TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

চালকবিহীন ট্যাক্সি নামছে যুক্তরাজ্যে, কিন্তু পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় পথে এখনো অনেক বাধা

যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো চালকবিহীন ট্যাক্সি পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণের পথে। ২০২৬ সালের বসন্তেই ওয়েমো (Waymo) তাদের রোবোট্যাক্সি লন্ডনের রাস্তায় চালু করতে চায়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তি প্রস্তুত হলেও আইনি অনুমোদন ও নিরাপত্তা কাঠামোর ঘাটতি এখনো বড় প্রতিবন্ধক।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওয়েমো জানিয়েছে, তারা ২০২৬ সালেই লন্ডনে কোনো মানবচালক ছাড়াই রোবোট্যাক্সি সেবা চালু করবে। প্রতিষ্ঠানটির বক্তব্য, “আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি লন্ডনের মানুষ ও শহরের দর্শনার্থীদের সেবা দিতে।”

তবে সরকারি অনুমোদন এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নিরাপত্তার স্বার্থে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে গাড়িতে একজন মানবচালক রাখার সিদ্ধান্ত হতে পারে।

যুক্তরাজ্যে চালকবিহীন গাড়ির ইতিহাস নানা প্রতিশ্রুতি ও ব্যর্থতায় ভরা। ২০১৮ সালে অ্যাডিসন লি ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ২০২১ সালের মধ্যেই রোবোট্যাক্সি চালুর ঘোষণা দিয়েছিল। নিসানও ২০১৭ সালে পূর্ব লন্ডনে চালকবিহীন ‘লিফ’ মডেল পরীক্ষা করে। তৎকালীন পরিবহনমন্ত্রী ক্রিস গ্রেলিং বলেছিলেন, “চার বছরের মধ্যেই চালকবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামবে।” কিন্তু আজও তা বাস্তব হয়নি।

ওয়েমো ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেসসহ কয়েকটি শহরে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ট্যাক্সি সেবা চালাচ্ছে। পর্যটকদের কাছে এটি এখন নতুন এক অভিজ্ঞতা। তবে শহরের গৃহহীনতা ও নজরদারির প্রশ্নে সমালোচনাও রয়েছে। অনেকের মতে, চালকবিহীন গাড়ি যেমন প্রযুক্তিগত উন্নতির প্রতীক, তেমনি এটি সমাজে বৈষম্যের প্রতিফলনও।

যেমন একসময় উবারের আগমন ঐতিহ্যবাহী ট্যাক্সি শিল্পে বিপর্যয় ডেকে এনেছিল, তেমনি এবার চালকবিহীন ট্যাক্সি একইভাবে নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এক উবার চালক বলেন, “আমার মনে হয়, আর এক বছরের মধ্যেই এই চাকরিটা থাকবে না।”
যদিও বিশ্লেষকদের ধারণা, নতুন প্রযুক্তি কিছু নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করবে।

ওয়েমো রাইডে যাত্রী সম্পূর্ণভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিয়ন্ত্রণে থাকেন। অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ি ডাকা, দরজা খোলা, যাত্রা শুরু ও থামানো—সবকিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হয়। গাড়ির ভেতরে ভয়েস কমান্ডে গান, মানচিত্র বা জরুরি থামানোর সুযোগও থাকে। যাত্রীরা বলেন, এটি একদিকে বিস্ময়কর, অন্যদিকে খানিকটা উদ্বেগজনকও।

চালকবিহীন গাড়ি ঘিরে ব্রিটিশ সমাজে ইতিমধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ প্রযুক্তির অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ মজা করতেও ছাড়ছেন না—কেউ একসঙ্গে ৫০টি ওয়েমো গাড়ি ডেকে রেখেছেন, কেউ গাড়ির ছাদে উঠে নাচ করেছেন। এমনকি চায়নাটাউনে এক ওয়েমো গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

লন্ডনে এই প্রযুক্তির প্রয়োগ সহজ হবে না বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ট্যাক্সি ইউনিয়নের নেতা স্টিভ ম্যাকনামারা বলেন, “লন্ডনে মানুষ যেভাবে রাস্তা পার হয়, সেখানে এই গাড়ি কীভাবে চলবে? সেন্সর দেখলেই সবাই রাস্তায় নামবে, কারণ তারা জানে গাড়ি যাই হোক থামবেই।”
পরিবহন বিশ্লেষক ক্রিশ্চিয়ান ওলমার বলেন, “যদি গুগল ভাবে লন্ডন ‘জেওয়াকিং’ আইন চালু করবে, তবে তারা ভুল করছে।”

ওয়েমো জানিয়েছে, তারা যুক্তরাজ্যে অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ করবে—ডিপো, চার্জিং স্টেশন ও টেকনিক্যাল কর্মী নিয়োগ করবে। পরিবহনমন্ত্রী হেইডি আলেকজান্ডার জানিয়েছেন, এই খাত থেকে প্রায় ৩৮,০০০ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। তবে ঝুঁকিতে রয়েছেন ৩ লাখের বেশি চালক ও ভবিষ্যতের ট্রাক চালকরা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রযুক্তি নয়—আইনি কাঠামোই এখন সবচেয়ে বড় বাধা। পরিবহন মন্ত্রণালয় ও ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডনের অনুমোদন পেতে আরও অন্তত দুই বছর সময় লাগতে পারে।
জনগণও এখনো পুরোপুরি আশ্বস্ত নয়—চাকরি হারানোর ভয় ও নিরাপত্তা উদ্বেগ কাটেনি। ট্যাক্সি ইউনিয়ন নেতা ম্যাকনামারা বলেন, “রাজনৈতিকভাবে কেউই এখন এই অনুমোদনে সই করার ঝুঁকি নেবে না।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
১৮ অক্টোবর ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে কেয়ার হোম নজরদারিহীন, দশ বছর আগে তরুণীকে হত্যার রায় প্রকাশ

যুক্তরাজ্যের সীমান্তে অবৈধ অভিবাসীদের আটকাতে ৬৮০ মিলিয়নের চমক

মহামারিতে আবারো ঋষি সুনাকের ১.৪ মিলিয়ন পাউন্ড অনুদান

নিউজ ডেস্ক