উত্তরে বহু রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, এটা পরিকল্পনারই অংশ। অদৃশ্য হাত বা শাসনব্যবস্থার ভেতরের দ্বন্দ্ব থেকেই এসব তৈরি হচ্ছে।
মিটফোর্ডের ঘটনায় বিএনপি ইতোমধ্যে কয়েকজন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করলেও ঘটনার আড়ালে থাকা বড় নেতাদের বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর ফলে আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে, বিএনপির অভ্যন্তরে এখনো শক্তিশালী কোন্দল রয়েছে, যা দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার অন্যতম কারণ।
গত কয়েক মাসে বিএনপির প্রায় ৪০০ নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তবুও বিএনপি দলকে নিয়ন্ত্রণে আনতে কি পেরেছে এ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে সমালোচকদের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের নির্বাচনী সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হবে। শাপলা প্রতীক নিয়ে এনসিপির জল ঘোলা করা এবং ধানের শীষ প্রতীককে টার্গেট করে দেয়া এনিসিপির বক্তব্য রাজনৈতিক কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি ব্যাতিত কিছুই নয় বলে মনে করেন তারা। একাধিক বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা নিজস্ব স্বার্থে পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করতে মাঠে নেমেছে। অথচ দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রশাসন যেন আত্মসমর্পণ করে বসে আছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সব রাজনৈতিক দল নিজেদের মধ্যে লড়াই করে ক্ষমতায় যেতে গিয়ে যে গর্ত খুঁড়ছে, তাতে একে একে নিজেরাই পড়ে যাবে। আজ চুপ থাকলে কাল তাকেই ভুগতে হবে—এই বাস্তবতা এখন সময়ের দাবিতে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
সূত্রঃ স্যোশাল মিডিয়া
এম.কে
১২ জুলাই ২০২৫