যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীরা আর চিকিৎসা নিতে ট্যাক্সি ব্যবহার করতে পারবেন না—এমন কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে হোম অফিস। নতুন এই সিদ্ধান্ত সরকার ঘোষিত ব্যয় সংকোচনের অংশ হিসেবে আসছে। জানা গেছে, আশ্রয়প্রার্থীদের চিকিৎসা যাতায়াতে ট্যাক্সি ব্যবহারে সরকারের বছরে প্রায় ১৫.৮ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় হয়।
ফেব্রুয়ারি থেকে এই নতুন নিয়ম চালু হলে চিকিৎসা যতই জরুরি হোক না কেন, আশ্রয়প্রার্থীদের বাস বা অন্যান্য গণপরিবহন ব্যবহার করতে হবে। তবে প্রচারণা সত্ত্বেও আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বিনামূল্যে গণপরিবহন ব্যবহারের অনুমতি দিতে রাজি হয়নি সরকার।
বিবিসির অনুসন্ধানে উঠে আসা কিছু অস্বাভাবিক ব্যয় সরকারের নজর কাড়ে। এক আশ্রয়প্রার্থী অ্যাপয়েন্টমেন্টে যেতে ২৫০ মাইল ট্যাক্সি ভাড়া করে ৬০০ পাউন্ড বিল করেছিলেন। আরও জানা যায়, চিকিৎসাধীন অবস্থায় হঠাৎ অন্য এলাকায় স্থানান্তরিত হওয়ায় অনেক আশ্রয়প্রার্থীর দীর্ঘ যাতায়াতের প্রয়োজন পড়ে, বিশেষ করে কেমোথেরাপির মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা নিতে।
দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বাস পাসের দাবি জানিয়ে আসছে। ২০২৩ সালে Citizens UK–এর উদ্যোগে ২৫টি সিভিল সোসাইটি সংগঠন সরকারকে এ দাবি জানায়—যাতে আশ্রয়প্রার্থীরা সন্তানদের স্কুলে নেওয়া, স্বেচ্ছাসেবী কাজে যাওয়া বা চিকিৎসা নিতে সহজে চলাচল করতে পারেন। অক্সফোর্ডে ২০২৪ সালের নভেম্বরে বিনামূল্যে বাস যাতায়াতের একটি পাইলট প্রকল্পও চালু হয়।
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, আশ্রয়প্রার্থীরা সপ্তাহে মাত্র একবার রিটার্ন বাস যাত্রার সুযোগ পান। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হোম অফিসের ঠিকাদাররাই অন্যান্য প্রয়োজনীয় যাত্রায় ট্যাক্সি ডেকে দেয়—যাতায়াতকারী নিজে ট্যাক্সি চাইলে বা না চাইলে। দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের এক সাবকন্ট্রাক্টর জানান, তারা হোম অফিসের কাছ থেকে দিনে প্রায় ১,০০০ পাউন্ড নিতেন ১৫টি স্বল্প দূরত্বের ড্রপ-অফের জন্য।
নতুন নিয়মে জানানো হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতি—যেমন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, গুরুতর অসুস্থতা, দীর্ঘস্থায়ী রোগ বা গর্ভাবস্থাজনিত জটিলতা—ছাড়া ট্যাক্সি অনুমোদিত হবে না। এমন ক্ষেত্রে যাত্রার অনুমোদন দিতে হবে হোম অফিসকেই।
Refugee Council–এর প্রধান নির্বাহী এনভার সলোমন সতর্ক করে বলেন, নতুন নিয়ম বাস্তবায়নে ঝুঁকি রয়েছে, কারণ হোম অফিসের ‘দুর্বলতা মূল্যায়ন’ সংজ্ঞা সবসময় স্পষ্ট নয়। তার মতে, “এটি আশ্রয়প্রণালীর অপব্যবহার নয় বরং সরকারের দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও খারাপ চুক্তির ফল।”
তিনি আরও বলেন, আশ্রয় ব্যবস্থায় বেসরকারি ঠিকাদাররা বিপুল লাভ করছে, যা করদাতাদের টাকায় পরিচালিত। সরকারের উচিত হবে অদক্ষ চুক্তি বাতিল করা এবং আশ্রয়প্রার্থীদের কাজের অনুমতি দেওয়া, যাতে তারা নিজেদের খরচ নিজেই বহন করতে পারে।
সরকার জানিয়েছে, ট্যাক্সি কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত চার্জ রোধে নিয়মিত অডিট এবং কঠোর রিপোর্টিং ব্যবস্থা চালু করা হবে। আশ্রয় আবাসন ও পরিবহন ব্যবস্থায় অপচয় কমাতে সরকারের এই পদক্ষেপ ইতোমধ্যে ৭৪ মিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় করেছে।
হোম সেক্রেটারি শাবানা মাহমুদ বলেন, কনজারভেটিভ সরকারের রেখে যাওয়া “বিলিয়ন পাউন্ড অপচয়কারী চুক্তি” পুনর্গঠনে তিনি কাজ করছেন। তিনি জানান, আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ট্যাক্সির সীমাহীন ব্যবহার বন্ধ করা হচ্ছে এবং হোটেলে আশ্রয়প্রার্থীদের রাখা শেষ করা হবে।
সরকার জানিয়েছে, পার্লামেন্টের বর্তমান মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই হোটেলগুলো খালি করে আশ্রয়প্রার্থীদের সামরিক ঘাঁটির মতো কম ব্যয়সাপেক্ষ স্থানে স্থানান্তর করা হবে—যাতে আরও ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় করা সম্ভব।
সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এখনো ৩৬,২৭৩ জন আশ্রয়প্রার্থী হোটেলে অবস্থান করছেন—যা জুনের তুলনায় বেশি। সরকার একই সঙ্গে জানায়, অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছে। অক্টোবর ২০২৪ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত কাজের অনুমতি ছাড়া ৮,০০০–এর বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এবং লেবার সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রায় ৫০,০০০ লোককে ফেরত পাঠানো বা বহিষ্কার করা হয়েছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে