গতকাল শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি ৪৩৬ ফ্লাইটের একটি চাকা উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর খুলে পড়ে যায়। তবুও সেই চাকা ছাড়া ড্যাশ ৮-৪০০ মডেলের উড়োজাহাজটি রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবিশ্বাস্য দক্ষতা ও সাহসিকতার সঙ্গে নিরাপদে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছেন পাইলট ক্যাপ্টেন বিল্লাহ এবং ফার্স্ট অফিসার জায়েদ।
বিমানটিতে শিশুসহ মোট ৭১ জন যাত্রী ছিলেন। যান্ত্রিক ত্রুটির এই ঘটনাটি যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনায় রূপ নিতে পারত, তবে পাইলটদের ঠাণ্ডা মাথার উপস্থিত বুদ্ধি এবং পেশাদারিত্ব প্রাণঘাতী বিপদকে রুখে দিয়েছে। বিকেল ২টা ২০ মিনিটে ফ্লাইটটি সফলভাবে জরুরি অবতরণ করে।
বিমানের ফেসবুক পেজে দুই পাইলটের প্রশংসায় পোস্ট দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও যাত্রী ও সাধারণ মানুষ তাদের সাহসিকতা এবং পেশাদারিত্বের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উড়োজাহাজের একটি চাকা খোয়া যাওয়ার মতো পরিস্থিতি চরম বিপজ্জনক। কারণ এতে ভারসাম্য হারানোর শঙ্কা থাকে, বিশেষ করে অবতরণের সময়। একজন পাইলটকে নির্দিষ্ট গতিবেগ ও কোণ বজায় রেখে বিমান নামাতে হয়, যেন উড়োজাহাজ কাত হয়ে রানওয়ে থেকে ছিটকে না পড়ে।
বিমানের একজন পাইলট জানান, দুই চাকার মধ্যে একটি খুলে পড়ার পর ক্যাপ্টেন বিল্লাহ বাকি চাকার ভারসাম্য বজায় রেখে অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে রানওয়েতে অবতরণ করেন। এতে পাইলটের অভিজ্ঞতা এবং ঠাণ্ডা মাথার সিদ্ধান্ত ছিল মূল চালিকা শক্তি।
তবে এই সাহসিকতার পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রকৌশল শাখার গাফিলতি নিয়েও। একাধিক সূত্র বলছে, সম্প্রতি প্রকৌশলীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলেও তাদের দায়িত্ব পালনে শৈথিল্য রয়েছে। ফলে এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে, যা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাবমূর্তিতে বড় রকমের আঘাত হানতে পারে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্তের ঘোষণা দিলেও সাধারণ মানুষের কৃতজ্ঞতা আজ কেবল একদল দক্ষ পাইলটের প্রতি, যারা ৭১টি প্রাণ নিরাপদে ফিরিয়ে এনেছেন—একটি ভগ্নচাকার উড়োজাহাজ নিয়ে।
এম.কে
১৬ মে ২০২৫