সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে আস্থাভাজন কয়েকজন রাজনীতিবিদের মধ্যে নাম ছিল সালমান এফ রহমানের। শেখ হাসিনা স্বৈরশাসক হয়ে ওঠার পেছনে যথেষ্ট অবদান তার। তবে বর্তমানে শেখ হাসিনা দেশছাড়া আর অন্যদিকে সালমান এফ রহমান রয়েছেন কারাগারে। তাদের দুজনেরই রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এবং দৌর্দণ্ড প্রতাপ এখন পুরোই বিধ্বস্ত।
তবে কারাগারে বসেই নাকি হাসিনার সঙ্গে কথা হয় সালমান এফ রহমানের। কারাগারের একটি সূত্রের দাবি, সালমান এফ রহমানের মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ থাকায় বিদেশে কথা বলতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, কারাগারের ভেতর থেকে মোবাইল ফোনে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। তাকে যেখানে বন্দি রাখা হয়েছে, সেখানে নেটওয়ার্ক জ্যামার বসানো আছে।
গেল ১৩ আগস্ট সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার সময় রাজধানীর সদরঘাট থেকে তাদের দুজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়। পরে রাজধানীর নিউ মার্কেট থানায় করা একটি হত্যা মামলায় সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই মামলায় রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে যাওয়ার পর তিনি ডিভিশন সুবিধা পান। ডিভিশন পাওয়ায় কারাবিধি অনুযায়ী, সাধারণ বন্দিদের চেয়ে কিছু বেশি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন তিনি।
এর মধ্যে কারাগারে পেয়েছেন চেয়ার, টেবিল ও খাট, যেগুলো ডিভিশনহীন বন্দিরা পান না। কারাগারের একটি সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, কারাগারে বসে ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের সুযোগ পাচ্ছেন সালমান এফ রহমান। অসাধু কারারক্ষীদের ম্যানেজ করে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন তিনি, যাতে ইন্টারনেট সংযোগ থাকায় বিশ্বজুড়ে যোগাযোগের সুযোগ মিলছে তার। আর এই যোগাযোগের মাধ্যমে জেলে বসেও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন তিনি।
তবে কারাগারে বসে ফোনে কথা বলার সুযোগ পাওয়ার কথা নয় বলেই জোর দাবি করেছেন আইজি প্রিজনস ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু তথ্যটি আপনারা দিয়েছেন সেটি চেক করে দেখবো। সালমান এফ রহমানকে যে জোনে রাখা হয়েছে, সেখানে মোবাইল ফোন যাওয়ার সুযোগ নেই। সেখানে সিগন্যাল জ্যামার বসানো রয়েছে।’
এ বিষয়ে সাবেক ডিআইজি প্রিজনস ও কারা বিশ্লেষক মেজর (অব.) সামছুল হায়দার ছিদ্দিকী জানান, ‘কারাগারে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের মাধ্যমে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ পান বন্দিরা। একজন কারারক্ষী যদি কিছুক্ষণ কথা বলার জন্য ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পান, সেটি তার কাছে অনেক টাকা। প্রভাবশালী বন্দিদের কাছে এ টাকা কিছুই না। ফলে ঝুঁকি নিয়ে অনেক কারারক্ষী এসব অপরাধে জড়িয়ে থাকেন।’
তিনি আরও জানান, ‘কারা কর্তৃপক্ষের উচিত হবে নজরদারি বাড়ানো। এ ছাড়া প্রভাবশালী বন্দিদের কিছুদিন পর পর রুম বদলানো দরকার। তাহলে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটতে পারে। কেউ ধরা পড়লে তাদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।’
সূত্রঃ ভোরের কাগজ
এম.কে
২০ নভেম্বর ২০২৪